হিল ভয়েস, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়নের আড়াছড়ি গ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাপ্তাই সেনা জোনের একদল সেনা সদস্য জুম্মদের রেকর্ডভুক্ত ভূমিতে ‘নিরাপত্তা বাহিনীর পরিত্যক্ত ক্যাম্প’ বলে একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে ‘উক্ত স্থানে কোনো প্রকার চাষাবাদ, স্থাপনা নির্মাণ বা বসতি স্থাপন করা সম্পূর্ণ নিষেধ’ বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ঐ ভূমির মালিকদের ডেকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে, তাদের নির্দেশ অমান্য করা হলে জেলখানায় ঢুকানো হবে এবং সাইনবোর্ডটি হারিয়ে গেলে গ্রামবাসী সবাইকে উচ্ছেদ করা হবে।
যে রেকর্ডভুক্ত জায়গা লক্ষ করে সেনাবাহিনী সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে সেই জায়াগার ভুক্তভোগী মালিকরা হলেন-
(১) রেবতি মোহন চাকমা, পীং-বেজমনি চাকমা, গ্রাম-আরাছড়ি, ৯নং ওয়ার্ড, চিৎমরম ইউনিয়ন, কাপ্তাই উপজেলা, ৩৩৬নং আড়াছড়ি মৌজা, ভূমির খতিয়ান/হোল্ডিং নং-২৫, পরিমাণ-৫.০০ একর, বন্দোবস্তী তারিখ-০৯-১১-৮৭;
(২) মোহন লাল চাকমা, পীং-মৃত মৃত্যুজয় চাকমা, গ্রাম-ঐ, ভূমির খতিয়ান/হোল্ডিং নং-৩৬, পরিমাণ-৫.০০ একর, বন্দোবস্তী তারিখ-৩০-১২-৮৭;
(৩) প্রেমলাল চাকমা, পীং-মৃত মৃত্যুজয় চাকমা, গ্রাম-ঐ, ভূমির খতিয়ান/হোল্ডিং নং-২৯, পরিমাণ-৫.০০ একর, বন্দোবস্তী তারিখ-২৯-১২-৮৭;
(৪) জীবন্ত তঞ্চঙ্গ্যা, পীং-জয় কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম-ঐ, ভূমির খতিয়ান/হোল্ডিং নং-১৪/৩৬, পরিমাণ-৫.০০ একর, বন্দোবস্তী তারিখ-২৪-১১-১৬;
(৫) রজাবি চাকমা, স্বামী-মৃত চিকন্যা চাকমা, গ্রাম-ঐ, ভূমির খতিয়ান/হোল্ডিং নং-২৮, পরিমাণ-৫.০০ একর, বন্দোবস্তী তারিখ-২৯-১২-৮৭;
(৬) ঊষা মারমা, পীং-মৃত গঞ্জ মারমা, গ্রাম-ঐ, ভূমির খতিয়ান/হোল্ডিং নং-২১, পরিমাণ-৫.০০ একর, বন্দোবস্তী তারিখ-২৯-০৪-৮৭;
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ আগস্ট ২০২১ সকাল আনুমানিক ১০:০০ টার দিকে কাপ্তাই সেনা জোনের অধীন কাপ্তাই আইল্যান্ড সেনা ক্যাম্পের জনৈক ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে ২০ জনের একটি সেনাদল উক্ত জায়গায় গিয়ে সাইনবোর্ডটি টাঙায়।
এরপর সেনা কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট ভূমির ছয় মালিককে ডেকে বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনীর পরিত্যক্ত ক্যাম্প এলাকায় কোন প্রকার ঘরবাড়ি, বাগানবাগিচা ও চাষাবাদ করা যাবে না, যদি আমাদের নির্দেশ কেউ অমান্য করে তাহলে তাদের জেলখানায় ঢুকাবো আর সাইনবোর্ডটি হারিয়ে গেলে পাড়াবাসী সকলকে উচ্ছেদ করা হবে।’
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পূর্বে সেনাবাহিনী উক্ত এলাকায় বন্দুকের নলের মুখে একটি সেনা ক্যাম্প স্থাপন করেছিল বলে জানা যায়। তবে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী উক্ত স্থান থেকে সেনা ক্যাম্পটি প্রত্যাহার করা হয়।
কিন্তু সম্প্রতি পার্বত্য চুক্তি লংঘন করে এবং জোরপূর্বক সেনাবাহিনী সেখানে আবার সেনা ক্যাম্প স্থাপন এবং ক্যাম্প স্থাপনের নামে জুম্মদের ঐ ভূমি বেদখল করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক গ্রামবাসী ও মুরুব্বি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী এখন মহারাজা ও সর্বেসর্বায় পরিণত হয়েছে। এখানে তারাই প্রেসিডেন্ট, তারাই প্রধানমন্ত্রী এবং তারাই আইন ও তারাই বিচারক। সাধারণ জুম্মদের জীবন, মানবাধিকার ও ভূমি অধিকার এখন প্রতিনিয়ত পদদলিত হচ্ছে।