হিল ভয়েস, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, বান্দরবান: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কর্তৃক বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দৌছড়ি ইউনিয়নের কামিছড়া চাক পাড়ার কার্বারিসহ আটককৃত ৬ জনের মধ্যে ৪ চাক নিরীহ গ্রামবাসীকে বেআইনী ও অবৈধভাবে ১৪ দিন আটক রাখার পর অবশেষে মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশের নিকট সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আটককৃত অপর ২ জনকে আগেই অমানুষিক মারধর ও আটক রাখার চার দিন পর মিথ্যা মামলায় জড়িত করে পুলিশের নিকট সোপর্দ করা হয়।
গত মঙ্গলবারই (১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১) রাতে অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখা উক্ত ৪ চাক গ্রামবাসীকে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় হস্তান্তর করা হয় বলে জানা গেছে। এর পরদিন ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ বিজিবি’র পক্ষ থেকে দায়ের করা মিথ্যা ও সাজানো মামলায় জড়িত করে ৪ চাক গ্রামবাসীকে বান্দরবান জেলা চীফ জুডিশল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম শিকদার আটককৃতদের জামিন নামঞ্জুর করলে তাদের জেলে প্রেরণ করা হয়।
ভুক্তভোগী উক্ত ৪ চাক গ্রামবাসী হলেন- কামিছড়া চাক পাড়ার কার্বারী মংলাফো চাক (৬০), চিংলাঅং চাক (৫০) ও তাঁর এক ছেলে মংলাথোয়াই চাক (১৫), লাগ্যছু চাক (৫৫)। তারা সবাই কামিছড়া চাক পাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
আটককৃত উক্ত ৪ জনকে মিথ্যাভাবে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ (সং/২০১৩) এর ০৬/০৭/১২/১৪ তৎসহ ১৪৪/৩৫৩/৩০৭ দন্ডবিধি ১৮৬০ এর আওতায় দায়েরকৃত মামলায় আসামী হিসেবে জড়িত করা হয়। মামলার বাদী ১১ বিজিবি’র নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নের নায়েব সুবেদার মোঃ আবুল খায়ের।
আটককৃতদের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আটকাবস্থায় উক্ত ৪ চাক গ্রামবাসীকে ব্যাপক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।
উল্লেখ্য, আটকের ২৪ ঘন্টার মধ্যে আটককৃত কোনো ব্যক্তিকে আদালতে বা পুলিশের নিকট হাজির করার আইনগত নিয়ম বা বিধান থাকলেও সেনাবাহিনী ও বিজিবি আটককৃত উক্ত ৪ জনকে বেআইনি ও অন্যায়ভাবে ১৪ দিন ধরে অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখে এবং নির্যাতন চালায়।
গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ মিথ্যা মামলায় পুলিশের নিকট সোপর্দ অপর দুই ব্যক্তি হলেন উথোয়াই হ্লা মার্মা (২৪), পীং-মংদো মারমা ও ম্যানরুম মুরুং (৬০), পীং- মৃত ধুই থং মুরুং। তাদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি ১৪৪, ৩৫৩, ৩৩২, ৩৩৩, ৩০৭ ধারায় মিথ্যা ও সাজানো মামলা দায়ের করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ১লা সেপ্টেম্বর ২০২১ বুধবার সকালে আলিকদম জোনের সেনাবাহিনী ও নাইক্ষ্যংছড়ি জোনের বিজিবি’র একটি যৌথ দল দৌছড়ি ইউনিয়নের কামিছড়া চাক পাড়ায় যৌথ অভিযান চালায়। অভিযানে সেনা ও বিজিবি সদস্যরা উক্ত ৬ নিরীহ আদিবাসী জুম্ম গ্রামবাসীকে আটক করে। আটক করার পর সেনা ও বিজিবি সদস্যরা কয়েকজন মহিলাসহ উক্ত ৬ গ্রামবাসীকে অমানুষিকভাবে মারধর করে। মারধরের সময় সেনা ও বিজিবি সদস্যরা “জেএসএস সন্ত্রাসীরা কোথায় থাকে, তাদেরকে কত টাকা চাঁদা দাও’ ইত্যাদি জিজ্ঞাসাবাদ করে।
উক্ত ঘটনার পর থেকে সেনা ও বিজিবি সদস্যরা আটককৃত ৬ জনকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।