হিল ভয়েস, ১১ আগস্ট ২০২১, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার রাঙ্গামাটি জেলে মিথ্যা মামলায় আটক ইন্দ্রবান তঞ্চঙ্গ্যা (৩৫) জামিনে মুক্তি পেয়ে জেল থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে জেল গেইট আটক করে আবার জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এনিয়ে দ্বিতীয়বার জামিনে মুক্তি পেয়েও সেনাবাহিনীর মিথ্যা মামলার কারণে আবার জেলে যেতে হল ইন্দ্রবান তঞ্চঙ্গ্যাকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ আগস্ট ২০২১ বেলা ১১:০০ টার দিকে রাঙ্গামাটির আদালতে জামিনে মুক্তির আদেশ পান ইন্দ্রবান তঞ্চঙ্গ্যা। জামিন আদেশের নিয়মাবলী সম্পন্ন হওয়ার পর সন্ধ্যা ৬:০০ টার দিকে জেলগেইট থেকে বের হয়ে আসেন ইন্দ্রবান তঞ্চঙ্গ্যা। বের হওয়ার সাথে সাথে সেখান থেকেই সেনাবাহিনীর একদল সদস্য ইন্দ্রবান তঞ্চঙ্গ্যাকে তুলে নিয়ে যায়।
এরপর সেনাবাহিনী ইন্দ্রবান তঞ্চঙ্গ্যাকে সারারাত অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখার পর, গতকাল ১০ আগস্ট ২০২১ বেলা ১১:৩০ টার দিকে রাঙ্গামাটি কোতয়ালী থানায় সোপর্দ করে। জানা গেছে, সেনাবাহিনী ইন্দ্রবান তঞ্চঙ্গ্যার বিরুদ্ধে নতুনভাবে মিথ্যা অভিযোগ এনে বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি সুরেশ তঞ্চঙ্গ্যা হত্যা মামলায় জড়িত করে। বর্তমানে ইন্দ্রবান তঞ্চঙ্গ্যাকে আবার রাঙ্গামাটি জেলে আটক রাখা হয়েছে।
ইন্দ্রবান তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি রাঙ্গামাটি জেলাধীন রাজস্থলী উপজেলার গাইন্দ্যা ইউনিয়নের ঘিলামুখ আমতলী পাড়া গ্রামে। তিনি মৃত ভালাধন তঞ্চঙ্গ্যা ও মুরুঙ্গী তঞ্চঙ্গ্যার বড় ছেলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে সেনাবাহিনী প্রথমবার ইন্দ্রবান তঞ্চঙ্গ্যাকে গ্রাম থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়িত করে পুলিশের নিকট সোপর্দ করে। এরপর গত ২৫ মে ২০২১ জামিন নিয়ে ইন্দ্রবান তঞ্চঙ্গ্যা রাঙ্গামাটি জেল থেকে মুক্ত হলে, ঐদিনই সেনাবাহিনী তাকে আবার জেল গেইট থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরে সেনাবাহিনী বাঘাইছড়ির জনৈক বসু চাকমা হত্যা মামলায় জড়িত করে আবার ইন্দ্রবান তঞ্চঙ্গ্যাকে জেলে প্রেরণের ব্যবস্থা করে।
উল্লেখ্য যে, গত ৮ মে ২০২১ তারিখে সেনাবাহিনী রাজস্থলী উপজেলার সীমান্তবর্তী কাপ্তাই উপজেলায় শশুর বাড়িতে বেড়াতে এসে ভালুক্যা এলাকা থেকে ইন্দ্রবান তঞ্চঙ্গ্যার আপন ছোট ভাই সোনারাম তঞ্চঙ্গ্যা (২৬)-কেও ধরে নিয়ে যায় এবং মিথ্যা মামলায় জড়িত করে জেলে প্রেরণ করে।
জানা গেছে, ইন্দ্রবান তঞ্চঙ্গ্যা ও সোনারাম তঞ্চঙ্গ্যা অনেক আগে জনসংহতি সমিতির বিভিন্ন গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে সহযোগিতা করলেও দীর্ঘদিন ধরে তারা নিষ্ক্রিয় রয়েছে।
এদিকে সেনাবাহিনীর এহেন অন্যায় ও অমানবিক আচরণে ইন্দ্রবান তঞ্চঙ্গ্যা ও সোনারাম তঞ্চঙ্গ্যার অসহায় বিধবা মা মুরুঙ্গী তঞ্চঙ্গ্যা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধিকারকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী যেন আইন-আদালতের উর্ধ্বে। আদালতের জামিন আদেশ তারা ইচ্ছে করলেই অস্বীকার করতে পারে।