হিল ভয়েস, ২৫ আগস্ট ২০২১, রাঙ্গামাটি: গতকাল রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন নানিয়ারচর উপজেলার সাবেখ্যং ইউনিয়ন এলাকা থেকে এক বাঙালি কাঠব্যবসায়ী ও তার সঙ্গীরা চার জুম্ম স্কুল ছাত্রীকে অপহরণের চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে স্থানীয় জনগণের চাপে স্থানীয় সেনা ক্যাম্পের সেনাবাহিনী কর্তৃক ওই ছাত্রীদের উদ্ধারে উদ্যোগ দেখা গেলেও রহস্যজনকভাবে সেনাবাহিনী কর্তৃক দোষীদের শাস্তি না দিয়ে বরং তাদেরকে রক্ষা করার জন্য রহস্যজনক অতিউৎসাহী ভূমিকা দেখা গেছে বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী চার ছাত্রী হল- (১) মিটনা চাকমা, পিতা-সুনীল কান্তি চাকমা ২. ধর্মিকা চাকমা, পিতার-মিয়াধন চাকমা, ৩. কয়লা চাকমা, পিতা-নিলো চাকমা ও (৪) মন্তা চাকমা, পিতা-নাগজ্জে চাকমা। তাদের সকলের বাড়ি সাবেখ্যং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের চিরনজিৎ দজরপাড়া গ্রামে। তারা নানিয়ারচর সদর ইউনিয়নের তৈচাকমা জুনিয়র হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ২৪ আগস্ট ২০২১ সকাল আনুমানিক ১১:০০ টার দিকে ওই জুম্ম ছাত্রীরা তাদের স্কুলে এ্যাসাইনমেন্ট খাতা জমা দিতে স্কুলের উদ্দেশে রওনা হয়। এর কিছুক্ষণ পর স্কুলের অভিমুখে রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে একটি ব্রীজ পার হয়ে বটগাছের নীচে বিশ্রামের জন্য অবস্থান করতে থাকে। এমন সময় রাঙ্গামাটির দিক থেকে আসা একটি মাইক্রোবাস সেখানে এসে থামে এবং সেখানে থাকা তিন বাঙালি আরোহী ছাত্রীরা কোথায় যাবে জিজ্ঞাসা করলে ছাত্রীরা স্কুলে যাবার কথা জানায়। এরপর বাঙালি আরোহীরা স্কুলে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে ছাত্রীদের মাইক্রোবাসে তুলে স্কুলে না নিয়ে অন্যত্র নিয়ে যায়।
জানা গেছে, মাইক্রোবাসের বাঙালি যাত্রীরা পরে ওই ছাত্রীদের জোরপূর্বক সিন্ধুকছড়ি সড়ক হয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারী পর্যন্ত নিয়ে যায়। পরে বাঙালি যাত্রীর মধ্যে একজনের নাম মো: জাহিদ (৬০), সে একজন কাঠ ব্যবসায়ী বলে জানা যায়।
এদিকে ছাত্রীদের জনৈক অভিভাবককে অপরিচিত একটি ফোন নাম্বার থেকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি ফোন করে বলেন যে, ‘আমি নানিয়ারচর সেনা জোন থেকে বলছি। তোমাদের চারজন ছাত্রী নাকি হারিয়ে গেছে শুনেছি। ছবি থাকলে আমাদের দেন, আমরা সহযোগিতা করবো।’ এছাড়া ওই ব্যক্তি বিষয়টি আপাতত সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল না করার নিষেধ করেন।
ইতোমধ্যে স্থানীয় জুম্ম গ্রামবাসীরা ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করার জন্য ১৭ মাইল এলাকায় সমবেত হতে থাকে। বিষয়টি খবর পেলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের একটি যৌথদল সেখানে উপস্থিত হয়।
এর কিছুক্ষণ পর সাবেখ্যং ইউনিয়নের বগাছড়ি সেনা ক্যাম্প থেকে ছাত্রীর ওই অভিভাবককে ফোন করে জানানো হয় যে, ওই ছাত্রীদের পাওয়া গেছে। গ্রামের মুরুব্বিদের নিয়ে ছাত্রীদের অভিভাবকরা যেন নানিয়ারচর সেনা জোনে উপস্থিত হয়।
পরে ছাত্রীদের অভিভাবক ও গ্রামের মুরুব্বিরা নানিয়ারচর সেনা জোনে উপস্থিত হন। এসময় সেনাবাহিনী ছাত্রীদের অভিভাবক ও গ্রামের মুরুব্বিদের সামনে ছাত্রীদের বলে যে, কেউই জিজ্ঞেসা করলে ছাত্রীরা যেন তারা স্বইচ্ছায় গিয়েছে বলে জবাব দেয়। জোর করে ধরে নিয়েছে বললে সমস্যা হবে বলেও সেনাবাহিনীরা হুমকি দেন। এরপর গ্রামের মুরুব্বি ও অবিভাবকরা ছাত্রীদেরকে নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে যায় বলে জানা যায়।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুরুব্বি বলেন, সেনাবাহিনী যদিও ছাত্রীদের অভিভাবকদের নিকট হস্তান্তর করেছে, কিন্তু অপহরণের চেষ্টাকারী কাঠ ব্যবসায়ীসহ তার সঙ্গীদের আটক বা শাস্তির কোনো কথাই বলেনি। বরং তাদেরকে রক্ষা করার চেষ্টাই করেছে। তিনি আরও বলেন, সেনা ক্যাম্প থেকে অভিভাবককে ফোন করে যে কথা বলা হয়েছে তাতে মনে হয় বিষয়টি সেনাবাহিনী অনেক আগে থেকে অপহরণের বিষয়টি জানে। এলাকাবাসী প্রতিবাদ মিছিল করতে চাইলে পরে সেনাবাহিনী ছাত্রীদের ফিরিয়ে আনতে তৎপর হয়।