৩ জুলাই ২০২১, হিল ভয়েস, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মুখপাত্র ড. রামেন্দু শেখর দেওয়ান আর বেঁচে নেই। তিনি দুই মাস আগে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেষ্টার শহরের নিজ এ্যাপার্টমেন্টে বার্ধক্যজনিত জটিলতায় মারা যান বলে লন্ডনস্থ নির্ভর যোগ্য সূত্রে জানা যায়। মৃত্যু কাল তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
ড. আর এস দেওয়ান ১৭ই জানুয়ারি ১৯৩২ সালে বর্তমান খাগড়াছড়ি জেলার খবংপয্যা এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা রমেশচন্দ্র দেওয়ান ও মাতা চন্দ্রমুখী দেওয়ান। পিতামাতার চার পুত্র ও তিন কন্যা সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন ষষ্ঠ।
ড. আর এস দেওয়ানের লেখাপড়া শুরু হয় খবংপয্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মহাপ্রুম মিডল ইংলিশ স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রথম হয়ে ড. দেওয়ান আবার সরকারি বৃত্তি লাভ করেন। তিনি রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে বিজ্ঞান বিভাগে মেট্রিক পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৬১ সালে অনার্স এবং ১৯৬২ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। কেমেস্ট্রিতে এমফিল করার জন্য তিনি ১৯৬৭ সালের ৩ নভেম্বর বিলেতে পাড়ি জমান। ড. দেওয়ান কুইন্স এলিজাবেথ কলেজে ১৯৬৮ সালে এমফিলে ভর্তি হন। এমফিল করতে তাঁর চার বছর লাগে। এমফিল শেষ করে ১৯৭৫ সালে সালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি শুরু করেন তিনি। ১৯৮০ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৭৪ সালে সরকারের পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি হিসেবে কমনওয়েল্থ সম্মেলনে যোগদান উপলক্ষে লন্ডন সফর করলে তৎকালীন জাতীয় সংসদ সমস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তাঁর সাথে যোগাযোগ করেন এবং ড. দেওয়ানকে জুম্ম জনগণের আন্দোলনের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইন চালানোর আহ্বান জানান। তাঁর আহ্বানে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে সার্বক্ষণিকভাবে আন্দোলনের কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। তখন থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে তিনি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মুখপাত্র।
ড. আর এস দেওয়ান ছিলেন একজন নিখাদ দেশপ্রেমিক ও সংগ্রামী মানুষ। তিনি জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনের পক্ষে আন্তর্জাতিক প্রচারকার্যের অন্যতম পুরোধা। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে তাঁর মাধ্যমে জুম্ম জনগণের অধিকারের পক্ষে আন্তর্জাতিক প্রচারাভিযানের পত্তন ঘটেছে যা ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং অধিকতর তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণে ক্রমাগত শক্তিশালী হয়ে আন্দোলনের অন্যতম সহায়ক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। ব্যক্তি জীবনে তিনি অত্যন্ত সৎ, নিষ্ঠাবান ও সাদাসিধা জীবনযাপনে অভ্যস্ত। দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে সুদূর যুক্তরাজ্যে থেকেও নিজের দেশ ও স্বজাতির প্রতি তাঁর ভালবাসা ও প্রাণের টান এতটুকু কমেনি। পাশ্চাত্য সমাজ জীবনের ভোগবাদী সংস্কৃতির স্রোতে গা ভাসিয়ে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে নিজেকে সঁপে দেননি। ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন চিরকুমার। জুম্ম জাতির সংগ্রামে নিজেকে সঁপে দেয়ায় ব্যক্তি জীবনে তিনি বিয়েও করেননি।