হিল ভয়েস, ১৮ জুন ২০২১, বান্দরবান: বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের তিন গ্রামের জুম্ম অধিবাসীরা লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ ও মেরিডিয়ান কোম্পানি তাদের ইজারা চুক্তি ভঙ্গ করায় তাদের সকল রাবার প্লট বাতিল এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে বিরোধ ও সংঘর্ষের আশঙ্কা বন্ধের আবেদন জানিয়ে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র নিকট চিঠি দিয়েছেন।
গ্রামবাসীরা ঐসব রাবার প্লটের ভূমি তাদের বংশপরম্পরায় চাষ করা জুমভূমি এবং বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন বলে দাবি করেন মন্ত্রীর বরাবরে লিখিত ঐ চিঠিতে।
গত ১৫ জুন ২০২১ তিন গ্রামবাসীদের পক্ষে লাংকং ম্রো কার্বারীসহ কয়েকজন মুরুব্বি কর্তৃক স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারী লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের তিনটি ম্রো ও ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দা। আমরা ৩০৩ নং ডলুছড়ি ও ৩০১ নং সরই মৌজায় যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছি। আমাদের বসবাসের ভুমিতে যেখানে আমরা বংশ পরম্পরায় জুমচাষ করে আসছি। সেই ভূমি আমাদের অজান্তে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ ও মেরিডিয়ান কোম্পানি ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে রাবার বাগানের জন্য ইজারা নিয়েছে। ইজারা নেওয়ার পর কোম্পানি দীর্ঘ ২৭-২৮ বছর ধরে কোনো রাবার বাগান করেনি। শুধু তাই নয়, ইজারা জমি হিসেবে দাবি করেনি। দীর্ঘ ২৭-২৮ বছর পর এই দুই কোম্পানি আমাদের বসবাসের পাড়া ও বংশ পরম্পরায় জুমজাষ করে আসা জুমের জমি তাদের ইজারা জমি হিসেবে দাবি করে রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ ও মেরিডিয়ান কোম্পানি আমাদের কয়েক শত একর জুমের জমি জবরদখল করে জঙ্গল কাটকে শুরু করে। জঙ্গল কাটার সময় রোহিঙ্গাসহ লাঠি-বৈঠা ধারী লাঠিয়াল বাহিনী পাহারা দিয়ে থাকে। আমরা বাঁধা দিলে হামলা করে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের হুমকি প্রদান করে। একই সঙ্গে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী মামলারও হুমকি প্রদান করা হয়।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘ইজারা চুক্তি না মেনে দীর্ঘ ২৭-২৮ বছর পর আমাদের তিন পাড়াবাসীর জুমের জমি লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে দখল করেছে। বিষয়টি পুলিশ, সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনে কয়েকবার জানানো হয়েছে। এমতাবস্থায় আমরা তিন পাড়ার ম্রো পরিবার এখনও দুই কোম্পানির লোকজনকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছি। জুমচাষের এ জমি দখল হলে আমাদের বেঁচে থাকার আর কোনো অবলম্বন নেই। অথচ দুই কোম্পানি এই এলাকায় সাড়ে তিন হাজার একর জমি দখল করে রয়েছে। কিন্তু কোম্পানি কর্ণধার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনো আবেদন-নিবেদন তোয়াক্কা না করে অমানবিকভাবে আমাদের জুমের জমি দখল করে নিচ্ছে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হাজার শত একর জমি যেকোনো উপায়ে রক্ষা করতে হবে। আমরা সক্রিয়ভাবে কোম্পানির লোকজনকে বাঁধা দিলে যেকেনো মুহূর্তে দুই পক্ষে দাঙ্গা ও সংঘর্ষ হবে। এজন্য আমাদের বিনীত আবেদন, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের এতদসঙ্গে সংযুক্ত জমাবন্দির ২৫টি রাবার প্লটসহ উপরোক্ত দুই কোম্পানির ইজারা চুক্তি ভঙ্গ করা সকল রাবার/হর্টিকালচার প্লট বাতিল করা হোক।..একই সঙ্গে কোম্পানির বেদখল বন্ধ করা হোক।’
উল্লেখ্য, চুক্তির ঘ খন্ডের ৮ ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, “রাবার চাষের ও অন্যান্য জমি বরাদ্দ ঃ যে সকল অ-উপজাতীয় ও অ-স্থানীয় ব্যক্তিদের রাবার বা অন্যান্য প্লান্টেশনের জন্য জমি বরাদ্দ করা হইয়াছিল তাহাদের মধ্যে যাহারা গত দশ বছরের মধ্যে প্রকল্প গ্রহণ করেন নাই বা জমি সঠিক ব্যবহার করেন নাই সে সকল জমির বন্দোবস্ত বাতিল করা হইবে।”
তারই আলোকে ২০ জুলাই ও ১৮ আগস্ট ২০০৯ যথাক্রমে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে অনুষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় বান্দরবান জেলায় অ-স্থানীয়দের নিকট প্রদত্ত ইজারার মধ্যে যে সমস্ত ভূমিতে এখনো চুক্তি মোতাবেক কোন রাবার বাগান ও উদ্যান চাষ করা হয়নি সে সমস্ত ইজারা বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
কিন্তু সরকার ও প্রশাসন চুক্তির উক্ত ধারা ও সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।