হিল ভয়েস, ৫ জুন ২০২১, রাঙ্গামাটি: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বালুখালি ইউনিয়নে দুই জুম্মর বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি, জিনিসপত্র তছনছ ও ক্ষতিসাধন এবং একজনকে মারধর করার পর উল্টো কয়েকজন জুম্ম গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সেনাবাহিনী প্রথমে বাড়িতে তল্লাশি, জিনিসপত্র তছনছ ও একজনকে মারধর করে এবং এর দুই দিন পর একই ঘটনায় পুলিশ ডেকে সন্ত্রাসীদের আস্তানা থেকে দেশীয় তৈরি বন্দুক ও সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস পেয়েছে বলে সাজানো অভিযোগ তুলে আট জুম্ম গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মে ২০২১ রাতে সেনাবাহিনীর এক মেজর ও দুই জন ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে রাঙ্গামাটি সদর জোন, জুরাছড়ি জোনের ৭ বীর রাজমনিপাড়া সেনা ক্যাম্প এবং বালুখালি এলাকার মরিচ্যা বিল সেনা ক্যাম্প এর ৬৩ জনের একটি সেনাদল বালুখালি ইউনিয়নের এগুজ্যোছড়ি গ্রামে তল্লাশি অভিযান চালায়। ভোররাত আনুমানিক ৩:০০ টার দিকে সেনাদলটি এগুজ্যোছড়ি গ্রামের লিখন চাকমা (২৪), পীং-সাধনা রঞ্জন চাকমা’র বাড়িটি ঘেরাও করে। এসময় লিখন চাকমা ও তার পরিবার বাড়িতে ছিলেন না। অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার কাজে কয়েকদিন পূর্ব থেকেই লিখন চাকমা ও তার পরিবার বাড়ির বাইরে আছেন।
এসময় সেনা সদস্যরা জোরপূর্বক লিখন চাকমার বাড়িতে প্রবেশ করে ব্যাপক তল্লাশি চালায়, জিনিসপত্র তছনছ করে দেয় এবং ভাঙচুর চালায়। যাওয়ার সময় লিখন চাকমার বাড়ির ২টি সোলার ও ২টি সোলারের ব্যাটারি নিয়ে যায় এবং লিখন চাকমার স্ত্রীর পরার পিনন-খাদি আগুনে পুড়িয়ে দিয়ে যায়।
শুধু তাই নয়, সেনাদলটি যাওয়ার সময় লিখন চাকমার বাড়ির পার্শ্ববর্তী লিখন চাকমার বড় ভাই রিপন চাকমা (২৫), পীং- সাধনা রঞ্জন চাকমা’র বাড়িটিও ঘেরাও করে। এসময় সেনা সদস্যরা রিপন চাকমাকে ঘুম থেকে তুলে ‘সন্ত্রাসীরা কোথায় থাকে, কোথায় খাবার খায়’ ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করার সাথে সাথে বেদম মারধর করে এবং বন্দুক দিয়ে আঘাত করে।
জানা গেছে, তল্লাশি অভিযানের সময় সেনাবাহিনী দুই জুম্মকে পথ প্রদর্শক হিসেবে নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, উক্ত তল্লাশি অভিযান, বাড়ির জিনিসপত্র ক্ষতিসাধন ও নিরীহ ব্যক্তিকে মারধর করেই সেনাবাহিনী ক্ষান্ত থাকেনি। উল্টো ঘটনার দুই দিন পর, গত ৩ জুন ২০২১ সেনাবাহিনী রাঙ্গামাটি’র কোতয়ালী থানার এস আই সাগর বড়ুয়াসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে দিয়ে তল্লাশির শিকার লিখন চাকমাসহ ৮ জুম্ম গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। মামলার এজাহারে লিখন চাকমার বাড়িটি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন জেএসএস’এর আস্তানা’ বলে উল্লেখ করা হয়।
গ্রামবাসীরা বলেন, এজাহারে, লিখন চাকমার বাড়িতে দেশিয় বন্দুকসহ সন্ত্রাসীদের ব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিস পাওয়া গেছে বলে মিথ্যা কাহিনী সাজানো হয়।
উক্ত এজাহারে উল্লেখিত অভিযুক্ত আসামী হিসেবে মিথ্যা মামলার শিকার ৮ গ্রামবাসী হলেন- (১) লিখন চাকমা (৩৫), পীং-মৃত গুরিচোগা চাকমা, গ্রাম-এগুজ্যাছড়ি; (২) সৌরভ বাবু, (৩) বিজয় চাকমা, (৪) অর্পণ চাকমা, (৫) শুভ চাকমা, (৬) বোম চাকমা, (৭) মানিক বুঝি চাকমা ও (৮) রিটন চাকমা। এছাড়া আরও অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনে ১৯ক ধারায় মামলা করা হয়।