হিল ভয়েস, ১৮ জুন ২০২১, ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন কণা বলেছেন, পাহাড় এবং সমতলে আদিবাসীদের উপর নিপীড়ন ও ভূমি বেদখল যেন রাষ্ট্রে এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
টাঙ্গাইলে কোচ আদিবাসী নারীকে ধর্ষণ, খাগড়াছড়ির সিন্ধুকছড়িতে ত্রিপুরা আদিবাসীদের ভূমি বেদখল এবং মধুপুরে মান্দিদের ঐতিহ্যগত ভূমি ও প্রাচীন মাংরুদাম (শ্মশান) বেদখল করে সীমানা প্রাচীর ও গেস্ট হাউজ নির্মাণের প্রতিবাদে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ তিনি একথা বলেন।
আজ ১৮ জুন ২০২১ সকাল ১০:৩০ ঘটিকায় ঢাকার শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি অনন্ত বিকাশ ধামাই। বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ’র সঞ্চালনায় এই প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, জোবাইদা নাসরীন কণা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সদস্য চঞ্চনা চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক টনি ম্যাথিউ চিরান, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন এর যুগ্ম সম্পাদক বুশ নকরেক, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রেঙ ইয়ং ম্রো, বাংলাদেশ কোচ আদিবাসী ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক চন্দন কোচ প্রমূখ। এতে আরও সংহতি জানিয়েছেন বাংলাদেশ বর্মন যুব পরিষদ, হাজং স্টুডেন্টস কাউন্সিল, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম, গারো স্টুডেন্টস ফেডারেশন ইত্যাদি সংগঠন।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশব্যাপী ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন তখন উন্নয়নের নামে আদিবাসীদের ভূমি ও ভিটেমাটি এবং তাদের শ্মশান বেদখল করে নিয়ে যাচ্ছে একদল স্বার্থান্বেষী মহল।’
তিনি আরো বলেন, ‘টাঙ্গাইলের সখিপুরে কোচ আদিবাসী নারীর ওপর অমানবিক যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের মত ঘটনা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাকর ও অত্যন্ত পীড়াদায়ক। বাংলাদেশ একটি বহু ভাষা, বহু জাতি ও বহু সংস্কৃতির দেশ। এই বহুত্ববাদই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সৌর্ন্দয। কিন্তু রাষ্ট্র এই বহুত্ববাদকে অস্বীকার করে আদিবাসীদের উপর ক্রমাগত দমন-পীড়ন, নির্যাতন নিপীড়ন করেই চলেছে।’
প্রতিবাদ সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, ‘পাহাড় এবং সমতলে আদিবাসীদের উপর নিপীড়ন ও ভূমি বেদখল যেন রাষ্ট্রে এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে ম্রো আদিবাসীদের ভূমিতে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ ও খাগড়াছড়ির সিন্ধুকছড়িতে ত্রিপুরা আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র তারই অন্যতম স্বাক্ষ্য বহন করে।’
তিনি সম্প্রতি কোচ আদিবাসী নারীর ওপর যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ এবং মধুপুরের টেলকিতে বনবিভাগ কর্তৃক গারোদের শতাব্দী প্রাচীন শ্মশানে (মাংরুদাম) সীমানা প্রাচীর ও গেষ্ট হাউজ নির্মাণের প্রতিবাদ জানান ।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য চঞ্চনা চাকমা বলেন, ‘বাংলাদেশে আদিবাসী নারীর ওপর নির্যাতন, সহিংসতা ও ধর্ষণের মতো পাশবিক ঘটনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে কিন্তু এ ঘটনাগুলোর অধিকাংশই গণমাধ্যম ও জনসম্মুখে প্রকাশ পায় না। তাই এ ধরনের ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য রাষ্ট্রের যথার্থ ভূমিকা রাখা দরকার বলে মনে করেন আদিবাসী এই নেত্রী।
সমাবেশ থেকে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ উত্থাপন করা হয়:
১. টাঙ্গাইলের সখিপুর কোচ আদিবাসী নারীর উপর যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে;
২. পর্যটন কেন্দ্র ও উন্নয়নের নামে সিন্ধুকছড়িতে আদিবাসীদের ভূমি বেদখল ও উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে;
৩. মধুপুরে গারো আদিবাসীদের প্রাচীন মাংরুদাম (শ্মশান) এর উপর সীমানা প্রাচীর ও গেস্ট হাউস নির্মাণ বন্ধ করতে হবে;
৪. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে;
৫. সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে;
৬. আদিবাসীদের নামে হয়রানিমূলক সকল মিথ্যা বন মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।