হিল ভয়েস, ১৬ জুন ২০২১, টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইল জেলাধীন সখিপুর উপজেলায় আদিবাসী কোচ নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত সকল আসামীকে দ্রুত গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
গতকাল ১৫ জুন ২০২১ টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ আদিবাসী কোচ ইউনিয়ন এর উদ্যোগে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ আদিবাসী কোচ ইউনিয়নের সদস্য সচিব বকুল চন্দ্র বর্মনের সঞ্চলনায় ও একই সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক রতন কুমার কোচের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনের আলোচনায় বক্তব্য রাখেন বিশ^জিৎ কোচ, পরিমল চন্দ্র কোচ, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ, বাগাছাস এর কেন্দ্রীয় সভাপতি জন যেত্রা, গারো স্টুডেন্টস্ ফেডারেশনের সম্পাদক লিয়াং রিছিল, অমল কোচ, গৌর কোচ, পরিমল চন্দ্র কোচ, স্বপন কুমার কোচ, রানেল মানখিন প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বর্তমানে দেশে এক ধরনের অরাজকতা চলছে। কোথাও কোনো ধরনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নাই, বিচার নাই। ফলে অপরাধীরা যে কোন প্রকারের ঘটনা ঘটিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। মূলত বিচরাহীনতার সংস্কৃতির কারণে দেশে আদিবাসীদের উপর নিপীড়ন বাড়ছে। একটি গণতান্ত্রিক দেশ এভাবে চলতে পারে না।
বক্তারা বলেন, আমরা জানতে পেরেছি প্রশাসন ইতোমধ্যেই ধর্ষণের দুই আসামীকে গ্রেফতার করেছে। তার জন্য প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু বাকি আরেক আসামীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানাই।
বক্তারা আরও বলেন, স্বাধীন ও সাার্বভৌম দেশে মধ্যযুগীয় বর্বর ঘটনা কামনা করা যায় না। মানববন্ধন থেকে নিম্নোক্ত দাবিগুলো তুলে ধরা হয়-
১। অবিলম্বে দোষী ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও আইনের আওতায় আনতে হবে।
২। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৩। আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।
৪। ঘৃণ্য ও পৈশাচিক অপরাধের সাথে জড়িত সকল আসামীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ১০ জুন ২০২১, রাতে সখীপুর উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নের বাজাইল বড়চালা গ্রামে এক আদিবাসী কোচ নারীকে (৪০) গণধর্ষণের এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই নারীকে প্রথমে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক রেহানা পারভীন বলেন, একজন নারীর সঙ্গে এমন মর্মান্তিক ও অমানবিক আচরণ আমি এর আগে কখনও দেখিনি। তার মুখ ও শরীরের বিভিন্ন অংশে কামড়ের ক্ষত ও দাগ রয়েছে। তার মুখের চারটি দাঁতও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এছাড়া তার পায়ুপথ ও গোপনাঙ্গ ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এতে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এটা স্পষ্ট ধর্ষণের ঘটনা।
ওই নারীর দেবর জানান, গত ১০ জুন ২০২১, রাত সাড়ে ১২টার দিকে একই এলাকার টেংগু সরকারের ছেলে দীনা সরকার (৩৩), নারায়ণ চন্দ্র সরকারের ছেলে মন্টু সরকার (৩০) ও ময়নাল মিয়ার ছেলে শবদুল মিয়া (২৮) দেশি চোলাই মদ পান করে তাদের বাড়িতে যায়। এরপর ওই নারীকে ঘর থেকে ডেকে বের করে পাশের একটি ফাঁকা জায়গায় নিয়ে তিনজনে মিলে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের এক পর্যায়ে দীনা সরকার ওই নারীর মুখমণ্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড়ে গুরুতর আহত করে। এছাড়াও গোপনাঙ্গ ও পায়ুপথ ছিঁড়ে ফেলে। ওই নারীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে ওই তিনজন দৌড়ে পালিয়ে যায়।