হিল ভয়েস, ৩০ জুন ২০২১, বিশেষ প্রতিবেদক: ঠেগা স্থল বন্দর ও কমলাক-শিলছড়ি সীমান্ত বাজার স্থাপনের জন্য সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একতরফাভাবে রাঙ্গামাটি জেলার ঠেগা মুখ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যে সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে তাতে স্থানীয় আদিবাসী জুম্ম জনগণের অধিকারহরণসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে আঞ্চলিক পরিষদসহ আদিবাসী নেতৃত্ব ও স্থানীয় জুম্মদের মতামত এবং স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতির যেমন তোয়াক্কা করা হয়নি, তেমনি ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়নি বলে জানা গেছে।
রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের কমলাক ও মিজোরামের শিলছড়ি সীমান্ত এলাকায় সীমান্ত হাট স্থাপনের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সাজেক ইউনিয়নের অন্তর্গত ১৬৭ নং রুইলুই মৌজা ও ১৬৮ নং লংকর মৌজার রুইলুই, শিজকছড়া, দাড়ি পাড়া হতে মিজোরামের শিলছড়ি সীমান্ত পাড় পর্যন্ত এবং পাড় ঘেঁষে সাজেক ছড়ার উপর-নীচ সড়ক নির্মাণের ফলে নিজস্ব বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ এবং আংশিক বাগান-বাগিচা ও জুমভূমি হারিয়ে ২১১ পরিবারের আনুমানিক প্রায় ৮৫০ একর ভূমি ক্ষতিগ্রস্ত বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে স্থানীয় আদিবাসী পরিবারগুলোর জীবন-জীবিকা কঠিন ও উপায় বিহীন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলাধীন ঠেগামুখে একটি স্থল বন্দর নির্মাণসহ প্রতিবেশী ভারতের মিজোরাম রাজ্যের সাথে বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার রাজস্থলী-বিলাইছড়ি-জুরাছড়ি-বরকল-ঠেগামুখ (প্রায় ১২৩.৫৪ কিলোমিটার) এবং রাঙ্গামাটি-ছোটহরিণা জলপথে (৬৩ কিলোমিটার) ও স্থলপথে ছোটহরিণা-ঠেগামুখ (৭.৯৮ কিলোমিটার) সড়ক নির্মাণের একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-এর আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৬ ইসিবি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম-ঠেগা সংযোগ সড়কের অংশ হিসেবে সরকার বাঘাইছড়ি উপজেলায়ও সেনাবাহিনীর ২০ ইসিবি’র মাধ্যমে সাজেক-কমলাক সড়ক নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, যা ঠেগা স্থলবন্দরের সাথে সাজেক-খাগড়াছড়ি হয়ে চট্টগ্রামের সাথে সংযুক্ত করবে।
বলাবাহুল্য, উভয় সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রেই স্থানীয় জুম্মরা তাৎক্ষণিকভাবে যেমনি তাদের ব্যাপক ভূ-সম্পত্তি, ফলজ-বনজ সম্পদ এবং জীবন-জীবিকা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, তেমনি অপরদিকে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশেরও ক্ষতিসাধন হচ্ছে। সর্বোপরি, সরকার ও সেনাবাহিনী কর্তৃক একতরফাভাবে এই সড়ক নির্মাণের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও জনমিতিগত পরিস্থিতিকেও গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
রাজস্থলী-বিলাইছড়ি-জুরাছড়ি-বরকল-ঠেগামুখ সংযোগ সড়ক
২০১৬ সালের জুনে বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রকাশিত এক রিপোর্টে রাজস্থলী-বিলাইছড়ি-জুরাছড়ি-বরকল-ঠেগামুখ সংযোগ সড়ক বাস্তায়নের জন্য আনুমানিক ৬১১ একর ভূমির প্রয়োজন হবে বলে উল্লেখ করা হয়। সমীক্ষায় জানানো হয় যে, উক্ত রাজস্থলী-বিলাইছড়ি-জুরাছড়ি-বরকল-ঠেগামুখ সড়ক নির্মাণ করা হলে ১১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, ৫৬৪ পরিবার প্রভাবিত/ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ২৪১টি বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ১৫৭ পরিবার ব্যবসায়িক কাঠামো হারাবে, ১০টি সাংস্কৃতিক অবকাঠামো (৩টি মসজিদ, ৩টি মন্দির ও ৪টি স্কুল) ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ৩২টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জানা গেছে, প্রথম দিকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নেই এই সংযোগ সড়কটি বাস্তবায়িত হওয়ার কথা এবং এজন্য বিশ্বব্যাংকের অর্থ সহায়তায় সরকার ২০১৬ সালের শুরুতে ‘চিটাগং হিলট্র্যাক্টস কানেকটিভিটি প্রজেক্ট’ এর আওতায় একটি জরিপও পরিচালনা করা হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক পরবর্তীতে প্রকল্পটির জন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষতিকর প্রভাবসমূহ এবং আলোচনার প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতিকে বিবেচনায় নিয়ে ১৭ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে লিখিত একটি পত্রে ঠেগামুখ-চট্টগ্রাম সংযোগ সড়ক সংক্রান্ত কোন কার্যক্রম বিষয়ে কোন কাজ করবে না বলে মতামত জ্ঞাপন করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৬ ইসিবি বর্তমানে রাজস্থলী হতে বিলাইছড়ি পর্যন্ত সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছে। বর্তমানে বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়ন হয়ে জুরাছড়ি উপজেলা সীমান্ত পর্যন্ত রাস্তা কাটার কাজ গেছে। এই সড়ক নির্মাণ কাজের ফলে ইতোমধ্যে উক্ত দুই উপজেলায় অন্তত ১২৯ পরিবার জুম্ম ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। তন্মধ্যে রাজস্থলী উপজেলায় ৫৫ পরিবার জুম্ম প্রায় ২৭.০৫ একর ভূমি হারিয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং বিক্রয়যোগ্য বনজ ও ফলজ গাছ ২,১৫১টি, যার বাজার মূল্য প্রায় ২২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। অপরদিকে, বিলাইছড়ি উপজেলায় ৭৪টি পরিবার হারিয়েছে ৯.৮ একর পরিমাণ ভূমি, যার বাজার মূল্য প্রায় ৬৮ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং বিক্রয়যোগ্য বনজ ও ফলজ গাছ ১,৪১৫টি, যার বাজার মূল্য প্রায় ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
এছাড়া সম্প্রতি এই সড়ক নির্মাণের ফলে বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়নের এগুজ্যাছড়ি এলাকা থেকে ৮ পরিবার, শুক্করছড়ি এলাকা থেকে ৫ পরিবার ও গবছড়ি এলাকা থেকে ৬ পরিবার জুম্ম নিজ বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের শিকার হয়ে অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। সেনাবাহিনী পূর্ব কোন ঘোষণা ছাড়াই বুলডোজার দিয়ে রাস্তা কেটে ওই পরিবারগুলিতে উচ্ছেদ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিলাইছড়ির এক জনপ্রতিনিধি জানান, ‘চট্টগ্রাম টু টেগামুখ যে সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে বিদ্যমান বাস্তবতায় তা স্থানীয় অধিবাসীদের উপকারের চাইতে ক্ষতিই বেশি হবে। অবৈধ সেটেলারদের অনুপ্রবেশ বেড়ে যাবে এবং ফলে স্থানীয়রা উচ্ছেদের মুখে পড়বে। এতে পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফারুয়াতে একটি বিবাহ অনুষ্ঠানে গেলে স্থানীয় লোকেরা আমাকে অভিযোগ করেন যে, সেনাবাহিনী পূর্ব নোটিশ বা অবগতি ছাড়াই রাস্তা নির্মাণের জন্য হঠাৎ ঘর-বাড়ি ভেঙে দিচ্ছে, কারো ফলজ গাছ, কারো ধান্য জমি ধ্বংস করে দিচ্ছে। আর জিনিসপত্র বাঁচাতে কেউ প্রতিবাদ করলে দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর সদস্যরা ধমক দিয়ে চুপ থাকতে বাধ্য করেন। এছাড়া সেনা সদস্যরা বলেন যে, বেশি বাড়াবাড়ি করলে পর্যটন নির্মাণ ও বাঙালি এনে তোদের উচ্ছেদ করবো। অথচ ক্ষতিগ্রস্তদের কাউকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।’
উক্ত জনপ্রতিনিধি আরো বলেন, ‘এর আগে সম্ভাব্য ক্ষতির বিষয় বিবেচনা করে আঞ্চলিক পরিষদসহ আমরা সড়ক নির্মাণ বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মরকলিপি প্রদান করি। কিন্তু কাজ বন্ধ হয়নি। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অবগত করা হয়নি।’
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক স্থানীয় স্কুল শিক্ষক বলেন, ‘আমরা স্থানীয়রা ১০/১২ জন মিলে একটা গাড়ি কিনতে পারি না। ব্যবসা করার জন্য আমাদের পুঁজি নেই। তাই এই সড়ক নির্মাণ আমাদের জন্য মঙ্গলজনক নয়। সব ব্যবসা বাণিজ্য বহিরাগতের হাতে চলে যাবে। আমরা সরকারি চাকরি করেও শান্তিতে নেই, বিশেষ একটি মহল সবসময় চাপ দিয়ে থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফারুয়া সদরের উপরে সেনাবাহিনীকে অবগতি ছাড়া যেথে পারি না এবং প্রায়ই আমাদের কোনো আত্মীয় আঞ্চলিক রাজনীতির জড়িত আছে কিনা ইত্যাদি প্রশ্ন করে হয়রানি করা হয়। ফলে চাকরি ও জীবন বাঁচাতে বোবা থাকতে হয়, অন্যায় দেখলেও আমরা প্রতিবাদ করতে পারি না।’
সাজেক-কমলাক সীমান্ত সড়ক
কমলাক-শিলছড়ি সীমান্ত বাজার স্থাপনের উদ্দেশ্যে প্রায় একই সময়ে সেনাবাহিনীর ২০ ইসিবি ভারতের মিজোরামের সীমান্তবর্তী সাজেক-কমলাক সড়কটির নির্মাণ শুরু করে বলে জানা যায়। এই বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রস্থে ৪০ ফুট ৩২ কিলোমিটার পরিমাণ উক্ত সড়ক নির্মাণ করতে চারটি গ্রামের আদিবাসী জুম্ম গ্রামবাসীর ভূসম্পত্তি ও মূল্যবান বাগান-বাগিচা ধ্বংসের মুখে পড়ে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। মুলত জুম্মদের ভোগদখলীয় জায়গার উপর দিয়েই এই সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, এই চারটি গ্রামের ৬০ পরিবারের অন্তত ৪৩ একর ভূমি বেদখল করা হয়েছে এবং সেখানে গড়ে তোলা দীর্ঘ দিনের সেগুন, কলা, আম, লিচু, সুপারি, ফুল ঝাড়ু ইত্যাদি বাগান ও হলুদ, তিল ইত্যাদি ক্ষেত ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এমনকি সড়কের পাশে থাকা বেশকিছু জুম্ম গ্রামবাসীর বাড়িঘরও ভেঙে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বলাবাহুল্য, সেনাবাহিনী এতে শুধু জুম্মদের মূল্যবান ফলজ ও বনজ বাগান ধ্বংস করে দেয়নি, বড় বড় বুলডোজার ও ট্রাক্টর দিয়ে একরের পর এক প্রাকৃতিক বন ও পাহাড় ধ্বংস করেছে।
স্থানীয় জুম্মরা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের নিকট এবিষয়ে অভিযোগ ও প্রতিবাদ করলেও সেনা কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি। ক্ষতিপূরণের দাবি করলেও তা এড়িয়ে যায়।
উপরন্তু সেনাবাহিনীর তরফ থেকে ভুক্তভোগী জুম্মদের ধমকের সুরে বলা হয়েছে, ‘এগুলো সরকারি জায়গা। এই জায়গাগুলোতে তোমাদের কোন অধিকার নেই। এসব জায়গা তোমরা দাবি করতে পার না। প্রশাসন চাইলে যে কোনো সময় তোমাদের তাড়িয়ে দিতে পারে। সরকার তোমাদের ভালোবাসে বলেই এখনো তেমন কিছু করছে না।’
এলাকাবাসীর তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সড়কটি সাজেকের রুইলুই দাঁড়িপাড়া থেকে শিজকছড়া বাঁধ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এবং শিজকছড়া হতে উত্তর দিকে উদয়পুর সড়ক পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার আর দক্ষিণ দিকে কমলাক পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত এসেছে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ এপ্রিল ২০২১ বিকাল আনুমানিক ৪:০০ টার দিকে সাজেকের কমলাক, তালছড়া ও ছৈনালছড়া এলাকাবাসী জুম্ম জনগণ নির্মাণাধীন সড়কে উপস্থিত হয়ে বাঁচার আকুতি এবং ভূমি বেদখল বন্ধ করে আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে এক মানববন্ধন আয়োজন করেন। মানববন্ধনে তারা বলন, উন্নয়ন নয়, আগে বাঁচতে হবে। তারা আরো বলেন, আমার ভূমি আমার মা, কেড়ে নিতে দেবো না; আদিবাসীদের ভূমি অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী জুম্মরা স্থানীয় জুম্মদের ভূমি জোরপূর্বক বেদখল করে বিজিবি ও সেনা ক্যাম্প স্থাপন এবং সাজেক সড়ক নির্মাণের বিরোধীতা করেন এবং প্রতিবাদ জানান।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী গ্রামবাসীরা অতি সম্প্রতি কমলাক এলাকায় জুম্মদের জুম চাষে বাধা দিয়ে ও তাদের জুম ভূমি বেদখল করে এবং জুম্মদের সেগুন বাগান ও ফলজ বাগান ধ্বংস করে সেনাবাহিনীর ইসিবি (ইঞ্জিনিয়ার্স কন্সট্রাকশন ব্যাটিলিয়ন) সড়ক নির্মাণ এবং বিজিবি নতুন ক্যাম্প স্থাপন করছে বলে অভিযোগ করেন। জানা গেছে, সেখানে ৬ পরিবার জুম্মর প্রায় ২০ একর পরিমাণ ভূমি বেদখল করে সড়ক ও বিজিবি ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে।
সংযোগ সড়ক নির্মাণে জেএসএস ও আঞ্চলিক পরিষদের মতামত
শুরু থেকে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরকারী পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ স্থানীয় অধিবাসীদের অধিকারের কথা বিবেচনা করে এই সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি বন্ধ রাখার পক্ষে মতামত প্রদান করে। তারা পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এবং আঞ্চলিক পরিষদ আইন ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন যথাযথভাবে কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ঠেগামুখ-কোয়ার্পুচ্ছয়া স্থলবন্দর উন্নয়ন এবং ঠেগামুখ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ রাখার লিখিত সুপারিশ পেশ করে। কিন্তু এরপরও সরকার ও সেনাবাহিনী এই সড়ক নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখে।
আরও উল্লেখ্য, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে নদীর সীমানা নির্ধারণ, নাব্যতা বৃদ্ধি এবং স্থলবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের উদ্দেশ্যে গত ২৯ জানুয়ারি ২০১৭ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনজেলায় খাগড়াছড়ির রামগড়ের সঙ্গে দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম, বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সঙ্গে মিয়ানমারের মংডু এবং রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলার ঠেগামুখের সঙ্গে ভারতের মিজোরামের কোয়ার্পুচ্ছয়ার মধ্যে স্থলবন্দর নির্মাণ নির্মাণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের পক্ষ থেকে খাগড়াছড়ির রামগড়ের সঙ্গে দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুম এবং বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সঙ্গে মিয়ানমারের মংডু-এর মধ্যে স্থলবন্দর নির্মাণের পক্ষে অনুকূল মত দেয়া হয়।
উক্ত সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের মতামত ও সুপারিশে বলা হয় যে, ঠেগামুখে স্থলবন্দর স্থাপন ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হলে এর সুফল পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনগ্রসর পাহাড়ি অধিবাসীগণও ভোগ করতে পারতেন। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তা সুফল আনয়নের পরিবর্তে কুফলই বেশি পরিমাণে আনয়ন করতে পারে বলে আঞ্চলিক পরিষদ মত ব্যক্ত করে। এতদ্প্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন মতবিনিময় সভায় বিশেষত স্থানীয় অধিবাসীগণের প্রতিনিধিগণ উক্ত ধরনের মতামত তুলে ধরেন এবং ১২ জুন ২০১৬ তারিখে রাঙ্গামাটিতে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধি কর্তৃক “পার্বত্য জেলা পরিষদে ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়টি নির্বাহী আদেশে হস্তান্তরিত ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিধানাবলী প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত এবং ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ঠেগামুখ-কোয়ার্পুচ্ছয়া স্থলবন্দর উন্নয়ন এবং ঠেগামুখ থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যে কোন রাস্তা নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ রাখার” জন্য মতামত ও সুপারিশ পেশ করা হয়।