কল্পনা অপহরণ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপহরণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রামে পিসিপি’র সমাবেশ

হিল ভয়েস, ১৩ জুন ২০২১, চট্টগ্রাম: গতকাল ১২ জুন ২০২১ নারী নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ ও চিহ্নিত অপহরণকারী লে: ফেরদৌস গংদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) চট্টগ্রাম মহানগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যৌথ উদ্যোগে চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সমাবেশে পিসিপি’র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য হ্লামিউ মারমার সঞ্চালনায় পিসিপি’র চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অনুজ চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংহতি বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণ চাকমা, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল এর কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক এ্যানি চৌধুরী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি ধীষণ প্রদীপ চাকমা, পিসিপি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রুমেন চাকমা, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরণ ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সভাপতি এ্যানি সেন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি রায়হান উদ্দিন প্রমুখ।

সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন কর্তৃক প্রকাশিত বিবৃতি পাঠ করেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য অন্তর চাকমা এবং স্বাগত বক্তব্য দেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অর্থ সম্পাদক নরেশ চাকমা।

স্বাগত বক্তব্যে নরেশ চাকমা বলেন, ‘কল্পনা চাকমাকে ২৫ বছর আগে অপহরণ করা হয়। কিন্তু ২৫ বছর অতিক্রম হলেও অপহরণকারীদের শাস্তি প্রদান করা হয়নি। এই সমাবেশ থেকে অপহরণকারীদের শাস্তির দাবি জানাই।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরণ ত্রিপুরা বলেন, ‘কল্পনা চাকমাকে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক দিবাগত রাতে নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয়। ঘটনার ২৫ বছরেও সরকার দোষীদের বিচার নিশ্চিত করতে পারেনি।’

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সভাপতি এ্যানি সেন বলেন, ‘২৫ বছর আগে কল্পনা চাকমা রাতের অন্ধকারে হারিয়ে গেছে, রাষ্ট্র এখনো পর্যন্ত তাঁর হদিশ দিতে পরেনি। বাঙালিরা ইসরায়েল, ফিলিস্তিনি জনগণের কান্নার আওয়াজ শুনতে পান, অথচ পাহাড়ের মানুষের আর্তনাদ শুনতে পান না। এক দেশের ভেতরে দুই নীতি যে চলমান রয়েছে তা পাহাড়ে গেলেই বোঝা যায়। সমতলের মানুষের জন্য এক শাসন আর পার্বত্য অঞ্চলে আরেক শাসন।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘এদেশের রাষ্ট্রীয়বাহিনী কর্তৃক কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়েছে। তার পরিবারের সামনে থেকে মধ্যরাতে তাঁকে নির্মমভাবে অপহরণ করা হয়। রাষ্ট্র পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর উপর প্রতিনিয়ত নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি অনেকবার সরকার গঠন করলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের শাস্তি প্রদান করা হোক।’

গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক এ্যানি চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘ ২৫ বছর অতিক্রম হলেও কল্পনা চাকমার পরিবার এখনো জানতে পারেনি কল্পনা চাকমা কোথায়? কল্পনা চাকমা অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন। তাই রাষ্ট্র তাঁর প্রতিবাদী কন্ঠস্বরকে ভয় পেত। এদেশে তনু হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল কিন্তু সরকার তার বিচার করেনি। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে পাহাড় ও সমতলে একসাথে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।’

পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রুমেন চাকমা বলেন, ‘রাষ্ট্রের দায়িত্ব সকল নাগরিকের নিরাপত্তা প্রদান করা। কিন্তু রাষ্ট্রের বাহিনী কর্তৃক অপহরণ করা হলে মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? কল্পনার অপহরণ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। এই পর্যন্ত ৩৯ জন তদন্ত কর্মকর্তা বদলী হয়েছেন কিন্তু সুষ্ঠু তদন্তের কোন নামই নেই। এভাবে আর কত তদন্ত কর্মকর্তা বদলী হলে সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হবে? স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সরকার নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করে আন্দোলন থামানো যায়নি, যাবে না। অপহরণ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপহরণকারীদের গ্রেফতার করতে হবে এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে মুক্তি দিতে হবে।’

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি ধীষণ প্রদীপ চাকমা বলেন, ‘রাষ্ট্র কল্পনা চাকমার মতো প্রতিবাদী কন্ঠস্বরকে থামিয়ে দিতে চায়। ১৯৭১ সালে অন্যায় অবিচার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যারা স্বাধীনতা লাভ করেছে যদি তারা দেশের মধ্যে অন্যায়-অত্যাচার চালায় তখন বলতে হয় রাষ্ট্রের চেয়ার বদলেছে মাত্র, চরিত্র বদলায়নি। সারাদেশে ধর্ষণ, নির্যাতন-নিপীড়ন হয় কিন্তু তার বিচার হয় না। দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে গেছে। আমরা এই সংস্কৃতিকে ভাঙতে চাই।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণ চাকমা বলেন, ‘কল্পনা অধিকারের কথা বলতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। শাসকগোষ্ঠী অপহরণ, গুম করে আন্দোলন থামাতে পারবে না। দেশের আপামর জনগণ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন তাদের থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। পাহাড়ের মানুষের প্রতিনিয়ত রাষ্ট্র বাহিনী কতৃক নানা নির্যাতন, হয়রানির শিকার হতে হয়। কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের বিচারের আওতায় এনে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।’

সভাপতির বক্তব্যে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অনুজ চাকমা অবিলম্বে কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

More From Author