হিল ভয়েস, ২১ মে ২০২১, বিশেষ প্রতিবেদক: আবুল খায়ের গ্রুপ কর্তৃক চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ত্রিপুরা পল্লীতে বসবাসকারী আদিবাসী ত্রিপুরাদের উচ্ছেদ চেষ্টা বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে। গত ১৮ তারিখ ২০২১ বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের পক্ষ থেকে ৩ দফা দাবি সম্বলিত এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনন্ত কুমার ত্রিপুরা স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ত্রিপুরা অন্যতম জনগোষ্ঠী। শিক্ষা, অর্থনীতি ও সচেতনতাসহ সার্বিক দিক দিয়ে এ জনগোষ্ঠী অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তাই এ জনগোষ্ঠী চরমভাবে অবহেলিত এবং উন্নয়ন সুবিধা হতে সবসময় বঞ্চিত।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়াও চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, সীতাকুন্ড, মীরসরাইসহ বিভিন্ন উপজেলায় এ জনগোষ্ঠীর মানুষ স্মরণাতীত কাল হতে বসবাস করে আসছে। দেড়শো’র অধিক বছর ধরে বসবাসরত সীতাকুন্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়া এসব অনগ্রসর ত্রিপুরা পল্লীগুলোর মধ্যে অন্যতম। এসব পরিবারসমূহ প্রায় দেড়শো বছর ধরে বসবাস করে আসছে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে ত্রিপুরা পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করার জন্য আবুল খায়ের গ্রুপ বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে উক্ত পাড়ার হতদরিদ্র ১০টি পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত ঘর নির্মাণের সময় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। হুমকি-ধামকিতে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনাতিপাত করছে।
ত্রিপুরাদের উক্ত জায়গা থেকে উচ্ছেদ হলে অন্যকোনো জায়গায় যাওয়ার সুযোগ নেই বিধায় বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে স্মারকলিপিতে।
স্মারকলিপিতে উচ্ছেদ বন্ধের দাবিতে নিম্নোক্ত তিন দফা দাবি জানানো হয়-
১. সোনাইছড়িতে বসবাসরত ৭০টি ত্রিপুরা পরিবারের উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে;
২. আবুল খায়ের গ্রুপের হুমকি থেকে পাড়াবাসীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে;
৩. পাড়াবাসীদের নামে তাদের বসতভিটা রেকর্ডভুক্ত করে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করে আশ্রায়ণ প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এর সীতাকুণ্ড ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, আমরা এখানে যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছি। অনেক তদবির করে স্থানীয় প্রশাসন ২০১৮ সালে সেখানে একটি স্কুল তৈরি করে দেয়। তবে স্কুল প্রতিষ্ঠা নিয়েও অনেক ইতিহাস আছে। তার পাশে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর তৈরি করার জন্য জায়গা প্রস্তুত করতে গেলে আবুল খায়ের গ্রুপের আনসার সদস্যরা আমাদের রাইফেল ঠেকিয়ে রেখে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। কিন্তু আমরা শান্তি চাই বলে কোন কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে আমরা উচ্ছেদ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। তিনি বিভিন্ন প্রত্রিকার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
এ বিষয়ে একেএস মিলের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ইমরুল কাদের ভূঁইয়া জানান, যে জায়গায় ১০টি ত্রিপুরা পরিবারের ঘর নির্মাণ করার কথা, সে জায়গাটি আমাদের। জায়গার মালিকানা নিয়ে সব ডকুমেন্ট আমাদের আছে।