রুমায় সেনাবাহিনী বলছে অস্ত্রশস্ত্র ও মাদক উদ্ধার, জনগণ বলছে নাটক

হিল ভয়েস, ১২ মে ২০২১, বান্দরবান: অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন রুমা উপজেলার ১নং পাইন্দু ইউনিয়নের মিনঝিরি পাড়া এলাকা থেকে যে অস্ত্র, গুলি, পোশাক ও মাদক উদ্ধারের কথা বলছে, জনগণ সেটাকে বলছেন সাজানো নাটক। আর সেনাবাহিনী সেখানে যে ‘পাহাড়ি সন্ত্রাসীর সাথে গুলি বিনিময়’ এর কথা বলছে, এলাকাবাসী জুম্মদের তথ্য অনুসারে, সেটা সেনাবাহিনীর একতরফা ফাঁকা গুলিবর্ষণ ছাড়া আর কিছু নয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ মে ২০২১ সন্ধ্যা আনুমানিক ৬:০০ টার দিকে রুমা উপজেলার রুমা সেনা জোনের ২৭ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর ২৫-৩০ জনের একদল সেনাসদস্য দু’টি জীপে করে উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের অধীন ৩নং ওয়ার্ডের চাইলাগ্র পাড়ায় যায়। এরপর সেনাদলটি সেখান থেকে রাত আনুমানিক ১০:০০ টার দিকে বের হয়ে যায় এবং একই ওয়ার্ডের পার্শ্ববর্তী মিনঝিরি পাড়া নামক গ্রামের রাস্তার মোড়ে এ্যামবুশ পজিশন নিয়ে অবস্থান গ্রহণ করে। তারপর (১১ মে ২০২১) ভোররাত ৩:০০ টার দিকে সেনা সদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকে।

এলাকাবাসীর তথ্য অনুসারে, ঐ সময় সেনা সদস্যরা অন্তত ১৫০-২০০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে।

জানা গেছে, ফাঁকা গুলি ছোঁড়ার পর ভোর হওয়ার আগেই সেনাদলটি উক্ত স্থানটি ত্যাগ করে চলে যায়।

উল্লেখ্য, এর পরপরই একটি বিশেষ অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বারবার উক্ত ঘটনাকে ‘পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সাথে সেনাবাহিনীর গুলি বিনিময়’ জাতীয় খবর হিসেবে প্রচার করে। ঘটনাস্থলে ২টি রাশিয়ার তৈরি এসএমজি, ৩টি ম্যাগাজিন, ১২ রাউন্ড গুলি, আফিম, মদ ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে।

অপরদিকে, সেনাবাহিনীর আন্তঃবাহিনী ও জনসংযোগ অধিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকেও সন্ত্রাসীদের সাথে গুলি বিনিময় হয়েছে এবং অস্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে উল্লেখ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, সেখানে কারো সাথে সেনাবাহিনীর গুলি বিনিময় হয়নি, বরং সেনাবাহিনীই একতরফাভাবে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। আর সেখান থেকে কোনো অস্ত্র, গুলি, মাদক ইত্যাদি উদ্ধার করার প্রশ্নই আসে না।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ এক ব্যক্তি বলেন, সেনাবাহিনী তাদের উদ্ধারকৃত বলে যে ইউনিফর্মগুলো দেখাচ্ছে সেগুলো মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী এএলপিদের ইউনিফর্মের সাথে মিল রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বান্দরবানের এক অধিকারকর্মী বলেন, পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়নকে নস্যাৎ করা, পাহাড়কে অশান্ত রাখা এবং জুম্মদের উপর দমন-পীড়ন ও পাহাড়ে সেনা উপস্থিতিকে বৈধতা দেয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে এই অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজিয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সেনা কর্মকর্তারা নিজেদের পদোন্নতির জন্যও মাঝেমধ্যে এই ধরনের সাজানো অভিযান, সন্ত্রাসী আটক ও অস্ত্র উদ্ধারের নাটক করে থাকে।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামে এভাবে পরিকল্পিভাবে অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র গুঁজে দিয়ে নিরীহ জুম্মকে সন্ত্রাসী বানিয়ে আটক করার নাটক সাজানোর অভিযোগ রয়েছে।

কিছুদিন আগেও রাজস্থলীতে এক মারমা গ্রামবাসীকে অস্ত্র গুঁজে দিয়ে, নানিয়ারচরে এক চাকমা গ্রামবাসীকে তথাকথিত গোলাবারুদ রাখার দায়ে আটক, বান্দরবানের নোয়াপতং-এ পিস্তল উদ্ধারের নামে নিরীহ জুম্মকে মারধর করা এবং এর কিছু পূর্বে সাজেকে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান এর নাটক করার অভিযোগ ওঠে।

More From Author