হিল ভয়েস, ১ মে ২০২১, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলা, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা ও বিলাইছড়ি উপজেলায় সেনাবাহিনী কর্তৃক জুম্ম গ্রামবাসীকে মারধর, বাড়িতে তল্লাশি ও জুম্ম গ্রাম প্রধানকে হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় ১ জুম্ম যুবককে মারধর, এক ইউপি সদস্যসহ ৩ জুম্মর বাড়ি তল্লাশি এবং তিন গ্রাম প্রধানসহ ৪ ব্যক্তিকে হয়রানি করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল ২০২১ দুপুরের দিকে কাপ্তাই সেনা জোনের ২৩ ইস্ট বেঙ্গল ডেয়ারিং টাইগার্স এর ২০-২৫ জনের একদল সেনা সদস্য সন্ত্রাসী খোঁজার নামে কাপ্তাই সদর ইউনিয়নের ভাজ্যাতলী মৌজার ভাঙামুড়া গ্রামে সুইপ্রু তঞ্চঙ্গ্যা (১৭) নামে এক যুবককে মারধর করে। এসময় সেনা সদস্যরা একই এলাকার মুরুব্বি বিশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা ও পুলকবালা তঞ্চঙ্গ্যার দোকানেও তল্লাশী চালায়।
গত ২৯ এপ্রিল ২০২১ সকাল আনুমানিক ১০:০০ টার দিকে রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার জীবতলী ইউনিয়নের জীবতলী সেনা ক্যাম্পের জনৈক ক্যাপ্টেন ও জীবতলী এস ব্যান্ড ক্যাম্পের কম্যান্ডার রিয়াজ এর নেতৃত্বে ৪০-৫০ জনের একটি সেনাদল দুটি স্পীড বোট ও দুটি ট্রলার বোট যোগে পার্শ্ববর্তী রেংখ্যং বাজারে যায়। এসময় সেনা সদস্যরা বাজার এলাকার তিনটি জুম্মর বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি চালায় এবং জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়।
তল্লাশির শিকার উক্ত বাড়ির মালিকরা হলেন- (১) রাঙাইয়া চাকমা (৩৮), পীং-দিলীপ কুমার চাকমা, ঠিকানা- রেংখ্যং বাজার এলাকা, জীবতলি ইউনিয়ন; (২) দীপক চাকমা (৪৮), পীং-দীনময় চাকমা, ঠিকানা-ঐ ও (৩) বাদল চাকমা (৪৮), পীং-চলাবাপ চাকমা, ঠিকানা-ভাইবোন ছড়া, কাপ্তাই উপজেলা। জানা গেছে, রাঙাইয়া চাকমা জনসংহতি সমিতির জীবতলী ইউনিয়ন কমিটির সহ-সভাপতি। অপরদিকে বাদল চাকমা কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের একজন নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অপরদিকে, গত ২৭ এপ্রিল ২০২১ সকাল আনুমানিক ১০:০০ টার দিকে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অপরাজেয় ৬ এর ধুপশিল সেনা ক্যাম্পের কম্যান্ডার ক্যাপ্টেন মেহেদীর নেতৃত্বে একদল সেনা সদস্য ১নং বিলাইছড়ি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের শালবাগান গ্রামে টহল অভিযান পরিচালনা করে। এসময় সেনাদলটি শালবাগান গ্রামের সুনীল চাকমা (৩৬) নামের এক ব্যক্তিকে জোর করে তাদের সঙ্গে ঘুরতে বাধ্য করে। এরপর সেনা সদস্যরা জুরাছড়ি উপজেলার বরকলক এলাকায় যাওয়ার সময় পথিমধ্যে জুম্ম গ্রামবাসীর কিছু কাঠ আটক করে এবং বরকলক গ্রামের কার্বারি কেরঙ্যা চাকমা (৬৫) ও শালবাগান গ্রামের কার্বারি জদুলাল চাকমাকে জোর করে আটককৃত অবৈধ কাঠসহ ধুপশিল সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এরপর সেনা সদস্যরা উক্ত দুই কার্বারিকে ক্যাম্পে দুই ঘন্টা যাবৎ বসিয়ে রেখে বিলাইছড়ি সেনা জোনে যেতে হবে মর্মে শর্ত দিয়ে ছেড়ে দেয়।
এছাড়া একইদিন সকালের দিকে বিলাইছড়ির আলিখ্যং সেনা ক্যাম্পের কম্যান্ডার সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসারের নেতৃত্বে ৯ জনের একটি সেনাদল আলিখ্যং গোছড়া গ্রামে গিয়ে স্থানীয় কার্বারি জহরলাল চাকমা (৬৫)কে হয়রানিমূলকভাবে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসাবাদ করে হয়রানি করে।