হিল ভয়েস, ২৯ মে ২০২১, বান্দরবান: বান্দরবান পার্বত্য জেলাধীন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার কক্সবাজার ও আরাকানের সীমান্তবর্তী ঘুমধুম ইউনিয়নে ইয়াবা পাচারকারীদের সাথে আরসা ও বিজিবি’র বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আর এই গোলাগুলির মধ্যে পরে গুলিবিদ্ধ হয়ে পথচারী এক জুম্ম গ্রামবাসী নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ২৭ মে ২০২১ বিকেলের দিকে এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। ইয়াবা পাচার নিয়ে পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝির ফলে আরসা ও বিজিবি যৌথভাবে ইয়াবা পাচারকারীদের উপর হামলা করলে এই যুদ্ধের ঘটনা ঘটে বলে খবর পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা পাচার ও ব্যবসা চলে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ইয়াবা পাচার ও ব্যবসার কার্যক্রমে মূল পাচারকারীদের সাথে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে। যদিও কোনো কোনো সময় বিজিবি কর্তৃক অভিযান চালিয়ে ইয়াবা উদ্ধার ও পাচারকারী গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়। কিন্তু এসব অভিযান বিজিবি’র লোকদেখানো এবং ইয়াবা ব্যবসার সাথে নিজেদের সম্পৃক্ততাকে আড়াল করবার কৌশল বলে অনেকের অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ মে ২০২১ বিকাল আনুমানিক ৫:০০ টার দিকে ঘুমধুম ইউনিয়নের রেজু মৌজার পাগলিছড়া নামক জায়গায় ইয়াবা পাচারকারী এবং আরসা ও বিজিবি’র মধ্যে এই বন্দুকযুদ্ধ সংঘটিত হয়।
জানা গেছে, আরসা’র ৫০-৬০ জনের সশস্ত্র দলটি সামনে এবং নিকুঞ্জছড়ি বিজিবি ক্যাম্পের ১০-১২ জনের একদল বিজিবি সদস্য তাদের পিছে পিছে গিয়ে পাচারকারীদের উপর হামলা করে। এসময় উভয়পক্ষের বন্দুকযুদ্ধের মুখে পড়ে কেমং তঞ্চঙ্গ্যা (২৫) নামে এক পথচারী গ্রামবাসী নিহত হয়। কেমং তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী গাছবুনিয়া পাড়া গ্রামে এবং তার পিতার নাম কিনা অং তঞ্চঙ্গ্যা বলে জানা গেছে।
ঘুমধুম এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এলাকাবাসী বলেন, ঘুমধুম ইউনিয়নে ইয়াবা পাচারকারী চক্র, আরসা ও বিজিবি সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা পাচার ও ব্যবসা করে আসছিল। তাদের সকলের মধ্যে বনিবনা বা বোঝাপড়া থাকলে সহজেই ইয়াবা পাচার হয়ে যায়। আবার বোঝাপড়া না থাকলে তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় এবং মাঝে মাঝে বিজিবি কর্তৃক নাটকীয়ভাবে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনাও হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, এইবার সম্ভবত ইয়াবা পাচারকারীরা বিজিবি ও আরসাদের অগোচরে ইয়াবা পাচার করছিল। তাই, এই ঘটনা ঘটেছে।
উল্লেখ্য, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) হচ্ছে মিয়ানমারের আরাকান থেকে আগত রোহিঙ্গাদের একটি সশস্ত্র জঙ্গী সংগঠন। কক্সবাজার ও নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় স্থানীয়ভাবে এই আরসা ‘আলীকান’ হিসেবেও পরিচিত। এই আরসা বা আলীকান নিজেই দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।