মিতুল চাকমা বিশাল
ভূমিকা:
মানুষের উৎস স্থল হিসেবে পরিচিত আফ্রিকা মহাদেশ আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ। বহুজাতি ও বহুসংস্কৃতির এক বৈচিত্র্যমন্ডিত মহাদেশ এটি।
পনের শতকের প্রারম্ভে পর্তুগালের রাজপুত্র হেনরির আগমন ঘটে আফ্রিকা মহাদেশে, ইউরোপের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয় আফ্রিকার। এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন অংশে অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরু থেকেই উপনিবেশ স্থাপন শুরু হলেও আফ্রিকাতে এই প্রক্রিয়া শুরু হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে এসে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মেরুকরণের ফলে একে একে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিতে থাকে ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো। ১৮৮১ সাল থেকে উপনিবেশ স্থাপনের চলমান এই প্রতিযোগিতা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত বলবৎ থাকে, ইতিহাসে যাকে ‘স্ক্র্যাম্বল অভ আফ্রিকা’ নামে অভিহিত করা হয়। ১৮৭০-এর দশকে এটি শুরু হয়ে, ১৮৮০ ও ১৮৯০-এর দশকে এটি চরমে পৌঁছে, এবং ২০ শতকের শুরুর দশকে এর সমাপ্তি ঘটে। আফ্রিকার সাধারণ জনগণ এই উপনিবেশ স্থাপনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেও ইউরোপীয়দের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের কাছে পরাজিত হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী রাজনৈতিক পরিবর্তনকে কাজে লাগিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের আগ পর্যন্ত প্রায় পাঁচশো বছর আফ্রিকাকে বিভিন্নভাবে শোষণ করেছে ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো, অপরদিকে আফ্রিকা সরাসরি ইউরোপের রাজনৈতিক শাসনের অধীনে ছিল প্রায় একশো বছরেরও বেশি সময়।
ঔপনিবেশিকরণের এই খেলায় সর্বাগ্রে ছিল ব্রিটেন। এছাড়াও পর্তুগাল, ফ্রান্স, জার্মানী, বেলজিয়াম ইত্যাদি রাষ্ট্রগুলোও এই ঔপনিবেশিকরণে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল।
ঔপনিবেশিকতার দায় স্বীকার:
গত ২৭ মে ২০২১, বৃহস্পতিবার, রোয়ান্ডায় ১৯৯৪ সালের যে ভয়াবহ জাতিগত দাঙ্গায় কমপক্ষে আট লাখ লোক মারা যায়, সেই গণহত্যার দায় স্বীকার করেছে ফ্রান্স। এমনকি রোয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে গিয়ে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ সেদেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
১৯৯৪ সালে রোয়ান্ডার যে গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, সেখানে কমপক্ষে ৮-১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল- যাদের সিংহভাগই টুটসি জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এই ঘটনায় ফ্রান্সের ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে বলে জানা যায়।
সেসময় টুটসিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিয়োজিত মিলিশিয়া রোয়ান্ডান প্যাট্রিওটিক ফ্রন্টের (আরপিএফ) সাথে জড়িতদের শায়েস্তা করার জন্য হুতু-নেতৃত্বের সরকারকে নানাভাবে সাহায্য করেছে ফ্রান্স। শুধু সরকার নয়, ইন্তারহামওয়ে এবং ইম্পুযামুগাম্বি নামে সরকার সমর্থিত যে দুটো হুতু মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে গণহত্যা চালানোর জন্য দায়ী করা হয় তাদেরকেও অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে সাহায্য করতো ফ্রান্স।
প্রায় ১০০ দিন ধরে চলা ঐ হত্যাকাণ্ডে মানুষজনকে বাড়িতে, উপসনালয়ে ঢুকে হত্যা করা হয়েছে। স্কুলে ঢুকে শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে প্রধান যে অভিযোগ তা হলো এমন একটি জাতিগত রক্তপাতের হুমকি তৈরি হয়েছে তা নিয়ে পরিষ্কার ইঙ্গিত থাকলেও তারা কিছুই করেনি।(সুত্র: বিবিসি)
এছাড়া গত ২৮ মে ২০২১, শুক্রবার, জার্মানিও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নেয় যে, নামিবিয়ায় তাদের ঔপনিবেশিক শাসনের সময় সেখানে গণহত্যা চালানো হয়েছিল। ১৮৯৪ থেকে ১৯১৫ সাল পর্যন্ত নামিবিয়া জার্মানির ঔপনিবেশিক শাসনে ছিল। তখন ঐ দেশের নাম ছিল জার্মান দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা। ১৯০৪ সালে যখন হেরেরো এবং নামা উপজাতি তাদের জমি এবং গবাদিপশু দখলের বিরুদ্ধে, জার্মান ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে, তখনই তাদেরকে ধরে ধরে হত্যা করা হয়। গণহত্যার সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও সে সময় প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল আদিবাসী এই দুই জনগোষ্ঠী। (সুত্র: বিবিসি)
অন্যদিকে আফ্রিকায় গণহত্যা এবং নৃশংসতার জন্য ইউরোপের যে ঔপনিবেশিক শক্তিটি সবচেয়ে বেশি নিন্দিত সেই বেলজিয়াম এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ তো দূরে থাক অপরাধ স্বীকারও করেনি।
বেলজিয়ামের রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ড ১৮৬৫ সালে মধ্য আফ্রিকায় বিশাল একটি এলাকা দখল করে ঔপনিবেশিক শাসন শুরুর পর হত্যা, নির্যাতনে এক কোটি মানুষের জীবন গিয়েছিল।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ও তার প্রাসঙ্গিকতা:
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত এক দশমাংশ অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রাম। জাতিগত ও সংস্কৃতিগত বৈচিত্র্যতায় ভরা অপার সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি এই অঞ্চল। ঐতিহাসিকভাবে এতদঞ্চলের মানুষগুলোর মধ্যে রয়েছে নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক জীবনধারা। ফলশ্রুতিতে দেশের মূল স্রোতধারার বাঙালি জনগোষ্ঠী থেকে এরা সম্পূর্ণ পৃথক এবং স্বতন্ত্রও বটে।
ভারতীয় উপমহাদেশের বিভক্তির সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ অমুসলিম হওয়া সত্ত্বেও এই অঞ্চলকে মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয়। এটি কোন ঐতিহাসিক ভুল ছিল না, ঔপনিবেশিকতার চরম অপরাধ এটি। জাতিগত ও সম্প্রদায়গত বিভক্তি এবং অস্থিতিশীল এক পরিবেশের সৃষ্টি করে দিতেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের এই কাজ।
এছাড়া এটি অবিসংবাদিত এক সত্য যে, ভারতীয় উপমহাদেশে ঔপনিবেশিক নীতির অবসান ঘটলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে সেই নীতির অবসান কখনই ঘটে নি, এমনকি সেই একই নীতি এখনও এক শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরে, এদেশের আপামর জনসাধারণের সাথে সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষগুলো চেয়েছিল নিজেদের স্বতন্ত্রতাকে নিয়ে, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নিয়ে মানুষের মত মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে। তার জন্য জুম্ম জাগরণের অগ্রদূত মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনমানুষদের পক্ষ থেকে স্বায়ত্তশাসনের দাবি নিয়ে ঐতিহাসিক ৪ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছিল বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে। কিন্তু পার্বত্য জনমানুষের সেই ন্যায্য দাবিগুলো তখন উগ্র জাতীয়তাবাদের কাছে উপেক্ষিত ও অসহায় হয়ে যায়।
স্বাধীনতার ৪ বছরের ভেতরে বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করতে পারলেও, নিজেদের রাষ্ট্রের একটি বিশাল অংশের জনমানুষের ভলোবাসাকে অর্জন করতে পারেনি। অন্যদিকে ৭৫ তৎপরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ উল্টে যায় এবং একের পর এক সেনাশাসনে জর্জরিত হতে থাকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ। ফলশ্রুতিতে বিদ্রোহ দমনের নামে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামকে সামরিকায়ন করা হয় এবং দেশের এক-তৃতীয়াংশ সেনাবাহিনীকে এখানে মোতায়েন করা হয়। পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপদ্রূত এলাকা ঘোষণা করে অপারেশন দাবানল জারী করা হয়। পাহাড়িদেরকে অনিরাপদ এবং অনিশ্চিত এক জীবনের দিকে জোর করে ঠেলে দেওয়া হয়। এর দ্বারা এতদঞ্চলের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক জীবনধারাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
বিদ্রোহ দমনের নামে জাতিগত নিধনের অংশ হিসেবে একদিকে যেমন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চলে বহিরাগতদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া, অন্যদিকে এদের লেলিয়ে দিয়ে সেনা সহায়তায় চলে উপর্যুপরি একের পর এক গণহত্যা। যেগুলোর বর্ণনা দিতে গিয়েও গা শিউরে ওঠে। লোমহর্ষক এইসব ঘটনার সুত্রপাত মুক্তিবাহিনীই করেছিল খাগড়াছড়িতে। সেটি স্বাভাবিক দৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা মনে হলেও, এইখানে জাতিগত নির্মূলীকরণের বিষয়টি অত্যন্ত সুনিপুণভবে জড়িত। পরবর্তীতে কাউখালী উপজেলার কলমপতিতে এলাকার মানুষদের জড়ো করে ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেলার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সরাসরি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জুম্ম নিধনের এই হীন কর্মযজ্ঞ।
চুক্তি পূর্ববর্তী ১৯৭১-১৯৯৭, এই ২৬টি বছরে ডজনের অধিক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। কাউখালী থেকে ভূষণছড়া, লোগাঙ থেকে বড়গাঙ, সমস্ত পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাহাড়িদের রক্তে রঞ্জিত করা হয়েছিল। উদ্বাস্তু করা হয়েছিল লক্ষ লক্ষ পাহাড়িকে, শরাণার্থী করেছিলও হাজার হাজার পাহাড়িকে।
চুক্তির পূর্ববর্তী সংঘটিত কাউখালী থেকে সর্বশেষ নানিয়াচর, সর্বমোট ১৩ টি গণহত্যায় প্রায় ৪০০০ এর অধিক পাহাড়িকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও লক্ষাধিক পাহাড়ি পঙ্গুত্ব বরণ করে এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সেটেলার কর্তৃক ধর্ষণের স্বীকার হয় হাজার হাজার পাহাড়ি নারী।
চুক্তির পরবর্তীতে সেনা-সেটেলার সহায়তায় ডজনের অধিক সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত করা হয়, যেগুলোতে হতাহতের সংখ্যা কম হলেও বাড়িঘর পোড়ানো এবং পাহাড়িদের সর্বস্বান্তকরণের হিসেব কষলে এগুলোও গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করা চলে। কারণ এই ঘটনাগুলোর মধ্যেও জাতিগত ও সম্প্রদায়গত নির্মূলীকরণের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে, এই সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবে সমাধানের প্রয়াস হেতু ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের দীর্ঘ ২৪ টি বছর পার হতে চললেও সরকার চুক্তির মৌলিক ধারাগুলোও এখনো বাস্তবায়ন করতে পারে নি। অনুরূপভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত নির্মূলীকরণের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সংঘটিত গণহত্যাসমুহের জন্য সরকার কিংবা রাষ্ট্রীয় বাহিনী থেকেও এখনো সেগুলোর স্বীকৃতি দেওয়া হয় নি এবং তার জন্য ক্ষমাও চাওয়া হয় নি। বরং চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরেও পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন দাবানল এর পরিবর্তে অপারেশন উত্তরণ জারি রেখে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামকে মিলিটারাইজড করে রাখা হয়েছে এবং একধরনের ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবিটি আমরা প্রয়াশই দেখতে পাই। কিন্তু নিজেদের রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ হিসেবে শাসিত পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত গণহত্যাগুলো সম্পর্কে সরকারকে মুখে কুলুপ এটে বসে থাকতে দেখা যায়, যা চূড়ান্তরূপে স্ববিরোধিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
যেগুলো একটি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট স্বাধীন-স্বার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রকৃত চরিত্র হতে পারে না। শাসন-শোষণ আর নিপীড়নের বেড়াজাল ডিঙিয়ে, বৈষম্য আর অসাম্যের কঠিন শৃঙ্খল ছিঁড়ে যে রাষ্ট্রের জন্ম, সেই রাষ্ট্র শোষিত আর নিপীড়িতদের পাশে না দাঁড়িয়ে, শাসক আর নিপীড়কদের পাশে দাঁড়াচ্ছে এবং নিজেই এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
উপসংহার:
গণহত্যা স্বীকার করলে কিংবা গণহত্যার ক্ষতিপূরণ দিলেই উপেক্ষিত কিংবা শোষিত মানুষদের অধিকার ফিরবে, আমরা সে প্রত্যাশা কখনই করি না। ঠিক যেমনটি হেরেরো আদিবাসী গোষ্ঠীর প্রধান ভেকুই রুকোরো, যিনি জার্মানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তিনি বলেন, ঔপনিবেশিক শাসকরা “যে অপূরণীয় সর্বনাশ” তাদের করেছে সেই তুলনায় এই ক্ষতিপূরণ যথেষ্ট নয়।
অন্যদিকে হেরেরো এবং নামা উপজাতির অনেকে আশা করছিলেন নামিবিয়া ও জার্মানির এই চুক্তির পর তাদের পূর্বপুরুষদের জমিজমার মালিকানা তারা ফিরে পাবেন। ক্ষতিপূরণ হিসাবে তাদের হাতে কিছু পয়সা আসবে। কিন্তু তাদের কোনটাই হয় নি। কিন্তু তারপরেও বিশ্বের অন্যতম ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স এবং জার্মানির এহেন পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য বলতে হয়।
অনুরূপভাবে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামের গণহত্যাগুলোর স্বীকার করলে কিংবা ক্ষমা চাইলেই পাহাড়ের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার আদায় হবে না। যতক্ষণ না পাহাড়ের মানুষের প্রাথমিক রাজনৈতিক সনদ পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়িত হচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত এতদঞ্চলের জুম্ম জনগণের ভূমির অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে, যতদিন এই বিজাতীয় শাসন-শোষণের অবসান হচ্ছে না, ততদিন পর্যন্ত পাহাড়িদের প্রকৃত মুক্তির পথে এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব।
একমাত্র আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার অর্জনের মধ্যদিয়েই পাহাড়ের জনমানুষের সামগ্রিক মুক্তি সম্ভব, তার আগে নয়।