হিল ভয়েস, ২০ মে ২০২১, দিনাজপুর: জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেনের নামে মিথ্যা মামলা ও পার্বতীপুর উপজেলার বড়চন্ডীপুর (বারকোনা) গ্রামের নিরেন মার্ডী গংদের পৈত্রিক ভূমি দখলসহ আদিবাসীদের ওপর ধারাবাহিক মিথ্যা মামলা, উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে রাস্তাঘাটে মারপিট ও হত্যার হুমকি’র প্রতিবাদে দিনাজপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে দোষীদের শাস্তি প্রদান এবং আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা নিরসনে স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠনের দাবিসম্বলিত পাঁচ দফা দাবিও জানানো হয়েছে।
গতকাল ১৯ মে ২০২১ দুপুর ১২:৩০ টায় জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, দিনাজপুর জেলা কমিটি কর্তৃক দিনাজপুর প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে পঠিত বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১২ অক্টোবর ২০২০ তারিখ হইতেমৌলভী মো: মাহাবুবুর রহমান (৫৫) গং আদিবাসীদের বসতবাড়ী ও ভোগদখলকৃত জমি অন্যায়ভাবে দখলের উদ্দেশে আদিবাসীদের মিথ্যা মামলায় হয়রানি করার জন্য এ পর্যন্ত মোট ৩টি কেস দিনাজপুর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত, দিনাজপুর-এ ফাইল করেন, মামলা নং- ২৩৮/২০২০, তারিখ-১২/১০/২০২০(চলমান), মামলা নং-২১৬ (পি)/২০২০, তারিখ-১৯/১০/২০২০(খারিজ), মামলা নং-সি.আর ১০৯/২০২১, তারিখ-৫/৫/২০২১(চলমান)। অন্যদিকে, নিরেন মার্ডীর বড় ভাই রিস্কো মার্ডী (৬৬) বিগত ২৭/৪/২০২১ তারিখে পার্বতীপুর থানায় তার ছোট ছেলে রেফায়েল মার্ডী (২২)-কে রাস্তায় একা পেয়ে মারপিটের বিরুদ্ধে মৌলভী মো: মাহাবুর রহমান (৫৫) সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে পার্বতীপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ৩৮/১৪৩, তারিখ- ২৭/০৪/২০২১ (চলমান)।
বিবৃতিতে সমস্যার বিবরণ তুলে ধরে আরও বলা হয়, নিরেন মার্ডী গং বংশানুক্রমিক শত বছরেরও বেশি সময় ধরে পার্বতীপুরের ৫নং চন্ডিপুর ইউনিয়নের বারোকনা গ্রামে বাস করে আসছেন। গ্রামটি এক সময় আদিবাসী অধ্যুষিত হলেও স্বাধীনতার পর ক্রমশ অ-আদিবাসীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। অভিযুক্ত মৌলভী মো: মাহাবুবুর রহমান (৫৫) গং, পিতা: মৃত. আব্দুল জব্বার এর আসল বাড়ী একই ইউনিয়নের বড়চন্ডিপুর (ডাঙ্গা) হলেও বিগত ২০১৪ সালের পরে বারোকনা আদিবাসী গ্রামের মৃত: ভাইয়া বেসরার গংদের জমিজমা জালিয়াতি করে বসতবাড়ি, দোকানপাট ও মসজিদ নির্মান করে বসতি গড়েন। এরপর থেকেই নানাভাবে নিরেন মার্ডী গং এর জমি দখলের চেষ্টা করতে থাকেন। নিরেন মার্ডী ও তার ভাইদের পৈতৃক ০১ একর ২৫ শতক। উক্ত জমিতে বর্তমানে ৮টি পরিবারের বসতভিটা ও কৃষিজমি ভোগদখলে রয়েছে। অভিযুক্ত মৌলভী মো: মাহাবুবুর রহমান (৫৫) গং এর দৃষ্টি প্রথমে নিরেন মার্ডী গং এর ৯৫ শতক কৃষিজমি ও বসতবাড়ীর উপর পড়ে এবং বিভিন্ন কৌশলে দখলের পাঁয়তারা শুরু করেন।
চতুর ভূমিগ্রাসী মৌলভী মো: মাহাবুবুর স্থানীয় ভূমি অফিসের কর্মচারীদের সহায়তায় জানতে পারেন, ১৯৮০-৮১ সালে নিরেন মার্ডী গং’দের এস.এ. রেকর্ডীয় ও ভোগদখলীয় সম্পত্তির সর্বমোট ০১ একর ২৫ শতকের- মধ্যে ০.৯৫ শতক (তফশীল: জেলা-দিনাজপুর, উপজেলা-পার্বতীপুর, মৌজা-বড় চন্ডিপুর, জেএল নং-৪৪, খতিয়ান নং-৬৯৯, ৮৭৬, দাগ নং-২০৫৯, ২০৬২, পরিমাণ-০.৬০ শতাংশ, ০.৩৫ শতাংশ) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন নং ৩১.০০.০০০০.০৪০.৫৩.০০৫.২০১২-২২০- অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১ (সংশোধিত ২০১১) এর ৯ ধারায় দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার বড়চন্ডিপুর মৌজায় (জে. এল নং-৪৪) অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ‘ক’ তফশীলে- মৃত: শুকি মাডী, পিতা: ল্যাডা মার্ডী, সাং: বড় চন্ডিপুর (বারোকনা) এর নামে অর্ন্তভূক্ত হয়েছে। উল্লেখ্য, মৃত: শুকি মার্ডীর বর্তমান প্রজন্মই নিরেন মার্ডী গং। নিরেন মার্ডী গং এর বেশিরভাগ শরিক’ই মূলত নিরীহ ও নিরক্ষর আদিবাসী। তারা ভূমি বিষয়ে বলতে গেলে অজ্ঞ। নিয়মিত খাজনা প্রদান ও জমি খারিজের বিষয়ে তাদের জ্ঞান নেই বললেই চলে।
এই সুযোগটিই গ্রহণ করে চতুর ভূমিগ্রাসী মৌলভী মো: মাহাবুবুর রহমান (৫৫)- সরকার বাহাদুরকে ভুল বুঝিয়ে মোট ০.৯৫ শতাংশ জমি লীজ গ্রহন করেন (বাংলা সন ১৩৮৮-১৪২৩ পর্যন্ত)। পরবর্তীতে নিরেন মার্ডি গং জমি-জমার এই মারপ্যঁচ বুঝতে পেরে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর ২৮/৭/২০২০ তারিখে এবং দিনাজপুর জেলা প্রশাসক বরাবর ২০/০৯/২০২০ ইং তারিখে, মৌলভী মো: মাহাবুবুর রহমানের উক্ত লীজ- ভিপি ০১ (এল) ৮০-৮১ নং লীজ নবায়নের নথি বাতিলের আবেদন করেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পার্বতীপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি)-কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। যার অফিস আদেশের স্মারক নং- ০৫.৫৫.২৭০০.০২৮.০৫.০৩.২০-৬৭৪।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় তৎকালীন পার্বতীপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহাঙ্গীর আলম জেলা প্রশাসকের উক্ত অফিস আদেশ অমান্য করিয়া এবং পক্ষপাতমূলক সরেজমিন তদন্ত পূর্বক পুনরায় মৌলভী মো: মাহাবুবুর রহমান (৫৫)-কে সেই ০.৯৫ শতাংশ জমি লীজ প্রদান করেন (বাংলা সন ১৪২৭ পর্যন্ত)। উল্লেখ্য, এসি ল্যান্ড সরেজমিন তদন্ত সঠিকভাবে করলে দেখতে পেত সেই জমির ভোগ দখল বংশ পরম্পরায় নিরেন মার্ডী গং যুগ যুগ ধরেই করে আসছে। এবং লীজকৃত ০.৯৫ শতাংশের একাংশে নিরেন মার্ডীর বাড়ীসহ আরো ৪জন বিধাব মহিলার বসতবাড়ী রয়েছে যাহারা সকলেই ভূমিহীন। এবং ০.৯৫ শতাংশের মধ্যে (তফশীল: জেলা-দিনাজপুর, উপজেলা-পার্বতীপুর, মৌজা-বড় চন্ডিপুর, জেএল নং-৪৪, খতিয়ান নং-৮৭৬, দাগ নং-২০৬২, পরিমাণ-০.৩৫ শতাংশ) ভিপি তালিকার মধ্যে নেই। তথাপিও এই ০.৩৫ শতাংশ। জমি মৌলভী মো: মাহাবুবুর রহমান’কে লীজ প্রদান করা হয়েছে। সহকারী কমিশনার ভূমি লিজ প্রদানের কি আদেশ দিয়েছেন তার আদেশের জাবেদা নকল ১১/০২/২০২১ তারিখে আবেদন করলেও আদেশের নকল দেয়া যাবে না বলে অফিস থেকে জানায়।
আরো প্রকাশ থাকে যে, মৌলভী মো: মাহাবুবুর রহমান গোপনীয় ভাবে নিরেন মার্ডী গং এর ০.৯৫ শতক (তফশীল: জেলা-দিনাজপুর, উপজেলা-পার্বতীপুর, মৌজা-বড় চন্ডিপুর, জেএল নং-৪৪, খতিয়ান নং-৬৯৯, ৮৭৬, দাগ নং-২০৫৯, ২০৬২, পরিমাণ-০.৬০ শতাংশ, ০.৩৫ শতাংশ) জমি যাহা ইতিমধ্যে ভিপি ০১ (এল) ৮০-৮১ অর্ন্তভূক্ত হয়েছে সেটা বাংলাদেশ সেটেলমেন্ট জরিপে নিজের নামে খতিয়ানভুক্ত করেছে।
উল্লেখ্য, নিরেন মার্ডী গং তাদের এস.এ রেকর্ডীয় জমি মালিকের ওয়ারিশ হিসেবে যুগ যুগ ধরে ভোগদখল করিয়া আসিতেছে। মৌলভী মো: মাহাবুবুর রহমান উক্ত জমি ইতিপূর্বে গোপনে লীজ গ্রহন করলেও বাস্তবে কখনও ভোগদখল করতে পারেনি। মৌলভী মো: মাহাবুবুর রহমানের পক্ষে জমির দখল কখনও ছিল না বা বর্তমানেও নাই। লীজ গ্রহন করবার পর থেকেই মো: মাহাবুবুর রহমান নিরেন মার্ডী গং কে উক্ত জমি ছেড়ে দেবার জন্য বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি ও সন্ত্রাসী কায়দায় হুমকী প্রদর্শন করিয়া আসিতেছে। কিন্তু নিরেন মার্ডী গং তাদের পৈতৃক সম্পত্তিতে অব্যাহত চাষাবাদ করিয়া আসিতেছেন এবং বর্তমানেও বোরো ধানের আবাদ করে ঘরে তুলেছেন। অপরদিকে মো: মাহাবুবুর রহমান জমি জবর-দখল না করতে পারায় ক্ষিপ্ত হইয়া দিনাজপুর জেলা আদালতে নিরেন মার্ডী সহ মোট ১৪ জনকে আসামী করে বে-আইনিভাবে ধান কাটার অভিযোগে, ধারা- ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩৫৪/৩৭৯/৫০৬ (২)/১১৪ মতে মামলা করেন। মামলা নং- সি.আর-২৩৮/১০, তারিখ ১২/১০/২০২০। মামলাটি বর্তমানে আদালতে চলমান রয়েছে।
অতঃপর, আবারও ভূমিগ্রাসী মো: মাহাবুর রহমান গং আদিবাসীদেরকে হয়রানি করবার জন্য নিরেন মার্ডীকে প্রধান করে মোট ১৪ জনের নামে ফৌজদারী কার্য্যবিধি আইনের ১০৭/১১৪/১১৭(৩) ধারা মতে গুরুতর শাস্তি ভঙ্গের আশংকায় আদালতে মামলা করেন। মামলা নং- ২১৬ ‘পি’/২০২০, তারিখ: ১৯/১০/২০২০। বিগত ২৫/১১/২০২০ ইং তারিখে নিরেন মার্ডী গং আদালতে হাজিরা দিলে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি পর্যবেক্ষণ করে বাদী মো: মাহাবুবুর রহমানের অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় বিজ্ঞ বিচারক এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট যে রায় লিখেন তা হল-
“প্রার্থী (মাহাবুর রহমান) ও ১ নং প্রতিপক্ষ (নিরেন মার্ডী) হাজির। উভয় পক্ষকে শুনলাম। প্রতিপক্ষের দাখিলকৃত জবাব পর্যালোচনা করা হল। প্রতিপক্ষের দাখিলকৃত জবাব সন্তোষজনক। জবাবকে অঙ্গীকার হিসেবে নিয়ে প্রতিপক্ষের অব্যাহতি দিয়ে মামলা নথিজাত করা হল।”
উক্ত রায়ে হেরে গিয়ে ভূমিদুস্যূ মো: মাহাবুবুর রহমান সহ ৭জন মিলে বিগত ২৬/০৪/২০২১ তারিখ আনুমানিক ০৯.৩০ ঘটিকায় নিরেন মার্ডীর ভাতিজা রেফায়েল মার্ডীকে রাস্তা দিয়ে যাবার সময় তাদের বাড়ীর পাশে একা পেয়ে লাঠিসোটা, লোহার রড ও সাবল দিয়ে এলোপাতারী মারপিট করিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থান জখম করে। রেফায়েল মার্ডীকে বাঁচাতে গিয়ে তাঁর বৌদি শিউলী মার্ডী ও নিরেন মার্ডীর কন্য ইভা মার্ডী’ও মারাত্বক জখম হন। তখন আদিবাসীরা জখম প্রাপ্তদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করতে নিয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা লাঠি, সোটা, রড ও রামদা নিয়ে বারোকনা কারেন্টের হাটের রাস্তা অবরোধ করে রাখে। এই অবস্থায় আদিবাসীরা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ প্রহরায় জখম প্রাপ্তদের পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়।
পরবর্তীতে এ ঘটনায় রেফায়েল মার্ডীর পিতা রিস্কো মার্ডী (৬৬) বাদী হয়ে মো: মাহাবুবুর রহমান (৫০) সহ ৭জন জ্ঞাত ও আরো অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনকে আসামী করে পার্বতীপুর থানায় মামলা করেন। যার মামলা নং- ৩৮/১৪৩, তারিখ: ২৭/০৪/২০২১। ভূমিগ্রাসী মো: মাহাবুবুর রহমান নিজে একজন এক সময়ে মাদ্রাসা শিক্ষক হলেও সে, চুতুর স্বার্থবাদী, পরধন-লোভী, জাতি-বিদ্বেষী ও মারাত্বক দূস্যু প্রকৃতির লোক তা সহজেই অনুমেয়। কারন এ ঘটনার পর বিগত ২৭/০৪/২০২১ তারিখে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের দিয়ে আবারো রিস্কো মার্ডীর বড় ছেলে মারসেল মার্ডীকে হাসপাতালে রোগিদের খাবার দিয়ে বাড়ী ফেরার পথে তিলাই নদীর ব্রিজের কাছে একা পেয়ে অজ্ঞাত ৫জন অপরিচিত সন্ত্রাসী দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেন। মারসেল মার্ডী এ যাত্রায় পথের ভ্যানচালক ও যাত্রীদের সহায়তায় আক্রমণ থেকে রক্ষা পান। এ ব্যাপারে রিস্কো মার্ডী থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে এজাহারটি তার আগের মামলা নং- ৩৮/১৪৩, তারিখ: ২৭/০৪/২০২১-এর সাথে নথিভূক্ত করে তদন্ত করবার আশ্বাস দেন পার্বতীপুর থানা প্রশাসন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জাতিবিদ্বেষী ও ভূমিগ্রাসী মো: মাহাবুবুর রহমান কোনভাবেই উক্ত জমিটি দখলে আনতে না পারায় বারংবার নিরেন মার্ডী গংকে নিজেদের লাগানো বোরো ধান কাটার সময়ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীবাহিনী দ্বারা বাধা প্রদানের চেষ্ঠা করেছিল। এবং বিভিন্ন সময় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের দিয়ে জমি জবর দখলের চেষ্ঠা চালিয়ে নিরেন মার্ডী গং কর্তৃক বাধার মুখে ব্যর্থ হন। এ জন্য প্রচন্ড রাগের বশবর্তী হয়ে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আমলী আদালত, দিনাজপুর-এ বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী বর্তমানে ‘কাপেং ফাউন্ডেশনের’ চেয়ারপারসন ও সমতল আদিবাসীদের দাবি আদায়ের সবচেয়ে বড় সংগঠন, ‘জাতীয় আদিবাসী পরিষদ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন কে (১) নং আসামী করে ২২ জনের বিরুদ্ধে আবারও আদালতে ধান কাটার অভিযোগে মিথ্যা মামলা করেন। মামলা নং- সি.আর ১০৯/২১, তারিখ: ৫/৫/২০২১। উল্লেখ্য, মহামান্য বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত (৫), দিনাজপুর মামলাটিকে এফ.আই.আর (ঋওজ) করে পরিচালনার জন্য থানাকে আদেশ দিয়েছে। মামলাটির দন্ডবিধিতে- ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩২৪/৩৫৪/৩৭৯/৫০৬ (২)/১১৪ ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বিশিষ্ট আদিবাসী নেতা রবীন্দ্রনাথ সরেন সহ অন্যান্য নিরপরাধ আদিবাসীরা আজ গ্রেপ্তারের আতঙ্কে রয়েছেন। পুলিশ প্রশাসন যে কোন সময় ধড়-পাকড় শুরু করতে পারেন। এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তি হওয়ায় মানবাধিকার কর্মী রবীন্দ্রনাথ সরেন আদিবাসী ও বাঙালি সমাজে একজন সম্মানীয় ব্যাক্তি।
অথচ রবীন্দ্রনাথ সরেনে’র মত একজন দেশ-বিদেশে পরিচিত মানবাধিকার কর্মীকেও আজ ভূমি দূস্যূদের কাছে হেনস্তার স্বীকার হতে হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ সরেন শুধু দেশের আদিবাসীদের কাছে নয় বরং আর্ন্তজাতিক ভাবে আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে কথা বলেন। জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক বিশেষ সেল, ‘ইউনাইটেড নেশন পারমানেন্ট ফোরাম অন ইন্ডিজিনাস পিপলস অধিবেশনে’ দু’দুবার বাংলাদেশের আদিবাসীদের প্রতিনিধি ছিলেন। সেই সাথে আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাসের টেকনোক্রেট সদস্য। এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ‘আদিবাসী বিষয়ক সেলের’ একজন সদস্য ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ সভাপতি।
উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথ সরেনের ছেলে মানিক সরেন’কেও মামলার (১৪) নং আসামী করা হয়েছে। অথচ মানিক সরেনও এ বিষয়ের মধ্যে কখনও জড়িত ছিল না। বর্তমানে সে কর্মসূত্রে জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে থাকেন। কোন ধরনের ঘটনার দিনই সে উপস্থিত ছিল না। মানিক সরেনও একজন মানবাধিকার কর্মী ও ‘জাতীয় আদিবাসী পরিষদ’ কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের নিকট নিম্নোক্ত পাঁচটি দাবি তুলে ধরা হয়-
১. মৌলভী মো: মাহাবুবুর রহমান (৫৫) গং এর গোপনীয় লীজ ভিপি-০১(এল)/১৯৮০-৮১ বাতিলসহ নবায়নের নথি বাতিলের আবেদন এবং আদিবাসীদের জমি দখলের চেষ্টায় মাহাবুবুর রহমান গংদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে;
২. নিরেন মার্ডী গং এর পৈতৃক সম্পত্তির মালিকানা সত্ব অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইনের মাধ্যমে ভিপি অর্ন্তভূক্তি থেকে অবমুক্ত করতে হবে;
৩. মানবাধিকার কর্মী রবীন্দ্রনাথ সরেনের পরিবার সহ আদিবাসীদের সকল প্রকার হয়রানি থেকে অবিলম্বে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে;
৪. সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সংকট নিরসনে পৃথক ও স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে;
৫. দীর্ঘকাল ধরে সরকারী খাস জমিতে বসবাসরত এবং চাষাবাদের জমি আদিবাসীদের নামে বন্দোবস্ত দিতে হবে।