হিল ভয়েস, ১০ এপ্রিল ২০২১, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটির জেলা শহরে রাণী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার জেনারেল ইলেকট্রিকেল ট্রেডের ইন্সট্রাক্টর কামরুল হাসান কর্তৃক ১০ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক জুম্ম শিক্ষার্থীকে (১৬) ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ ১০ এপ্রিল ২০২১, শনিবার সকাল ১০:০০ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীর সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণের চেষ্টাকারী শিক্ষক কামরুল হাসান ফোন করে ছাত্রীটিকে টিউশনির বকেয়া টাকা তার বাসায় এসে পরিশোধ করার জন্য চাপ দেন। শিক্ষক কামরুল হাসানের চাপে অতিষ্ঠ ছাত্রী টিউশনির বকেয়া টাকা দেয়ার জন্য আজ সকাল ১০:০০ টার দিকে কে কে রায় সড়কের শিক্ষকের ভাড়ায় থাকা বাড়িতে আসে। টিউশনির টাকা শিক্ষকের হাতে দিয়ে চলে যেতে চাইলে শিক্ষক কামরুল হাসান ভুক্তভোগী ছাত্রীকে চা/ নাস্তা খেয়ে যেতে বলে অথবা নিজ হাতে বানিয়ে খেতে বলে। ছাত্রীটি অবস্থা বুঝতে পেরে ‘সময় নেই স্যার, বাড়িতে যেতে হবে’ বলে যেতে চাইলে একপর্যায়ে ওই শিক্ষক ছাত্রীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এসময় ছাত্রীটি শিক্ষকের সাথে ধস্তাধস্তি করার এক পর্যায়ে শিক্ষকের হাতের আঙুলে কামড় দিলে শিক্ষকটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এতে ছাত্রীটি কোন রকমে নিজেকে রক্ষা করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। যাওয়ার সময় শিক্ষক ছাত্রীটিকে কাউকে না জানানোর জন্য অনুরোধ জানায়। আর জানালে ছাত্রীটির সমস্যা হবে বলেও শিক্ষক হুমকি দেন। এরপর মেয়েটি ঘটনাটির বিষয়ে তার দাদাকে ফোনে জানায়।
এ ঘটনায় মেয়েটির দাদা শিক্ষক কামরুল হাসানের বাসার মালিক বিএম ইন্সটিটিউটের সাবেক অধ্যক্ষ মাহমুদুন নবী খানের কাছে এসে ন্যায়বিচারের দাবি জানান। ঘটনার বিস্তারিত জেনে মাহমুদুন নবী খান উল্টো চেপে যাওয়ার জন্য ভুক্তভোগীকে চাপ দেন। পক্ষপাতমূলক রায় মেনে না নিয়ে ভুক্তভোগীর দাদা ৮ নং পৌর কাউন্সিলর কালায়ন চাকমা ও মহিলা ওর্য়াড কাউন্সিলরের নিকট ন্যায় বিচার চান। তারপর বিকাল ৫:৩০ টায় ধর্ষণের চেষ্টাকারী শিক্ষক কামরুল হাসানের অনুপস্থিতিতে রাণী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রণতোষ মল্লিক, ৮নং পৌর কাউন্সিলর কালায়ন চাকমা ও মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে এক সালিশ আয়োজন করা হয়। সালিশে কাউন্সিলর কালায়ন চাকমা ও মহিলা ওর্য়াড কাউন্সিলর নিজেদের মতামত জানান যে, ভুক্তভোগী আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে তারা সহযোগিতা করার আশ^াস দেন।
এরপর সালিশ শেষে সবাই চলে যাওয়ার পর রাণী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রণতোষ মল্লিক ভুক্তভোগীকে সাথে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টাকারী শিক্ষকের ভাড়া করে থাকা বাসায় চলে যান। সেখানে প্রধান শিক্ষক রণতোষ মল্লিক বিষয়টি যেহেতু স্কুল প্রাঙ্গনে ঘটেনি তাই তিনি শিক্ষককে শাস্তি দিতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেয়। পরে শিক্ষক কামরুল হাসান নিজেই ভুক্তভোগী ছাত্রীর উপস্থিতিতে প্রধান শিক্ষকের সামনে ঘটনার সত্যতার কথা স্বীকার করে নেন। তারপর প্রধান শিক্ষক রণতোষ মল্লিক ধর্ষণের চেষ্টা ঘটনাটিকে স্কুলের অভ্যন্তরীণ ঘটনা দাবি করে বাড়াবাড়ি না করে চুপটি মেরে থাকার জন্য ছাত্রীর উপর চাপ দেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রী হিল ভয়েস প্রতিনিধিকে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় টিউশনির টাকা সঠিক সময়ে দিতে পারিনি। তার জন্য লম্পট শিক্ষক আমাকে কলের উপর কল দিয়ে চাপ দেয়। আজ সকালে টাকা দিতে গেলে আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। আমি শিক্ষক নামধারী এ লম্পটের শাস্তি চাই। যাতে করে কোন ছাত্রী আমার মতন শ্লীলতাহানির ঘটনার শিকার না হয়।
ভুক্তভোগীর দাদা পূর্ণ জ্যোতি চাকমা বলেন, আমরা আগামীকালের মধ্যে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দিব। তিনি শিক্ষক কামরুল হাসানের শাস্তি দাবি করেন।
ছাত্রীটিকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপতি ম্রানু মারমা বলেন, এ রকম ঘটনায় শিক্ষকদের উপর থেকে ছাত্রীদের বিশ^াস উঠে যাচ্ছে। ছাত্রীর সাথে যেটা হয়েছে সেটা খুবই অন্যায়। তিনি অবিলম্বে ধর্ষণের চেষ্টাকারী শিক্ষক কামরুল হাসানকে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান।