হিল ভয়েস, ২৪ এপ্রিল ২০২১, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন বাঘাইছড়ি উপজেলার আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল সেটেলার বাঙালি পার্শ্ববর্তী সার্বোয়াতলী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পেরাছড়া নামক জুম্ম গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। হামলায় ৩ জুম্ম আহত এবং ১টি দোকান ও ১টি বৌদ্ধ বিহার ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল ২০২১ শনিবার বিকাল আনুমানিক ৩:০০টা-৪:০০টার মধ্যে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘটনাস্থলসহ আশেপাশের এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল আনুমানিক ৯:০০ টার দিকে আমতলী এলাকার সেটেলার বাঙালি মো: রব মিয়া পার্শ্ববর্তী সার্বোয়াতলীর পেরাছড়া গ্রামে কালাচোখা চাকমার ধান্য জমিতে গরু চরাতে যায় এবং গরুগুলো কালাচোখার ধানক্ষেত নষ্ট করে দেয়। এসময় কালাচোখা চাকমা তা দেখতে পেয়ে মো: রব মিয়াকে তার সেই ধান্য জমিতে আর গরু না চরাতে বলে। এতে মো: রব মিয়া অসন্তুষ্ট হয় এবং কালাচোখাকে উল্টো অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। ফলে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে মো: রব মিয়া কালাচোখা চাকমাকে দেখে নেবে বলে হুমকি দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। আরও জানা গেছে, মো: রব মিয়া প্রায় সময়ই পেরাছড়া গ্রামের কালাচোখা চাকমার ধানক্ষেতসহ আশেপাশে গরু চরাতে যেত এবং গরুগুলো সব সময়ই কালাচোখার ধান ক্ষেত নষ্ট করে দিত। এছাড়া, অনেক সময় পথে জুম্ম নারীদের নানাভাবে উত্যক্ত ও অশালীন আচরণ করত।
উল্লেখ্য যে, আজ সকালে উক্ত ঘটনার পর মো: রব মিয়া নিজ গ্রামে ফিরে যায় এবং বিষয়টি আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীকে জানায়।
এরপর আজ বিকাল ৩:০০ টার দিকে আমতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর নেতৃত্বে জীপ গাড়ি যোগে লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ২০-২৫ জন সেটেলার বাঙালি কোনো বিচার-বিবেচনা ব্যতিরেকে জুম্ম অধ্যুষিত পেরাছড়া গ্রামে গিয়ে হামলা শুরু করে।
হামলায় পেরাছড়া গ্রামের ৩ আদিবাসী জুম্ম আহত হন। আহতরা হলেন- (১) তুষার বিন্দু চাকমা (৪৫), পীং-মতিলাল চাকমা; (২) শান্ত চাকমা (২৩), পীং-মৃত রমেশ চাকমা; (৩) পূর্ণচন্দ্র চাকমা (৫৫), পীং-জয় সিং চাকমা। এখানে তুষার বিন্দু চাকমা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের একজন নির্বাচিত ওয়ার্ড মেম্বার বলে জানা গেছে।
এসময় সেটেলার বাঙালিরা পূর্ণচন্দ্র চাকমার দোকানে হামলা চালায় এবং দোকানের টাকা ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এরপর হামলাকারীরা ‘নব করুণাপুর বনবিহার’ নামে গ্রামের বৌদ্ধ বিহারে হামলা চালায়। বিহারেও তারা ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এসময় বাঁচার তাগিদে বিহারের বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ চুলাকাল ভিক্ষু অন্যত্র পালিয়ে যান।
জানা গেছে, এক পর্যায়ে জুম্ম গ্রামবাসীরাও প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। অপরদিকে প্রায় ঘন্টাখানেক হামলা চালানোর পর চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীর নেতৃত্বে সেটেলাররা আমতলীতে ফিরে যায়।
স্থানীয় এক জুম্ম মুরুব্বি জানান, চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী চরম সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন এবং সে নিজেই হামলায় অংশগ্রহণ করে। কয়েকজন বাঙালি চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীকে বিরত করতে চাইলেও সে নিজেই হামলায় উস্কানি দেয়। চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী বাঘাইছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্বেও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ঘটনার এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে একদল বিজিবি সদস্য ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু তারা সেখানে অবস্থান করলেও এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা কোনো সমাধান দিতে পারেনি বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গ্রামবাসী জানান, বিজিবি সদস্যরা নাকি উল্টো মাঝে মাঝে তাদের দিকে বন্দুক তাক করে ভয় দেখান।
এলাকা পরিস্থিতি এখনো থমথমে অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
কয়েকজন গ্রামবাসী অবিলম্বে চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরীসহ অন্যান্য হামলাকারীদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট দাবি জানিয়েছেন।