হিল ভয়েস, ১ এপ্রিল ২০২১, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বন্দুকভাঙা ইউনিয়ন, লংগদু উপজেলার লংগদু ইউনিয়ন ও বরকল উপজেলার সুভলং ইউনিয়নে জুম্মদের গ্রামে গ্রামে সংস্কাপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে সেনবাহিনীর অভিযান ও বাড়িতে তল্লাশি চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে এলাকার জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে একই জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার কেংড়াছড়ি ইউনিয়নে সেনাবাহিনী তাদের ক্যাম্পে তিন গ্রামের জুম্ম গ্রামবাসীদের বিনাপারিশ্রমিকে কাজ করতে বাধ্য করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ৩১ মার্চ ২০২১ হতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একাধিক দল পাশাপাশি অবস্থিত রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বন্দুকভাঙা ইউনিয়ন, লংগদু উপজেলার লংগদু ইউনিয়ন ও বরকল উপজেলার সুভলং ইউনিয়নে সামরিক অভিযান শুরু করেছে। এসময় সেনাদলের সাথে সংস্কাপন্থী ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সশস্ত্র সদস্যদেরও দেখা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, রাঙ্গামাটি সদর সেনা জোন, নানিয়ারচর সেনা জোন, সুভলং সেনা ক্যাম্প ও বামে লংগদু সেনা ক্যাম্প যৌথভাবে এই অভিযানে অংশগ্রহণ করেছে। বর্তমানে বন্দুকভাঙা ইউনিয়নের করল্যে মুড়ো এলাকায় একটি, দুর খাইয়া এলাকায় একটি, মাচ্ছে পাড়া এলাকায় একটি এবং কুড়োমারা এলাকায় একটি সেনাদল অবস্থান করছে। এই এলাকায় সেনা অভিযানে সেনাবাহিনীর সাথে সন্ত্রাসীদের কম্যান্ডার প্রবেশ চাকমা ও রূপায়ন চাকমা রয়েছে বলে জানা গেছে।
সুভলং ইউনিয়নে রূপবান এলাকায় একটি এবং শিলছড়ি এলাকায় একটি সেনাদল রয়েছে। তাদের সাথে সন্ত্রাসীদের সদস্য সুখময় চাকমা রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া লংগদু ইউনিয়নের রাধামন বাজার এলাকায় একটি এবং বড় কাট্টলি এলাকায় একটি সেনাদল রয়েছে।
আরও জানা গেছে, গতকাল ৩১ মার্চ ২০২১ দুপুর আনুমানিক ১:৩০ টার দিকে অভিযানের সময় সেনাবাহিনী সুবলং ইউনিয়নের রূপবান এলাকায় দুটি জুম্ম গ্রামবাসীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। তল্লাশির শিকার বাড়ির মালিকরা হলেন- (১) বিশারদ চাকমা (৫০), পীং-জামানী রঞ্জন চাকমা ও (২) প্রিয় রঞ্জন চাকমা বাধিচান (৪৬), পীং-যুগিলাল চাকমা।
জানা গেছে, আগামী ৩ এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অপরদিকে, বিলাইছড়ি সেনা জোনের অপরাজেয় ৬ বেঙ্গল এর সেনাবাহিনী তাদের মেরাংছড়ি সেনা ছাউনিতে কেংড়াছড়ি ইউনিয়নের তিন গ্রামবাসীকে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে বাধ্য করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, সেনাবাহিনী গতকাল ৩১ মার্চ ২০২১ নারাইছড়ি উপর পাড়া গ্রামের কার্বারি প্রতিময় কার্বারি, বেগেনাছড়ি গ্রামের কার্বারি সুবর্ণ কার্বারি ও কামদেব কার্বারিকে তাদের প্রত্যেক গ্রাম থেকে ১৪ জন করে লোক আনিয়ে মেরাংছড়া সেনাছাউনিতে কাজ করতে বাধ্য করে। এর পূর্বে গত ৩০ মার্চ ২০২১ সাপছড়ি গ্রামের শান্তিময় কার্বারিকে ১৪ জন গ্রামবাসী নিয়ে এবং ২৯ মার্চ ২০২১ মেরাংছড়া গ্রামের মা অং কার্বারিকে ১৪ জন গ্রামবাসীকে নিয়ে একই সেনাছাউনিতে কাজ করতে বাধ্য করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি সেনাবাহিনীর এই বাধ্যতামূলক কাজকে পার্বত্য চট্টগ্রামের আধুনিক ‘দাসপ্রথা’ বলে অভিহিত করছেন। উল্লেখ্য, নির্যাতন-নিপীড়নের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায়ই জুম্ম জনগণের সাথে এমন অমানবিক আচরণের অভিযোগ ওঠে।