বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ধর্মীয় বৈষম্য অবসানের আবেদন জানিয়েছে ঐক্য পরিষদ

হিল ভয়েস, ২১ মার্চ ২০২১, ঢাকা: বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ গণতন্ত্রের স্বার্থে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বিরাজিত ধর্মীয় বৈষম্যের অবসান করার আবেদন জানিয়ে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নিকট স্মারকলিপি দিয়েছে। স্মারকলিপিতে সংসদ অধিবেশনের শুরুতে এবং প্রতিটি কার্যদিবসে সকল ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ থেকে পাঠের ব্যবস্থার পাশাপাশি সব ধর্মাবলম্বী বিশিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যুতে রীতি অনুযায়ী শোক ও প্রার্থনার উদ্যোগ গ্রহণের আবেদন জানানো হয়।

গত ১৮ মার্চ ২০২১ বিকাল ৩:০০ টার দিকে স্পীকারের নিকট পেশকৃত এই স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও সাবেক এমপি ঊষাতন তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্মল রোজারিও। স্পীকারের বরাবরে স্মারকলিপি প্রদানের সময় ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিদলে ছিলেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ এবং শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক প্রাণতোষ আচার্য শিবু।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ‘প্রথম জাতীয় সংসদের মেয়াদ ছিল ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ এবং এ মেয়াদে মোট ৮টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় অধিবেশনে শুধু প্রথম দিনে পবিত্র কোরান, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠ করা হয়। এরপর তৃতীয় অধিবেশন থেকে অষ্টম অধিবেশন পর্যন্ত শুধু প্রথম দিনে পবিত্র কোরান ও গীতা পাঠ করা হয়। এ ছাড়া অধিবেশনের অন্য কোন কার্যদিবসের শুরুতে একমাত্র কোন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয় নি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রথম ও দ্বিতীয় অধিবেশনে বিজ্ঞ সাংসদদের মধ্যে মুসলিম, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন। এর পরবর্তী সকল অধিবেশনে শুধু মাত্র মুসলিম ও হিন্দু ধর্মাবলম্বী সাংসদরা ছিলেন। বর্তমানে সব ধর্মের বিজ্ঞ সাংসদরা সংসদে রয়েছেন।’

এতে আরও বলা হয়, ‘দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের মেয়াদ ছিল ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২। এর প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন ২ এপ্রিল ১৯৭৯-তে শুধুমাত্র পবিত্র কোরান থেকে তেলাওয়াত করা হয়। প্রথম জাতীয় সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন ৪ এপ্রিল ১৯৭৯-এ পবিত্র কোরান থেকে তেলাওয়াত করা হয় নি। কিন্তু এর প্রেক্ষিতে ঐদিনই সেদিনকার সংসদ সদস্য জনাব এ এস এম সোলায়মান (ঢাকা-৩০), যিনি ৭১-এ পাক হানাদার বাহিনীর দোসর ছিলেন, পয়েন্ট অব অর্ডার উত্থাপন করেন এবং এ বিষয়ে কয়েকজন সাংসদের আলোচনার পর ঐদিনই মাননীয় স্পীকার এক রুলিং দেন এবং সে রুলিং অনুযায়ী অদ্যাবধি প্রত্যেক অধিবেশনের প্রতিটি কার্যদিবস শুরুর আগে পবিত্র কোরান থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা হয়।

এ ছাড়া ইসলাম ধর্মাবলম্বী বিজ্ঞ সাংসদদের বা দেশের বিশিষ্ট ইসলাম ধর্মাবলম্বী বুদ্ধিজীবীদের কেউ মারা গেলে পার্লামেন্টে সব সম্প্রদায়ের বিজ্ঞ সাংসদগন এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের পর শুধুমাত্র মুসলিম সাংসদদের জন্যে মোনাজাতেরও ব্যবস্থা করা হয়।’

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী বছর থেকে জাতির জনকের পদাংক অনুসরণ করে সংসদ অধিবেশনের শুরুতে এবং প্রতিটি কার্যদিবসে সকল ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ থেকে পাঠের ব্যবস্থার জন্যে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণের পাশাপাশি একই সাথে আবেদন জানাই, সব ধর্মাবলম্বী বিজ্ঞ সাংসদ বা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপনের সময়েও নীরবতা পালনের পাশাপাশি স্ব স্ব সাংসদ এবং বিশিষ্টজনদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী প্রার্থনার উদ্যোগ গ্রহণের জন্যেও আপনার সমীপে বিনীত নিবেদন জানাই।’

More From Author