হিল ভয়েস, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বিশেষ প্রতিবেদক: গত ৩১ জানুয়ারি ২০২১ বিকেলে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুরে বনবিভাগ কর্তৃক আদিবাসীদের বাসভূমিকে জাতীয় উদ্যান ও তথাকথিত সংরক্ষিত বনভূমি ঘোষণা করে ভূমি উদ্ধারের নামে অধিবাসীদের উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মহাসমাবেশ ও অবরোধ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগে দুপুরে স্থানীয় জলছত্র ফুটবল মাঠে জয়েন শাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ, আচিকমিচিক সোসাইটি, বাগাছাস, গাসু, জিএসএফ, আজিয়া, এসিডিএফ, কোচ আদিবাসী সংগঠন, জলছত্র হরিসভা, সিবিএনসি, ইআইপিএলআর, আবিমা আদিবাসী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন, পীরগাছা থাংআনি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন এবং মধুপুর গড় এলাকার বিভিন্ন গ্রামের গারো সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রী, নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। ‘আমার ভূমি আমার মা, কেড়ে নিতে দেব না”, “বিভিন্ন মধুপুরের মাটি, আদিবাসীদের ঘাটি” শ্লোগানে তারা সমাবেশ স্থলে যোগ দেন।
মহাসমাবেশে জয়েন শাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক এর সভাপতিত্বে প্রবীর নকরেক এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন অজয় এ মৃ, যষ্ঠিনা নকরেক, টিডব্লিউএ এর চেয়ারম্যান উইলিয়াম দাজেল, বাগাছাস কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি জন জেত্রা, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ, জিএসএফ এর সাধারণ সম্পাদক লিয়াং রিছিল, গাসুর ইব্রীয় ম্রং, আদিবাসী যুব ফোরামের আহবায়ক অনন্ত ধামাই, টনি চিরান, আজিয়ার সভাপতি মিঠুন হাগিদক, শ্যামল মানকিন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম, জুলহাস উদ্দিন, আক্তার হোসেন ও রেজাওয়াল করিম বেনু প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “সংরক্ষিত বনভূমির নামে আদিবাসীদের উচ্ছেদ ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। মধুপরের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে। বনবিভাগ কর্তৃক পীরেনসহ সকল হত্যার বিচার করতে হবে। আদিবাসীদের উপর শত শত মিথ্যা বন মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।”
বক্তারা আরও বলেন, পূর্বপুরুষরা এ গড়াঞ্চলে উঁচু চালাজমিতে জুমচাষ ও নিচু বাইদ জমিতে ধানচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এভাবে তারা বংশানুক্রমে এ অঞ্চলে বসবাস করে আসছেন। সম্প্রতি বনবিভাগের সংরক্ষিত বনভূমি উদ্ধারের যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তাতে যুগযুগ ধরে মধুপুর গড়ের বসবাসকারী গারো ও কোচ সম্প্রদায়ের লোকজন উচ্ছেদ আতঙ্কে ভুগছে।
মহাসমাবেশে আদিবাসী নেতারা বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো- আদিবাসীদের দখলীয় জমি জরিপ করে ভূমি চিহ্নিত করা; মধুপুর বনাঞ্চলের সংরক্ষিত, জাতীয় উদ্যান, ইকোপার্ক ঘোষণা বাতিল করা; ১৯৮২ সালের আতিয়া বন অধ্যাদেশ বাতিল করে তাদের রেকর্ডভুক্ত জমির খাজনা নেওয়া বন্ধ আবার চালু করা; তাদের দখলীয় ভূমি স্থায়ী বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করা; বন মামলাগুলো ভ্রাম্যমাণ আদালত সৃষ্টি করে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা; সামাজিক বনায়ন বাতিল করে প্রাকৃতিক বন রক্ষার দায়িত্ব তথা কমিউনিটি ফরেস্ট্রি বা গ্রামবন পদ্ধতি চালু করা।
সমাবেশ চলাকালে ক্ষুব্ধ আদিবাসীরা দুপুর ৩ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। তারপর মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবু, মধুপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফা জহুরা, মধুপুর থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) তারিক কামালসহ অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে তারা অবরোধ কর্মসূচি তুলে নেন।
মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবু বলেন, “আমরা আদিবাসীদের ন্যায় ও যুক্তিসংগত দাবিতে সহমত ও সংহতি পোষণ করছি। কৃষিমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আদিবাসীদের ভূমি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করবো।”