হিল ভয়েস, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞগণ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বিতর্কিত পর্যটন রিসোর্ট বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, বাংলাদেশের উচিত পার্বত্য চট্টগ্রামে বৃহদাকারের পর্যটন রিসোর্ট নির্মাণ বাতিল করা। কারণ ইহা আদিবাসী ম্রো জাতিগোষ্ঠীকে তাদের ঐতিহ্যগত ভূমি থেকে উচ্ছেদ এবং পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির হুমকি সৃষ্টি করছে।
গতকাল ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ জেনেভায় জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞগণ এসব কথা বলেছেন বলে জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছেন- আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোটিউর ফ্রান্সিস কোকালি জে; মানবাধিকার এবং ট্রান্সন্যাশনাল কর্পোরেশন ও অন্যান্য ব্যবসায়িক উদ্যোগ বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের চেয়ার দাঁতে পেস, ভাইস-চেয়ার সূর্য দেব, গিথুমুইপাই, এলজবিয়েতাকার্সকা ও আনিতা রামাসাস্ত্রী, মানবাধিকার ও পরিবেশ বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোটিউর ডেভিড আর. বয়ড; মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মীদেও পরিস্থিতি বিষয়ক স্পেশাল র্যাপোটিউর মেরী লওলোর।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সিকদার গ্রুপের বহুবিধ ব্যবসায়িক কোম্পানি আরএন্ডআর হোল্ডিংস লিমিটেড যৌথভাবে বান্দরবান জেলার ম্রোদের ভূমিতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে উক্ত পর্যটন রিসোর্টের নির্মাণকাজ শুরু করে।
বিশেষজ্ঞগণ বলেন, ম্রোরা তাদের সংস্কৃতি ও পরিচয়ের জন্য নির্ভর করেন এমন ঐতিহ্যগত ভূমিতে নিয়মবহির্ভূত ভূমি ইজারাদান প্রক্রিয়া এবং চারণভূমি হিসেবে ব্যবহার ও জলসম্পদ এর জন্য সেখানে প্রবেশ বিষয়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক অস্বীকার নিয়ে তারা বিঘ্নিত।
বিশেষজ্ঞগণ বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন যে, জানুয়ারিতে মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে হুমকি ও ভয়ভীতিপ্রদর্শন জোরদার হয়েছে, যারা শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের ভূমি রক্ষা করে চলেছেন।’ ‘আমরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অনুমতি দিতে, প্রতিবাদকারীদের হুমকি প্রদান থেকে বিরত থাকতে এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে সরকারকে আহ্বান জানাই।’
বিশেষজ্ঞগণ আরও বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছ থেকে স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি চাওয়ার উদ্দেশ্যে সরল বিশ্বাসে পরামর্শ করার আহ্বান জানাই।’ ‘এলাকায় একটি পরিবেশ বিষয়ক ও সামাজিক প্রভাব সংক্রান্ত পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা চালানোও অপরিহার্য।’
বিশেষজ্ঞগণ বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে যারা পরিবেশ ও আদিবাসীদের অধিকার রক্ষা করেন এবং প্রত্যাঘাত থেকে তাদের সুরক্ষা দেন তাদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
২০২০ সালের ডিসেম্বরেও কয়েকজন জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ একটি যৌথ বার্তায় বাংলাদেশ সরকার এবং আরএন্ডআর হোল্ডিংস লিমিটেড ও ম্যারিয়ট ইন্টারন্যাশনালের নিকট তাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচতারকা পর্যটন প্রকল্পের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে একটি ম্যারিয়ট হোটেল এবং যার প্রয়োজন হবে বিল্ডিং, সড়ক, নিষ্কাশন প্রক্রিয়া ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থার একটি ব্যাপক যোগাযোগ, যা এলাকার জীববৈচিত্র্যকে দূষিত ও ক্ষতি করবে। উক্ত নির্মাণকাজের কারণে ১০,০০০ মত লোক উচ্ছেদের ঝুঁকিতে পড়বে।