হিল ভয়েস, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলা সদরের জেলগেইট থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়া নিকোলাই পাংখোয়াসহ ৩ জুম্মকে সেনাবাহিনী আবার অন্যায়ভাবে তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও জামিনে মুক্তি পাওয়া রূপায়ন চাকমা নামে অপর এক জুম্ম নিরাপদে বাড়িতে ফিরেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, আজ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সন্ধ্যা আনুমানিক ৬:০০ টার দিকে নিকোলাই পাংখোয়া (৫৫) ও রূপায়ন চাকমা এবং অজ্ঞাতনামা আরও দুই জুম্ম রাঙ্গামাটি জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান। কিন্তু কারাগার থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে সেখানে আগে থেকে থাকা কয়েকজন সেনাবাহিনীর সদস্য অস্ত্রের মুখে নিকোলাই পাংখোয়া ও আরও দুই ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। উল্লেখ্য, সম্প্রতি তারা আদালত থেকে জামিনে মুক্তির আদেশ পান।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেনাবাহিনী তুলে নিয়ে যাওয়া উক্ত তিন ব্যক্তিকে কোথায় নিয়ে গেছে তা জানা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাঙ্গামাটির এক অধিকারকর্মী বলেন, আদালত কর্তৃক জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সেনাবাহিনী কর্তৃক এভাবে বিনাওয়ারেন্টে আবার তুলে নিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণ বেআইনী এবং মানবাধিকার পরিপন্থী। তিনি আরও বলেন, এটাই পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতা। এখানে আইনের কোনো শাসন নেই, আছে সেনাশাসন।
উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩০ টার দিকে রাঙ্গামাটি শহরের বিজন সরণীর তার বাসা থেকে নিকোলাই পাংখোয়াকে গ্রেফতার করে রাঙ্গামাটি সেনা জোনের সেনাবাহিনী। সেসময় সেনাবাহিনী নিকোলাইকে প্রথমে সেনাজোনে নিয়ে গিয়ে আটক করে রাখে এবং পরে মিথ্যা মামলায় জড়িত করে পুলিশের নিকট সোপর্দ করে।
নিকোলাই পাংখোয়া পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য এবং রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বালুখালি ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন নির্বাচিত সদস্য বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে সম্প্রতি সামরিকায়ন জোরদার হওয়ায় সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীসহ রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক আদিবাসী জুম্মদের বিচারবহিভূত হত্যা, জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়া, সেনা ক্যাম্পে আটক, মিথ্যা মামলায় জড়িত করে জেলে প্রেরণ, উচ্চ আদালতের জামিনে জেল থেকে মুক্তি পেলেও অন্য সাজানো মামলায় পুনরায় গ্রেফতার ইত্যাদি মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা বৃদ্ধি পায়।
কেবল ২০১৯ সালের মধ্যে অন্তত ৯০ জনকে অবৈধভাবে গ্রেফতার, যাদের মধ্যে উচ্চ আদালতের জামিনে বের হওয়ার সময় জেল গেইট থেকে অন্য সাজানো মামলায় অন্তত ১০ জনকে পুন:গ্রেফতার করার খবর রয়েছে।
সাম্প্রতিক কালে জামিনে জেল থেকে মুক্তি পাওয়া কয়েকজনকে সেনাবাহিনী কর্তৃক আবার তুলে নিয়ে যাওয়া এবং মিথ্যা মামলায় জেলে প্রেরণের ঘটনা হল নিম্নরূপ-
গত ৩০ এপ্রিল ২০১৯ সন্ধ্যা আনুমানিক ৭:০০ টায় আদালত থেকে জামিনে মুক্তির আদেশ পেয়ে রাঙ্গামাটি জেলা কারাগার থেকে ছাড়া পায় প্রশান্ত চাকমা ওরফে রাসেল ও উজ্জ্বল চাকমা ওরফে শ্যামলসহ ৪ জুম্ম। কিন্তু সাদা পোশাকধারী নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উক্ত ৪ জনকে আবার জেল গেইট থেকেই ধরে নিয়ে যায় এবং পরে কোতয়ালী থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে। এরপর আটককৃত এই ৪ জনকে আবার হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার হিসেবে দেখানো হয়।
গত ১৩ মার্চ সুবলং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তরুণ জ্যোতি চাকমা (পরায়ণ) হাই কোর্টের জামিনে রাঙ্গামাটি জেল থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী কর্তৃক জেল গেইট থেকে আবার তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে সুবলঙে কোকো চাকমার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। উল্লেখ্য, গত ৬ নভেম্বর ২০১৯ রাঙ্গামাটি শহর থেকে তাকে সুবলঙে গ্রেনেড হামলায় অভিযোগে সেনাবাহিনী কর্তৃক মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।