হিল ভয়েস, ৩ জানুয়ারী ২০২১, বিশেষ প্রতিবেদক: ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের নারী মুক্তিযোদ্ধা, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আর্দশের সৈনিক আদিবাসী-বাঙালিসহ অধিকারহারা মানুষের বন্ধু বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম মৃত্যুবরণ করেছেন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সূত্রে জানা যায়, সভাপতি আয়েশা খানম ক্যান্সার নামক এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ করছিলেন। অবশেষে গতকাল ভোর আনুমানিক ৫ টার দিকে নিজ বাসভবনে শেষ নি:শ^াস ত্যাগ করেন। তাঁর মরদেহ সকাল ৮:৩০ টার দিকে মহিলা পরিষদের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর বিকালের দিকে নিজ গ্রাম নেত্রকোণার গাবড়াগাতিতে দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়।
নেত্রকোনার ও দুর্গাপুরের মাঝখানে গাবড়াগাতি গ্রামে ১৮ অক্টোবর ১৯৪৭ সালে আয়েশা খানমের জন্ম। পিতা গোলাম আলী খান এবং মা জামাতুন্নেসা খানম। ১৯৬২ সালের হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন থেকেই ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পর্ক আয়েশার। তবে ১৯৬৬ সাল থেকে ছাত্র আন্দোলনে পুরোপুরি সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং সংগ্রামী নেত্রী আয়েশা খানম। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। এছাড়া রোকেয়া হলের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ঢাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের সংগঠিত করার মূল দায়িত্ব নেন। ছাত্রনেতা হিসেবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্বাধিকার আন্দোলনের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা ও সচেতনতার কাজেও সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন তিনি। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যূত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনসহ স্বাধীনতা যুদ্ধের পথে এগিয়ে যেতে যেসব আন্দোলন-সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল সেসবগুলোতেই তিনি সামনের সারিতে ছিলেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নারীনেত্রী আয়েশা খানম অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণের জন্য নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজে জড়িয়ে পড়েন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সর্বদা আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, আদিবাসী নারীদের অধিকার ও নিরাপত্তার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। আদিবাসীদের অধিকারের দাবিতে মিটিং-মিছিল, সমাবেশে সবসময় সম্মুখ সারিতে থাকতেন। তিনি কখনো পার্বত্য চট্টগ্রাম, কখনো উত্তরবঙ্গ, কখনো মধুপুর ও বৃহত্তর সিলেটের আদিবাসীদের কাছে ছুটে গিয়েছেন।
আদিবাসীদের অধিকার আন্দোলনের বন্ধু আয়েশা খানমের মৃতুতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, পার্বত্য চট্টগাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি, আদিবাসী যুব ফোরাম, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওর্য়াক, কাপেং ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গভীর শ্রদ্ধা ও শোক জানিয়েছেন।