হিল ভয়েস, ১১ জানুয়ারি ২০২১, টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায় চোর বদনাম দিয়ে বর্মন সম্প্রদায়ের এক আদিবাসী নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ৯ জানুয়ারি ২০২১ এ ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।
নির্যাতনের ঘটনায় গতকাল ১০ জানুয়ারি ২০২১ রাতে সন্ধ্যা রানী (৩৫) নামে ওই নারী বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামি করে ঘাটাইল থানায় মামলা করেন। তিনি উপজেলার সাগরদিঘী ইউনিয়নের মালিরচালা গ্রামের নারায়ণ বর্মনের স্ত্রী।
অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া (৮০), তার দুই ছেলে মোস্তফা ভূঁইয়া (৪৫) ও সজিব ভূঁইয়া (৪০) এবং মোছাঃ খুকি (৩৭) ও সুমি আক্তার (৩২)।
জানা গেছে, সন্ধ্যা রানীর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। আসামিদের সন্তানদের সঙ্গে তার ছোট ছেলে পলাশ (৮) খেলাধুলা করত। ঘটনার ১৫ দিন আগে ছোট ছেলে পলাশ আসামি মনিরুল ইসলাম ভূইয়ার বাড়ি থেকে ঘুড়ি বানানোর জন্য পত্রিকা নিয়ে আসে। হঠাৎ মনিরুলের বাড়ি থেকে স্বর্ণ ও টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান কাগজপত্র চুরি যায় খবর রটে যায়। এর জের ধরে গত ৩ জানুয়ারি পলাশকে ধরে নিয়ে মারধর করা হয়। চুরি ও জিনিস তার মায়ের কাছে জমা দিয়েছে মর্মে জোরপূর্বক বয়ান আদায় করা হয়। পরে গত ৯ জানুয়ারি আসামি মোছাঃ খুকি ও সুমি আক্তার সন্ধ্যা রানীর বাড়িতে ঢুকে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে তাকে বাড়ি থেকে ধরে এনে স্থানীয় করিম ভূঁইয়ার বাগানে রশি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে ৫ আসামি মিলে ব্যাপক মারধর করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মহানন্দ চন্দ্র বর্মন বলেন, প্রায় চার ঘণ্টা সন্ধ্যা রানীকে বেঁধে রাখা হয়। এসময় সন্ধ্যা রানীর ৬ মাসের শিশু সন্তান অনবরত কান্নাকাটি করলেও তার মায়ের বুকের দুধও খেতে দেয়নি। পরে দুই বন্ধুর সহযোগিতায় সন্ধা রানীকে উদ্ধার করি।
মামলা করার পর সন্ধ্যা রানী ও তার পরিবারকে আসামিরা হুমকি দিচ্ছে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাগরদীঘি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক স্বপন বর্মন এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি জানান।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, এটি অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘন। সাধারণত গরিব, অসহায়, আদিবাসীদের ওপর সমাজের ধনী মানুষগুলো জুলুম অত্যাচার করে নোংরা আনন্দ পায়। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ বলেন, ভুক্তভোগীরা আদিবাসী বলে অপরাধীরা বারবার ঘটনা ঘটিয়ে পার পাচ্ছে। তাই দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করে যথাযথ শাস্তির দাবি জানান।
ঘাটাইল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো: ছাইফুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত কাজ চলছে। আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।