হিল ভয়েস, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০, বিশেষ প্রতিবেদক: রাঙ্গামাটি জেলাধীন রাজস্থলী উপজেলার রাজস্থলী সদর সেনা সাব-জোনের কম্যান্ডার মেজর মঞ্জুর সেনাবাহিনী ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী দল ‘মগপার্টি’র প্রতিনিধিদের বলেন, ‘আমরা লাশ চাই, আমাদেরকে লাশ দেখাও। তোমরা কোথা থেকে লাশ আনবে আমরা জানি না।’
সেনাবাহিনীর কম্যান্ডার মেজর মঞ্জুর আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি) থেকে দলছুট মগ পার্টির সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে দূর্বলতা লক্ষ্য করে অসন্তোষ প্রকাশ করে তাদের প্রতিনিধিদের সাথে জরুরি বৈঠক করে এই কথা বলেন। গতকাল ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ সকালের দিকে সেনাবাহিনীর ২৩ বেঙ্গলের রাজস্থলী সদর সেনা সাব-জোনে মেজর মঞ্জুরের নেতৃত্বে স্থানীয় সেনা কর্তৃপক্ষের সাথে মগ পার্টির প্রতিনিধিদের গোপন এই জরুরি বৈঠক হয় বলে এক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে মগ পার্টির প্রতিনিধি হিসেবে সবুজ মারমা, ক্যথোয়াই মারমাসহ কয়েকজন অংশগ্রহণ করেন বলে জানা গেছে।
বৈঠকে মেজর মঞ্জুর মগ পার্টির প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তোমরা তো মাত্র ২৩ জন। তোমরা তো কিছু করতে পারছো না। তোমাদেরকে বারবার মেরে যাচ্ছে। তোমরা তো শুধু বসে বসে খাচ্ছ। চাঁদা তুলছ। জেএসএস’কে তো কিছু করতে পারছো না।’
মেজর মঞ্জুর আরও বলেন, ‘জেএসএস এর যারা সমর্থক, কাজ করে তাদেরকে না হয় মেরে ফেল। আমাদেরকে লাশ দেখাও। তোমরা কোথা থেকে লাশ আনবে আমরা জানি না।’
এসময় মগ পার্টির এক প্রতিনিধি সবুজ মারমা বলেন, ‘আমরা তো জেএসএস’এর সবাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছি। তারা তো সবাই জঙ্গলে চলে গেছে। আমরা কোথায় পাবো।’
এরপর মেজর মঞ্জুর আরও বলেন, ‘সামনে ইউপি নির্বাচন আসছে। সেজন্য মাঠ গরম করতে হবে। তোমরা না পারলে বলো, আমরা অন্য ব্যবস্থা করবো।’
বৈঠকে মগ পার্টির প্রতিনিধি আরও বলেন, ‘আমরা তো মানুষ কম। আমাদের লোকও বার্মা থেকে আসতে পারছে না। বার্মায় ভেজাল চলছে, তাই লোকও আসতে পারছে না।’
জানা গেছে, গত ২১ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখও মেজর মঞ্জুর মগ পার্টির সদস্যদের ফোনে ধমকের সুরে বলেন যে, ‘আমাদের লাশ চাই। আমাদের লাশ দেখতে হবে। তোমরা কোথা থেকে লাশ আনবে আমরা জানি না।’
মগ পার্টির সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন আগে মগ পার্টির কয়েকজন সদস্য ৫০/৬০ লক্ষ টাকা নিয়ে মিয়ানমারে যায়, অস্ত্র আর লোকজন আনবে বলে। কিন্তু তারা এখনও পর্যন্ত ফিরে আসে নি। ধারনা করা হচ্ছে, তারা আর ফিরে আসবে না এবং টাকাগুলো নিয়ে তারা গা ঢাকা দিয়েছে। আরও জানা গেছে, ইতোমধ্যে যাদেরকে মগপার্টিতে আনা হয়েছে, কথা ছিল তাদেরকে মাসে ৫০০০ টাকা করে দেয়া হবে। পওে তাদেরকে সপ্তাহে ৭০০ টাকা করে দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, বর্তমানে রাজস্থলী উপজেলায় গাইন্দা ইউনিয়নের পোয়াইতু পাড়া অবস্থানকারী মগ পার্টির সদস্য সংখ্যা ২৬ জন। তাদের মধ্যে ১০-১৫ জন স্থানীয়। কম্যান্ডারসহ বাকীরা মিয়ানমারের বলে জানা গেছে।
‘আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি)’ পরে নাম পরিবর্তন করে হয় ‘মারমা লিবারেশন পার্টি (এমএলপি), যা বর্তমানে স্থানীয়ভাবে ‘মগ পার্টি’ নামে পরিচিত। এই মগ পার্টি সেনাবাহিনী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বান্দরবানের কিছু এলাকাসহ রাঙ্গামাটির রাজস্থলী এলাকায় চাঁদাবাজি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, হত্যাকান্ড ইত্যাদি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে।
দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে, সেনাবাহিনী ও বান্দরবানের স্থানীয় আওয়ামীলীগ মদদ, পৃষ্টপোষকতা ও উস্কানি দিয়ে এই মগ পার্টিকে জনসংহতি সমিতির সদস্য, সমর্থক ও চুক্তির পক্ষের জনগণকে হত্যা, অপহরণ ও মিথ্যা মামলায় জড়িতকরণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহার করে থাকে।
উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিতে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সেনাবাহিনী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতৃত্ব মগ পার্টির মতো খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলার কতিপয় এলাকায় সংস্কারপন্থী নামে খ্যাত জেএসএস (এমএনলারমা) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে সংঘাত ও হানাহানিতে মদদ দিয়ে চলেছে এবং হত্যা, খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় ইত্যাদি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে মদদ দিয়ে চলেছে।
অপরদিকে জনসংহতি সমিতির সদস্য ও সমর্থকসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে সোচ্চার ব্যক্তি ও সংগঠনগুলোকে ‘সন্ত্রাসী’, ‘চাঁদাবাজ’, ‘অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত’ আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের, ধর-পাকড়, ঘরবাড়ি তল্লাসী, শারিরীক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।