হিল ভয়েস, ২০ ডিসেম্বর ২০২০, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলাধীন জুরাছড়ি উপজেলার লুলাংছড়িতে সেনাবাহিনী কর্তৃক ১৯ জুম্মর বাড়িতে হয়রানিমূলকভাবে ব্যাপক তল্লাশি ও জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ ২০ ডিসেম্বর ২০২০ দুপুর আনুমানিক ১২:০০ টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গামাটি জেলাধীন জুরাছড়ি উপজেলার বনযোগীছড়া সেনা জোনের ৭ বেঙ্গল এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সাল, একজন মেজর ও ক্যাপ্টেন মেহেদী এর নেতৃত্বে আনুমানিক ৯০/১০০ সদস্য বিশিষ্ট সেনাবাহিনীর একটি দল আজ রাত আনুমানিক ৩:০০ টার দিকে লুলাংছড়ি গ্রামের পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে অবস্থান গ্রহণ করে। এরপর দুপুর আনুমানিক ১২:০০ টার দিকে জঙ্গল থেকে বের হয়ে এসে সেনা সদস্যরা লুলাংছড়ি গ্রামে প্রবেশ করে কয়েক ঘন্টা ধরে জুম্মদের বিভিন্ন বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি চালায় এবং বাড়ির আসবাবপত্র ও কাপড়চোপড়সহ অনেক জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়। নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসাবাদ করে হয়রানি করে। অন্তত ৬ জন গ্রামবাসীর মোবাইল কেড়ে নিয়ে কয়েক ঘন্টা যাবৎ আটক রেখে পরে ফেরত দেয়।
তল্লাশির শিকার বাড়িগুলি হল- ১. বিন্দু চাকমা (৪০), পিতা-রেবতী রঞ্জন চাকমা; ২. দয়াল চাকমা (৪৫), পিতা-জয়মোহন চাকমা; ৩. পাথর মুনি কার্বারি (৬৫), পিতা-ললিত ভুষণ চাকমা; ৪. রুপান চাকমা (৪০), পিতা-পাথর মুনি কার্বারি; ৫. বাবুল চাকমা (২৮), পিতা-কুমো রঞ্জন চাকমা; ৬. ধন বিন্দু চাকমা (৩৪), পিতা-রেবতী রঞ্জন চাকমা; ৭. বিশ্বজিৎ চাকমা (২২), পিতা-কর্ণময় চাকমা; ৮. মেলিন্দ চাকমা (৩০), পিতা-কর্ণময় চাকমা; ৯. সবি রঞ্জন চাকমা (৫৭), পিতা-নিশিরাম চাকমা; ১০. হিরোত চন্দ্র চাকমা (৫৫), পিতা-মৃত সুর্য্য মোহন চাকমা; ১১. লুসাই মুনি চাকমা (৫৫), পিতা-শুভ মঙ্গল চাকমা; ১২. নতুন চন্দ্র চাকমা (৫০), পিতা-সুর্য্য মোহন চাকমা; ১৩. শান্তি জীবন চাকমা (৩৫), পিতা-বিষু মোহন চাকমা; ১৪. সন্তোষ চাকমা (৩০), পিতা-নিরন্দ মোহন চাকমা; ১৫. কিনাধন চাকমা (৭০), পিতা-মৃত চন্দ্র মুনি চাকমা; ১৬. মধু চন্দ্র চাকমা (৩৫), পিতা-গুল মুনি চাকমা; ১৭. ধ্রুব চাকমা (৩৫), পিতা-অজ্ঞাত; ১৮. প্রদীপ চাকমা (৪৮), পিতা-রাঙাচান চাকমা; ১৯. বিরজ চন্দ্র চাকমা (৪০), পিতা-সুর্দশন চাকমা।
যাদের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে আটকে রাখা হয় তারা হলেন- ১. জুয়েল চাকমা (৩৫), পিতা-জ্ঞানলাল চাকমা; ২. বিশ্বজিৎ চাকমা, পিতা-কর্ণময় চাকমা; ৩. নিল হালা চাকমা, স্বামী-চিহালা চাকমা; ৪. সুচিত্রা চাকমা, স্বামী-মিতু চাকমা; ৫. বাদী চাকমা, পিতা-বরুনেশ্বর চাকমা; ৬. বরুনেশ্বর চাকমা।
জানা গেছে, দুপুরে তল্লাশির সময় আরও তিন গাড়ি সেনা সদস্যের একটি দল গ্রাম তল্লাশিতে যোগ দেয়।
বিকাল ৪:৩০ টার দিকে সেনাবাহিনী সদস্যরা পার্শ্ববর্তী পাত্থর মনি চাকমা পাড়া গ্রামের দিকে চলে যায়।
এদিকে সেনাবাহিনীর এমন আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে বাড়িতে বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশির ফলে লুলাংছড়ি গ্রামসহ আশেপাশের জুম্মগ্রামেও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকার কয়েকজন মুরুব্বির মতে, সেনাবাহিনী নির্বিচারে বাড়িতে বাড়িতে এমন তল্লাশি চালিয়ে জুম্মদের মধ্যে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। এটি জুম্মদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় আঘাত করার সামিল। এটি সেনাবাহিনী কর্তৃক সাধারণ জুম্মদের মানবাধিকার লংঘন ছাড়া কিছু নয়।