নিপন ত্রিপুরা
রাত পেরোলে ২ ডিসেম্বর। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির তেইশ বছর পূর্ণ হবে। যখন চুক্তি হচ্ছিল আমি তখন একদম শিশু। সে সময়ে জন্ম নেয়া শিশুটি আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ২৩ বছরের হিসেব নিকেশ কষতে শুরু করেছে। চুক্তির কয়টি ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে গুণতে শিখেছে। সমসাময়িক বাস্তবতায় চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিকে মূল্যায়ন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে প্রথম মতামত লিখছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে জুম্ম জনগণের দুর্বার আন্দোলন এবং দেশে বিদেশে প্রবল জনমতের চাপে পড়ে উগ্র জাতীয়তাবাদী ও সাম্প্রদায়িক শেখ হাসিনা সরকার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে জনসংহতি সমিতির সাথে ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে জুম্ম জনগণের দাবি মানতে বাধ্য হয়। শুরু হয় শান্তির বাতাবরণ।
কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্যণীয় এই, যতই দিন যাচ্ছে, যে চুক্তিকে কেন্দ্র করে জুম্ম জনগণের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের অধিকার ছিল সেটিকে ভূলণ্ঠিত করে বেড়েই চলেছে সেনা, সেটেলার ও সরকারের প্রকৃষ্ট দুর্বৃত্তায়ন ও ক্ষমতার দাপট। ৯৭ সালে জম্ম নেয়া জুম্ম শিশুটি আজ যৌবন পার করছে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই-তৃতীয়াংশ বিষয় এখনো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়ে গেছে।
আরো উদ্বেগের বিষয় যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সাল থেকে একযুগ ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন থাকলেও চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ পূর্বের মতোই অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। শেখ হাসিনা সরকার কেবল চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ অবাস্তবায়িত অবস্থায় ফেলে রেখে দেয়নি, উপরন্তু একের পর এক চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব বিলুপ্তির কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে। ফলশ্রুতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান হয়নি, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম (উপজাতীয়) অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য তথা জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব সংরক্ষণ নিশ্চিত হয়নি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সাথে সঙ্গতি বিধানকল্পে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রযোজ্য আইনসমূহ সংশোধন করা হয়নি, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ সম্বলিত বিশেষ শাসনব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেনি, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি-বাঙালি স্থায়ী অধিবাসীদের প্রত্যক্ষ ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচনের মাধ্যমে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হয়নি, তিন পার্বত্য জেলার আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, স্থানীয় পর্যটন, মাধ্যমিক শিক্ষা, উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো এখনো তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে হস্তান্তর করা হয়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন কার্যকর হয়নি। আঞ্চলিক পরিষদকে অথর্ব করে রাখা হয়েছে। সেটেলার বাঙালি, অস্থানীয় ব্যক্তি ও কোম্পানী, সেনাবাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভূমি বেদখল বন্ধ হয়নি এবং বেদখলের ফলে সৃষ্ট ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি; ‘অপারেশন উত্তরণ’সহ সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়নি ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বলবৎ সেনাশাসনের অবসান হয়নি; ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তুদের স্ব স্ব জায়গা-জমি প্রত্যর্পণ পূর্বক যথাযথ পুনর্বাসন প্রদান করা হয়নি; পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল চাকরিতে পাহাড়িদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়োগ সুনিশ্চিত হয়নি; সেটেলার বাঙালিদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন করা হয়নি; সেনা অভিযান, ঘরবাড়ী তল্লাসী, অবৈধ গ্রেপ্তার, বিচার বহিভূর্ত হত্যা, নির্যাতন-নিপীড়ন, হয়রানি, ক্যাম্প সম্প্রসারণ, সন্ত্রাস, হুমকি ইত্যাদি অব্যাহত রয়েছে।
পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের ২৩ বছরের মধ্যে বিএনপি’র পাঁচ বছর ও তত্ত্বাধায়ক সরকারের দুই বছর বাদে আওয়ামী লীগ সরকার ১৬ বছর ক্ষমতায় আসীন ছিলেন। সোজা করে বললে ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান অবধি ১২ বছর ধরে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে কোন কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। উপরন্তু দেশে-বিদেশের বিভিন্ন ফোরামে অপপ্রচার অব্যাহত রেখেছে, ‘পার্বত্য চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে’, ‘চুক্তির ৮০ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে’, ‘সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে সম্পূর্ণভাবে আন্তরিক’, ‘এ সরকারের আমলেই চুক্তির অবশিষ্টাংশ সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হবে’ ইত্যাদি।
প্রকৃত পক্ষে বাস্তবতা হচ্ছে, ৭২টি ধারার মধ্যে মাত্র ২৫টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে অর্থাৎ চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহসহ দুই-তৃতীয়াংশ ধারা এখনো অবাস্তবায়িত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। চুক্তির কোন কোন ধারা বাস্তবায়ন হয়েছে, কোনটি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে এবং কোন কোন ধারা এখনো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পক্ষে চুক্তি বাস্তবায়নের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে জনসংহতি সমিতির সভাপতি পক্ষ থেকে ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যেসব বিষয় বাস্তবায়িত হয়নি তার বিবরণ” সম্বলিত ১৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন এবং তৎসঙ্গে সহায়ক দলিল হিসেবে ১৬টি পরিশিষ্ট সংযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট জমা দেয়া হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি, অধিকন্তু গোয়েবলসীয় কায়দায় অব্যাহতভাবে অসত্য তথ্য প্রদান এবং চুক্তি বিরোধী কার্যক্রম অব্যাহতভাবে জোরদার করে চলেছে।
শুধু তাই নয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে সেনা-পুলিশের যোগসাজশে ক্ষমতাসীন দল জনসংহতি সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে চলছে এবং অবৈধভাবে ধর-পাকড় ও নিপীড়ন-নির্যাতন করছে। প্রশাসন ও সরকারি বাহিনীর ফ্যাসীবাদী দমন-পীড়ন ও মানবতা বিরোধী নিপীড়ন-নির্যাতনের খবর প্রচার ও প্রকাশের বিরুদ্ধে গণমাধ্যম কর্মীদের উপর কড়া হুমকি ও নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে। বরং তার স্বপক্ষে সাফাই ও জনসংহতি সমিতির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে সর্বদা অপপ্রচার চালানোর জন্য শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে ও দেশের কিছু ভূঁইফোড় সাংবাদিক দিয়ে প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমকে ব্যবহার করছে। বলা যায়, জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব চিরতরে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চুক্তি পরিপন্থী ও জুম্ম স্বার্থ বিরোধী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে চলছে।
দীর্ঘ ২৩ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনমিতি ও রাজনীতির পরিবেশ অনেক বদলে গিয়েছে কিন্তু একটুও বদলাইনি শাসকগোষ্ঠীর হীনস্বার্থ ও ষড়যন্ত্র। জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বকে ধ্বংস করা ও চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গৃহীত সকল কার্যক্রম প্রতিরোধ করার সর্বাত্মক অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তদ্দুদ্দেশ্যে মদদ দিয়ে গড়ে তুলেছে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ, বাঙালি ছাত্র পরিষদ, সম অধিকার লেবাসধারী সেটেলার সংগঠন। অপরদিকে প্রত্যেক্ষ মদদ দিয়ে আশির দশকের ন্যায় সুবিধাবাদী ও ক্ষমতালীপ্সু জুম্মদের একটি অংশকে দিয়ে গড়ে তুলেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন। যারা পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ও অধিকার আদায়ের লেবাস দিয়ে চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনকারীদের হত্যা ও আক্রমণ করেই চলেছে, যা পরোক্ষভাবে শাসকগোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন। শাসকগোষ্ঠী, নিরাপত্তা ও তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনী চার শক্তি একত্রিত হয়ে জুম্ম জনগণের বুকে শোষণের ছুরি চালাচ্ছে।
পাশাপাশি প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর নাকের ডগায় লক্ষ লক্ষ টাকার চাঁদাবাজি করে চলেছে। অন্যদিকে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারী সাজিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতির সদস্য ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে একের পর এক সাজানো মামলা দায়ের করে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, একটা মামলায় জামিন পাওয়া গেলে সাথে সাথে আরেকটি সাজানো মামলায় জড়িত করে কারাগারে প্রেরণ ইত্যাদি অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এযাবৎ তিন পার্বত্য জেলায় শতাধিক মামলায় জনসংহতি সমিতির সদস্যদের মিথ্যাভাবে আসামী করা হয়েছে এবং জনসংহতি সমিতিকে একটি সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বলা যায়, শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে এখন বহুমাত্রিক সমস্যায় রূপান্তরিত করেছে।
ভূমি সমস্যা পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা। এটির সমাধানে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে একটি সুনির্দিষ্ট স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মদের প্রচলিত আইন, রীতি-নীতি ও পদ্ধতি অনুযায়ী ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করবে। চুক্তির পরে ভূমি কমিশন গঠন হলেও ২৩ বছরেও ভূমি কমিশনের বিধি প্রণীত না হাওয়ায় কাজ করতে পারছে না। সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য অঞ্চল বান্দরবানের চিম্বুকে ম্রোদের জমি দখল করে বান্দরবানের জেলা পরিষদ সেনা কল্যাণ সংস্থা ও সিকদার গ্রুপকে ফাইভ স্টার হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা বিষয় নতুন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের গুরুত্ব দেখা দিয়েছে। গুরুত্ব এ কারণে স্থানীয় বাসিন্দা ম্রো আদিবাসীরা চান না, সেখানে হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা হোক। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদকে হর্টিকালচার বাগান করার যে চুক্তি সে চুক্তি মোতাবেক হর্টিকালচার বাগান হোক কিন্তু পার্বত্য জেলা পরিষদ একতরফাভাবে এবং ম্রো জনগোষ্ঠীকে প্রতারণা কওে সেখানে সেনা কল্যাণ সংস্থা ও সিকদার গ্রুপকে দিয়ে ফাইভ স্টার হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ করাতে চাইছে।
এখন করোনা কাল। পৃথিবীর সকল দেশের মত বাংলাদেশও করোনার থাবায় ডুবছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে করোনার চেয়ে বড় থাবা হচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর লাগামহীন তল্লাসী, দমন-পীড়ন, সেটেলারদের অব্যাহত ভূমি দখল, জুম্ম নারীদের ধর্ষণ, হত্যা, গণধর্ষণ, জোর করে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করার মহোৎসব। এ করোনায় কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক জুম্মনারীর উপর ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যা, শ্লীলতাহানির মত ঘটনা ঘটেছে। জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চল সাজেকে স্কুল, খাদ্য সংকট, পানি সংকট না মিটিয়ে মসজিদ নির্মাণ করছে। ১,০০০ জন জুম্ম গ্রামবাসীর প্রায় ৫,০০০ একর জমি জোরপূর্বক করে নেয়া হয়েছে। সন্ত্রাসী খোঁজার নাম করে যেভাবে রাত গভীর অবধি পর্যন্ত তাদের সক্রিয়তা দেখা যায় সেখানে বেদখলকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার পরিবর্তে উল্টো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বেদখলকারীদের সুরক্ষা দিয়ে চলেছে।
সত্তর দশকে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে উগ্র জাতীয়তাবাদী, অগণতান্ত্রিক, উপনিবেশবাদী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গীর আলোকে মূল্যায়ণ করে জুম্ম জনগণের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন সম্বলিত চার দফা দাবিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল, দমন-পীড়নের পথ গ্রহণ করা হয়েছিল এবং জুম্ম জনগণের যে কোন দাবি-দাওয়া পূরণে অনমনীয় মনোভাব পোষণ করা হয়েছিল। কিন্তু জুম্ম জনগণ তার কড়া জবাব দিয়েছিল। নদীর চলমান স্রোতকে বাঁধ দিয়ে রুখতে পারে না, ঠিক তেমনি জুম্মদের সুবিধাবাদী অংশকে মদদ দিয়ে কখনোই চুক্তি বাস্তবায়নের সংগ্রামকে পরাস্ত করতে পারবে না। নদীর স্রোত যেমন তার আপন মহিমায় তার গতি খুঁজে নেয়, জুম্মরা সকল ক্ষেত্রে দুর্বলতর ও পশ্চাৎপদ হতে পারে, তাই বলে তারা অবহেলা ও উপেক্ষার পাত্র হতে পারে না, তারাও নিশ্চয়ই নিজেদের অস্তিত্ব ও অধিকার রক্ষার পথ খুঁজে নেবে। প্রত্যেক ক্রিয়ার তার সমান প্রতিক্রিয়া অবশ্যই রয়েছে। তারাও ২৩ বছরের পুরনো হিসেব ফেলে অনাগত দিনের করণীয় নিয়ে নতুন করে হিসাব নিকাশের অঙ্ক কষতেও শুরু করবে।