হিল ভয়েস, ৩০ নভেম্বর ২০২০, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান: সম্প্রতি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সাজেকে সেনাবাহিনী কর্তৃক এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলার রুমায় বিজিবি কর্তৃক পরপর অস্ত্র উদ্ধারের খবর বিভিন্ন অনলাইন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। এসব খবরে, সেনাবাহিনী ও বিজিবি অভিযান চালিয়ে উপজাতীয় ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু অনুসন্ধান করে জানা গেছে, সেনাবাহিনী ও বিজিবি উক্ত এলাকায় গিয়েছে ঠিকই, তবে তারা কোন সন্ত্রাসীর সন্ধান যেমন পায়নি, তেমনি বাস্তবে তারা কোন সন্ত্রাসীর কাছ থেকে অস্ত্রও উদ্ধার করেনি। স্থানীয় জনগণের মতে, এগুলো হচ্ছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র সাজানো নাটক। তারা নিজেরাই এসব অস্ত্র সরবরাহ করেছে এবং আবার তারাই উদ্ধার করেছে বলে প্রচার করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধিকারকর্মী বলেন, সেনাবাহিনী ও বিজিবি কর্তৃক নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে অভিযানের নামে এই অস্ত্র উদ্ধার নাটক নতুন কোন ষড়যন্ত্রেরই অংশ। তিনি আরও বলেন, নিজেদের পদোন্নতির জন্য প্রায়ই সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র বিভিন্ন কর্মকর্তা এসব অভিযান ও অস্ত্র উদ্ধারের নাটক করেন। তারা নিজেরাই অস্ত্র গুঁজে দিয়ে নিরস্ত্র কোন জুম্মকে সন্ত্রাসী বানিয়ে আটক করেন।
অপর এক অধিকারকর্মী বলেন, সামনে ২ ডিসেম্বর ২০২০ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৩তম বর্ষপূর্তি। পার্বত্য চুক্তি ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে আন্দোলনের বিষয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যেই এই অস্ত্র উদ্ধার নাটক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ নভেম্বর ২০২০ সকালের দিকে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাট সেনা জোন কর্তৃক বিশেষ অভিযানে অত্যাধুনিক ২টি একে-৪৭, ২টি একে-৪৭ এর ম্যাগাজিন, ১টি এসএমসি, একটি এসএমসি’র ম্যাগাজিন এবং ২১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয় বলে প্রচার করা হয়। বাঘাইহাট সেনা জোনের একটি সেনাদল একটি আঞ্চলিক দলের আস্তানায় হানা দিয়ে এইসব অস্ত্র উদ্ধার করে এবং উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায় বলে উল্লেখ করা হয়।
এই বিষয়ে সাজেকের এক গ্রামবাসী জানান, তারা ওই জায়গায় গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু হাতিয়ার উদ্ধারের বিষয়টি সম্পুর্ণ বানোয়াট। সেখানে সেই হাতিয়ারগুলো তারা নিজেরাই রেখেছে এবং সেগুলো স্বয়ং সেনাবাহিনীরই হাতিয়ার।
অপরদিকে, এর পরপরই ২৯ নভেম্বর ২০২০ দিবাগত রাতে বান্দরবানের রুমা উপজেলার ৩৮ ব্যাটলিয়নের বলিপাড়া বিজিবি ক্যাম্পের একদল বিজিবি সদস্য গালেঙ্গ্যা ইউনিয়নের জৈয়তুন পাড়া এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ১০টি দেশীয় এলজি, ১৭০ রাউন্ড বন্দুকের গুলি, ২ সেট সামরিক পোশাক ও এসএমজির ১টি ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করে বলে প্রচার করা হয়। এসময় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গ্রামবাসী জানান, উক্ত এলাকায় বিজিবি সদস্যরা আগে থেকেই এসব অস্ত্র রেখে দিয়েছিল এবং পরে এসে সেগুলো উদ্ধারের নাটক পরিচালনা করে।