হিল ভয়েস, ২১ নভেম্বর ২০২০, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের ১৬তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল ও সম্মেলন সম্পন্নঃ সভাপতি অমর কৃষ্ণ চাকমা এবং সাধারণ সম্পাদক জগৎ জ্যোতি চাকমা নির্বাচিত।
‘বৈষম্যহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম কর’ এই আহ্বানে এবং ‘সংখ্যালঘু, আদিবাসী ও শ্রমজীবী মানুষের উপর শোষণ-নিপীড়ন বন্ধ কর’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে গতকাল ২০ নভেম্বর ২০২০ চট্টগ্রামে দিনব্যাপী পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটির ১৬তম বার্ষিক কাউন্সিল ও প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দিনব্যাপী প্রতিনিধি সম্মেলন ও বার্ষিক কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি তাপস হোড় এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অজিৎ দাশ, সাধারণ সম্পাদক, ঐক্য ন্যাপ, চট্টগ্রাম জেলা, এডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী, সদস্য, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, জাতীয় কমিটি, সোনাবী চাকমা, সভাপতি, আদিবাসী মহিলা ফোরাম, চট্টগ্রাম অঞ্চল, ছাত্রনেতা মং ওয়াই চিং মারমা, সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।অনুষ্ঠানে পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের বিভিন্ন থানা কমিটির শতাধিক প্রতিনিধি ও কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি তাপস হোড় বলেন, “শোষনহীন, বৈষম্যহীন ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধ শতবছর অতিবাহিত হতে চললেও সেই কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা পায়নি বরং রাষ্ট্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে ধীরে ধীরে ছিটকে পড়ছে। রাষ্ট্রে আজ ধর্মীয় মৌলবাদীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে। এমনিতর এক বাস্তবতায় সংখ্যালঘু ও আদিবাসী সকলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার আদায় করে নিতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদন করলেও চুক্তির ২৩ পর চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে এবং আদো বাস্তবায়ন করবে কিনা তা ভাবার যথেষ্ট কারণ করেছে। আমরা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ সবসময়ই চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে কথা বলেছি, আমাদের জাতীয়,বিভাগীয় এমনকি জেলা সম্মেলনে অধিকার আদায়ের কথা বলেছি। আপনারা যারা রয়েছেন তাদের সবাইকে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে জনসংহতি সমিতির সাথে সামিল হতে হবে।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, পাবর্ত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, রাষ্ট্র শোষণ বঞ্চনা ব্যতীত পাহাড়ীদের আর কিছু দিতে পারে নাই। ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের ২৩ বছর পার হতে চললেও চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো এখনও বাস্তবায়িত না হওয়ায় বক্তারা সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। উল্টো বর্তমান সরকার প্রতিনিয়ত চুক্তি লঙ্ঘন করে চলেছে এবং চুক্তি স্বাক্ষরকারী অন্যতম পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শাসকগোষ্ঠী জুম্ম জনগণের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য নামে-বেনামে বিভিন্ন সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ দিয়ে জনসংহতি সমিতিসহ অধিকারকামী কর্মীদের খুন, গুম, হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে এবং নিরীহ মানুষসহ জনসংহতি সমিতির নেতাকর্মীদের নামে শত শত মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘরছাড়া করে রেখেছে।
বক্তারা সম্প্রতি চিম্বুক পাহাড়ে ম্রো আদিবাসীদের জীবন-জীবিকার ভূমি বেদখলের ঘটনাকে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, স্থানীয় আদিবাসীদের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও সেনা কল্যাণ সংস্থা ও সিকদার গ্রুপ কর্তৃক পাঁচ তারকা হোটেল এবং পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ কখনও মেনে নেওয়া যায় না এবং সেটি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিরও চরম লঙ্ঘন। যেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত নেই সেখানে বিলাসবহুল পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ কার স্বার্থে? পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নে নামে ভূমি উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে।
বক্তারা বলেন, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরাম চট্টগ্রাম অঞ্চলে শ্রমজীবী মেহনতী মানুষের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি জনসংহতি সমিতির সহযোগী হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনেও সদা সর্বদা রাজপথে রয়েছে এবং চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এ লড়াই চালিয়ে যাবার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
পরে বিকালের অধিবেশনে অমর কৃষ্ণ চাকমাকে সভাপতি, জগৎ জ্যোতি চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক এবং রুবেল তঞ্চঙ্গাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়।