হিল ভয়েস, ২২ নভেম্বর ২০২০ চট্টগ্রাম: বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে আদিবাসী ম্রোদের ভূমি জবরদখল করে পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ ও বিনোদন পার্ক স্থাপনের প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের যৌথ উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ রবিবার বিকাল ৩ টার দিকে পিসিপি’র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, চট্টগ্রাম মহানগর শাখা ও পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের যৌথ উদ্যোগে শহরে এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
পিসিপির মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অনুজ চাকমার সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য হ্লামিউ মারমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণ চাকমা, মহানগর শাখার সহ সাধারণ সম্পাদক এন্দ্রিয় চাক, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এলিন চাকমা, টিএসএফ এর চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি নয়ন ত্রিপুরা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট্স কাউন্সিল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উথোয়াই চিং মারমা প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সুখী কুমার তংচংগ্যা।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, চিম্বুক পাহাড়ে ফাইভ স্টার হোটেল ও বিলাসবহুল পর্যটন স্থাপনা নির্মাণের ফলে বহু ম্রো জনগোষ্ঠী তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাবে। যার ফলে শত বছর ধরে বসবাস করা ম্রো জনগোষ্ঠীর অনেকেই বাস্তুহারা হয়ে যাবে এবং তাঁদের চিরায়ত ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং জীবন-জীবিকার সমস্ত কিছুই হারাতে বাধ্য হবে। তাই স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অবিলম্বে পাঁচ তারকা হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে করতে হবে। গণবিরোধী এ কর্মকান্ডের প্রতিবাদে দেশের প্রগতিশীল নাগরিকদের আরো সোচ্চার হতে হবে।
বক্তারা বলেন, সেনাবাহিনী এবং সিকদার গ্রুপ একত্রে চিম্বুক পাহাড়ে ম্রো আদিবাসীদের ভূমি বেদখল করে যে বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেল ও পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ করছে, সেটি সম্পূর্ণরূপে পার্বত্য চুক্তির চরম লঙ্ঘন এবং এর পরবর্তী যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদেরকেই দায় বহন করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, পাহাড়ে তথাকথিত উন্নয়নের নামে ভূমি বেদখল করে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। যার ফলে আদিবাসীদের জীবন জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।
বক্তারা শাসকগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, পাহাড়ে উন্নয়নের নামে ভূমি উচ্ছেদের যে উৎসব চলবে এবং আদিবাসীদের অস্তিত্বকে পার্বত্য অঞ্চল থেকে মুছে ফেলার যে ষড়যন্ত্র চলছে, তার পরিণাম সমগ্র দেশের জন্য কখনো সুখকর হবে না। বক্তারা দেশের সামগ্রিক স্বার্থে সরকার তথা শাসকগোষ্ঠীকে জুম্ম উচ্ছেদের এ ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিভিল প্রশাসনসহ সবাইকেই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো লঙ্ঘিত হয় এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি চেরাগী পাহাড় থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব হয়ে চেরাগী পাহাড় মোড়ে এসে শেষ হয়। এসসময় বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন হাতে চিম্বুক পাহাড়ে ফাইভ স্টার হোটেল ও বিনোদন পার্ক নির্মাণ উদ্যোগের প্রতিবাদ জানানো হয়।