হিল ভয়েস, ৩০ নভেম্বর ২০২০, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি: বান্দরবান পার্বত্য জেলার চিম্বুক পাহাড়ে উন্নয়নের নামে আদিবাসী ম্রোদের উচ্ছেদ এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে জোরপূর্বক ভূমি বেদখল করে সেনাকল্যাণ ট্রাস্ট ও সিকদার গ্রুপ কর্তৃক পাঁচ তারকা হোটেল ও এমিউজমেন্ট পার্ক পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়ে আবারও রাঙ্গামাটিতে মানববন্ধন এবং খাগড়াছড়িতে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ৩০ নভেম্বর ২০২০ সকালের দিকে রাঙ্গামাটি ডিসি অফিসের দক্ষিণ ফটকে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ছাত্র সমাজ ও সচেতন নাগরিকবৃন্দ’এর উদ্যোগে। অপরদিকে প্রায় একই সময়ে খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে মুক্তমঞ্চে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয় ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত ছাত্র সমাজ ও সচেতন নাগরিকবৃন্দ’ নামে একই ব্যানারে। উভয় অনুষ্ঠানের ব্যানারে শ্লোগান ছিল- ‘উন্নয়নের নামে পাহাড়ে ভূমি বেদখল বন্ধ কর”।
রাঙ্গামাটির মানববন্ধনে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মংশিচিং মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য মিজ. নিরুপা দেওয়ান, রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রাম্রাচাই মারমা, বিটন চাকমা, জগদীশ তঞ্চঙ্গ্যা, সীমা ত্রিপুরা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কাকলি তঞ্চঙ্গ্যা প্রমুখ।
এসময় মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল, পর্যটন চাই না, চাই প্রকৃতির সৌন্দর্য। পাহাড়ের আদিবাসী মানুষকে উচ্ছেদ করে পর্যটন আমরা চাই না। সেখানে হোটেলের চেয়ে হাসপাতাল ও স্কুল বেশি দরকার।’
বক্তারা আরও বলেন, ‘বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেল কখনো পাহাড়ের উন্নয়নের স্মারক হতে পারে না। প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয় এমন সব কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে যেমন ভূমিকা রাখতে হবে, সাথে প্রকৃতির নিজস্ব সত্তাও অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।’
বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস্ কাউন্সিল (বিএমএসসি) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিঅং মারমা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত খাগড়াছড়ির সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ত্রিপুরা স্টুডেন্টস্ ফোরাম এর কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রেম ত্রিপুরা, সাধারণ সম্পাদক নক্ষত্র ত্রিপুরা, বিএমএসসি’র খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সভাপতি ক্যপ্রু মারমা, সাধারণ সম্পাদক নিঅংগ্য মারমা। এছাড়া সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন কার্বারী প্রতিনিধি তেজেন্দ্র রোয়াজা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট’র কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি কৃপায়ন ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন’র প্রতিনিধি নিতি চাকমা, মাতাই পুখিরী স্বেচ্ছাসেবক কমিটির সভাপতি পিন্টু ত্রিপুরা প্রমুখ। সমাবেশে সঞ্চালনা করেন ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম এর সাংগঠনিক সম্পাদক অঞ্জুলাল ত্রিপুরা।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘অনতিবিলম্বে চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচ তারকা হোটেল এবং পর্যটন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ ও নির্মাণের লীজ বাতিল করা না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। বিলাসবহুল হোটেল, উন্নয়নের নামে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন না করে আগে পাহাড়ের সকল মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে।’
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে জেলা-উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ছাত্র, তরুণ ও যুবকরাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন। এসময় তাদের হাতে ছিলো নিজেদের দাবির পক্ষে লেখা বিভিন্ন দাবি, ভূমিদখল বিরোধী বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন।
রাঙ্গামাটির মানববন্ধন ও খাগড়াছড়ির সমাবেশ থেকে নিম্নোক্ত ৪টি দাবি উত্থাপন করা হয় –
১. পার্বত্য জেলা পরিষদের মর্যাদা ও ভাবমূর্তির স্বার্থে অবিলম্বে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক সম্পাদিত আইনি কর্তৃত্ব ও এখতিয়ার বহির্ভূত লিজ সংক্রান্ত চুক্তি বাতিল করা।
২. উন্নয়নের নামে পাহাড়ে জুম্মদের উচ্ছেদ বন্ধ করা হোক।
৩. অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের মাধ্যমে এতদাঞ্চলের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কাজ শুরু করা হোক।
৪. যে উদ্দেশ্যেই চিম্বুক ও নাইতং পাহাড়ের ব্যবহার করা হোক না কেন তা যেন স্থানীয় কার্বারী, হেডম্যান ছাড়াও অত্রাঞ্চলের পাড়াবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করে আলোচনা করা হোক।