হিল ভয়েস, ১৬ অক্টোবর ২০২০, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলংগা থানাধীন চৈত্রহাটি গ্রামের শ্রীশ্রী জগদীশ্বরী মাতা মন্দির ভূমিদস্যুদের কবল থেকে রক্ষা ও আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়ের নামে মিথ্যা হত্যা মামলা প্রত্যাহারসহ ১০ দফা দাবিতে সিরাজগঞ্জ ডিসি অফিস ঘেরাওসহ প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
গতকাল ১৫ অক্টোবর ২০২০ স্মারকলিপি পেশ করার আগে সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার স্টেশন সংলগ্ন মুক্তির সোপান চত্বরে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, উল্লাপাড়া উপজেলা শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ উল্লাপাড়া উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক সুশীল মাহাতোর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, সাধারণ সম্পাদক সবিন চন্দ্র মুন্ডা, সাংগঠনিক সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়ার, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় সভাপতি নকুল পাহান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিরাজগঞ্জ জেলা সভাপতি ইসমাইল হোসেন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সিরাজগঞ্জ জেলা সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) নওগাঁ জেলা সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিন মুকুল, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ পাবনা জেলা সহ-সভাপতি ও দিলপাশা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রণব কুমার ঘোষ প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, তাড়াশ, পাবনা জেলার চাটমোহর ও ভাঙড়া উপজেলাগুলোতে মুন্ডা, উঁরাও, কুর্মি, মাহাতো, বেদিয়া, মাহাতো, গঞ্জু, মালো, ঘাসি মালো, রবিদাস, রাই, ভুমিজ স¤প্রদায়ভুক্ত আদিবাসীরা প্রাচীনকাল থেকে বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছেন। এসব স¤প্রদায়ের লোকজন চৈত্রহাটি শ্রী শ্রী জগদ্বিশ্বরী মাতার ভক্ত। এ মন্দিরটির নামে ৩শ ৪২ একর সম্পত্তি রয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন জেলা এমনকি ভারত থেকে এসেও এখানে পূজা করেন। কতিপয় স্থানীয় ভূমিদস্যু মন্দিরের এই সম্পত্তি জবর দখল করে রেখেছেন। আরও দখলের পায়তারা করছেন। জমি দখলের উদ্দেশ্যে আদিবাসীদের উপর হামলা ও মারপিট চালিয়ে যাচ্ছে তারা। চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলতাব হোসেনের নেতৃত্বে শতাধিক লোকজন আদিবাসী স¤প্রদায়ের লোকজনের উপর হামলা করে। এতে ৮ জন আহত হন। তাদেরই একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এদিকে আদিবাসীদের আবার উল্টো হত্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
মামলার কারণে মুন্ডা জাতিসত্তার পুরুষেরা দীর্ঘ ৬ মাস ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ভূমিদস্যুদের হামলায় আহত হয়ে অলোকেশ মুড়ারী গত ১৪ অক্টোবর বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। নিহত অলোকেশ মুড়ারীর পরিবার হত্যাকারীদের শাস্তির ও আদিবাসীদের নামে মিথ্যা হত্যা মামলা প্রত্যাহার এবং নিরাপত্তা বিধানের জোরালো দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে আদিবাসীরা বিশাল মিছিল নিয়ে ডিসি অফিস ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হলে পুলিশ বাধা প্রদান করলে আদিবাসীরা শহিদ মিনারের সামনের রাস্তায় বসে স্লোগান দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। পরে কয়েকজন প্রতিনিধি গিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন।