বাচ্চু চাকমা
গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকায় এক গৃহবধূর বাড়িতে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখেন স্থানীয় ধর্ষক বাদল ও তার সহযোগীরা। এরপর ধর্ষণের চেষ্টা করতে গিয়ে গৃহবধূ বাধা দিলে তারা বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে এবং মোবাইলে ভিডিওচিত্র ধারণ করেছে। সেই ভিডিওটি রীতিমত ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। এরকমের বর্বর ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয় এবং রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রগতিশীল ছাত্র-জনতা ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীসহ প্রগতিশীল ছাত্র যৌবনের নেতৃত্বে শাহবাগে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয় এবং সেই বিক্ষোভ মিছিল থেকে স্লোগান উঠে আসছে “আওয়ামী লীগের সরকার-ধর্ষকদের পাহারাদার, যেই রাষ্ট্র ধর্ষক পোষে-সেই রাষ্ট্র ভেঙে দাও, ছিঃ ছিঃ ছিঃ হাসিনা-লজ্জায় বাঁচি না”। এরকমই স্লোগানে-স্লোগানে ছাত্র-জনতার উত্তাল জনস্রোতে ভরে উঠছে শাহবাগের ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। ছাত্র যৌবনের ক্ষোভের আগুন বাংলাদেশের চারিদিকে দাবানলের মতোই ছড়িয়ে পড়ছে।
নোয়াখালীতে নারীকে বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানিসহ সারা দেশে একের পর এক ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনার বিচারের দাবিতে দুপুর ১২টার দিকে শাহবাগে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো জড়ো হন প্রগতিশীল ছাত্র যৌবনরা। প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী, লেখক, কবি, শিল্পী, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও নারী অধিকারকর্মীরাও এই ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী বিক্ষোভে যোগ দেয়। আন্দোলনের ধারাবাহিক একটা অংশ হিসেবে গত ৬ অক্টোবর ২০২০ সারা দেশে একের পর এক ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনার বিচারের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে কালো পতাকা মিছিলে পুলিশ বাধা দেয় এবং ছাত্র যৌবনের সাথে পুলিশের হাতাহাতি ও লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্র ইউনিয়নের ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওয়ালে ওয়ালে ধর্ষণবিরোধী চিত্রকর্ম আঁকিয়ে ছাত্র-যুব চিত্রশিল্পীদের উপর পুলিশ চড়াও হয়েছে। এই প্রগতিশীল ছাত্র যৌবনরা সারা দেশে আন্দোলনের মাধ্যমে গণজোয়ার সৃষ্টি করে এদেশ থেকে ধর্ষণ শব্দটি মুছে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু সরকারের পুলিশ বাহিনী ছাত্র যৌবনের মিছিলের উপর বাধা দেয়। এছাড়া গত ২৫ সেপ্টেম্বর এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হন এক নববধূ। রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্বামীর কাছ থেকে ওই নববধূকে জোর করে তুলে নিয়ে এবং তার স্বামীকে কলেজের সামনে বেঁধে রেখে ছাত্রাবাসে ধর্ষণ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
একজন মানবতাবাদী মানুষ ধর্ষকদের বর্বরতা দেখে কোনদিনই নিঃশ্চুপ হয়ে বসে থাকতে পারে না। যখন আমার প্রগতিশীল ছাত্র যৌবনরা শোষণ, নিপীড়নের উত্তাপের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে আসছে এবং ধর্ষকদের পাহারাদার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ডাক দেয় তখন আমিও তাদের সাথে সহমত পোষণ করছি। প্রগতিশীল ছাত্রজোটের রাজপথের বিক্ষোভ ও ছাত্র-জনতার বিশাল জমায়েত আর আমার প্রিয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ছাত্র যৌবনদের ফেসবুকের ওয়ালে ওয়ালে ধর্ষণের বিরুদ্ধে ফেসবুক প্রোফাইলে কালো প্রতীক চিহ্ন দিয়ে মৌন মিছিলের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের সংহতি প্রকাশ করছে সেটা দেখে মনে হচ্ছে ধর্ষকদের পাহারাদার আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের ঘন্টা বেজে উঠছে।
কারণ ৯০ এর স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পর যে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে আওয়ামী লীগ আজ সেই পুনরুদ্ধার করা গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছে। দেশের ১৭ কোটি মানুষের সাথে আওয়ামী লীগ সরকার চরমভাবে প্রতারণা করছে। দেশের মধ্যে দুর্নীতিবাজ আর ধর্ষক এই দু’টি শ্রেণিকে রক্ষা করার জন্যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করেছে। সমগ্র বাংলাদেশে বিচার-বিশ্লেষণে মানবতা ও মনুষ্যত্বকে বিকাশের বিপরীতে দুর্নীতিবাজ ও ধর্ষকদের বর্বরতার বিকাশ ঘটছে। তৃনমূল পর্যায়ে জনগণের জন্য উন্নয়ন হয়নি, উন্নয়ন হয়েছে কেবল দুর্নীতিবাজ ও ধর্ষকদের। তাহলে প্রশ্ন হল এই রাষ্ট্রটি কার? দুর্নীতিবাজ ও ধর্ষকদের পাহারাদার আওয়ামী লীগ সরকারের নাকি বাংলাদেশের গরীব মেহনতি মানুষের সরকার? বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সরকার নিঃসন্দেহে গরীবদের সরকার নয়, মোদ্দা কথায় দুর্নীতিবাজ ও ধর্ষকদেরই একমাত্র পাহারাদার হল আওয়ামী লীগের সরকার।
২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ সাভারে নীলা রায়কে তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও প্রেমের প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় হত্যার পর পরই ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ দিবাগত রাতে খাগড়াছড়ি জেলার সদরের গোলাবাড়ি ইউপি অফিস সংলগ্ন বলপিয়ে আদামে ৯ জন মুসলিম বাঙালি সেটেলার কর্তৃক একজন মানসিক প্রতিবন্ধী জুম্ম নারীকে গণধর্ষণ, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ সিলেটের এমসি কলেজের গণধর্ষণের ঘটনা এবং সর্বশেষ সম্প্রতি ৪ অক্টোবর ২০২০ নোয়াখালী বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে যৌন হয়রানিসহ ধারাবাহিকভাবে ধর্ষক নরপশুরা মধ্যযুগীয় কায়দায় সুপরিকল্পিতভাবে ঘটনাগুলো সংগঠিত হচ্ছে। পত্রিকা খুললে চোখে পড়ে আদিবাসী নারী ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা এবং ফেসবুক খুললেও একই অবস্থা। নারী ধর্ষণের ঘটনাগুলো বাংলাদেশে নিত্যদিনের ধর্ষকদের রুটিন ওয়ার্ক মনে হচ্ছে। মনে হয় যেন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ধর্ষণটাই একটা সংস্কৃতি, যার কারণে প্রজন্ম হতে প্রজন্ম এই ধর্ষণের বর্বর সংস্কৃতি লালন করছেন। দেশের মানুষ আজ লজ্জা আর ঘৃণায় মুখ তুলে কথা বলতে পারছে না। ছাত্র যৌবনরা রাগে-ক্ষোভে বিক্ষোভে তুষের আগুনে পুষে উঠছে।
অতীতের ছাত্র আন্দোলনের অভিজ্ঞতা বর্তমানে ছাত্র যৌবনদের প্রেরণা জোগাবে। ৯০-এর স্বৈরাচার এরশাদ সরকার পতনের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ছাত্র যৌবনদের একটু ফিরে নিয়ে যেতে চাই। ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালে বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গড়ে উঠা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মিছিলে সেনাবাহিনীর হামলা বেশ কয়েকজন ছাত্র নিহত হলে তখন থেকে স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে একটি লাগাতার ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর। ১৯৯০ সালের ১০ই অক্টোবর জেহাদ নামে একজন ছাত্র পুলিশ কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হলে সেই মৃত জেহাদের লাশকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে তৎকালীন ক্রিয়াশীল সকল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সেখানে উপস্থিত হয় । ২৪টি ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে গড়ে উঠে “সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য”। সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠনের মাধ্যমে ছাত্র যৌবনের সকল শক্তি একই জায়গায় মিলিত হয়েছিল। তখন বামধারার ছাত্র সংগঠনগুলো যথেষ্ট পরিমাণে সাংগঠনিক শক্তির অধিকারী ছিল এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ সমর্থিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী ইত্যাদি। সব কয়টি ছাত্র সংগঠনের মিলিত শক্তির আন্দোলনের কাছে সেনাবাহিনী সমর্থিত এরশাদ সরকার টিকতে পারে নাই।
সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য এর আন্দোলনের সাথে দেশের জনগণ সম্পৃক্ত হলে তা গণআন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। সেই গণঅভ্যুত্থানে জেনারেল এরশাদ ৪ঠা ডিসেম্বর পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং ৬ই ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন । দীর্ঘ ৯ বৎসর পরিচালিত আন্দোলন ৯০-এ এসে গণআন্দোলনের রূপ নেয় । মনে রাখতে হবে, ৯০-এর আন্দোলনের সফল সমাপ্তি ঘটেছিল মূলত ছাত্রনেতাদের দৃঢ়তায়। অতীতের ছাত্র যৌবনদের সেই দৃঢ়তা আজ বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এবং বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীসহ সকল প্রগতিশীল ছাত্র যৌবনের কাছে আমি দেখতে পাচ্ছি। নারী ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনে বাংলার আপামর জনতা সম্পৃক্ত হলে গণআন্দোলনে রুপ নিয়ে ধর্ষকদের পাহারাদার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের অনিবার্য পরিণতির দিকে এগিয়ে যাবে। তাই আন্দোলন চলমান রাখতে হবে।
একজন নারীকে বিবস্ত্র, গণধর্ষণ, ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলার আকাশে-বাতাসে আবারও বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে। সারা দেশের ছাত্র যৌবন বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠলে তাদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের সাথে ডাক্তার, আইনজীবী, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ সবাই সম্পৃক্ত হবে। কাজেই দুর্নীতিবাজ ও ধর্ষকদের পাহারাদার আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছাত্র যৌবনদের জেগে উঠার উপযুক্ত সময়, ক্ষোভের আগুন সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। ধর্ষকদের জঘন্যতম ধর্ষণের ঘটনা দেশের মানুষ কখনো মানতে পারছে না। একটা দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হলে সর্বপ্রথম সামনে সারিতে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায় ছাত্র যৌবন। বাংলাদেশের আপামর জনতা চেয়ে আছে বাংলার ছাত্র যৌবনের দিকে, কখন আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে পতনের ঘন্টা বাজাবে। হারানোর গনতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হলে ৯০ এর স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের আন্দোলনের উত্তাল ১০ দিনের ঐতিহাসিক বাস্তবতায় আবারও ছাত্র যৌবনদের ফিরে যেতে হবে। আমি সেরকমই একটা পূর্বাভাস দেখতে পাচ্ছি শাহবাগের মোড়ে-মোড়ে, ছাত্র যৌবনের স্লোগানে-স্লোগানে।
যে খেলোয়াড় শুধু খেলা নিয়ে পড়ে থাকতো, রাজনীতি নিয়ে ভাবতে তেমন সময় পর্যন্ত পেতো না, তাকেও আজ ধর্ষণের মতো জঘন্য, ঘৃণ্য, বর্বরতার বিরুদ্ধে কথা বলতে হচ্ছে। কারণ, তার মা, তার বোন, তার স্ত্রী সবাই এই ধর্ষকদের কাছে নিরাপদ নয়। ধর্ষণের বিরুদ্ধে কথা বলা মানেই ধর্ষকদের পাহারাদার আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার সামিল। কেননা, এই ধর্ষক নরপশুরা আওয়ামী লীগের এক একজন সদস্য, ছাত্রলীগের এক একজন সদস্য, রাষ্ট্রযন্ত্রের লালিত-পালিত সেটেলার সদস্য এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীর এক একজন সদস্য যারা সরকারের আশ্রয় প্রশ্রয়ে লালিত-পালিত হচ্ছে। তাই আমার কথা হচ্ছে, খেলোয়াড় জাগো, শিক্ষক জাগো, আইনজীবী জাগো, ডাক্তার জাগো, বুদ্ধিজীবী জাগো, নাগরিক সমাজ জাগো, নারী অধিকার কর্মীরা জাগো, বাংলার সকল শ্রেণি পেশার মানুষ জাগো এবং জাগো আমার প্রিয় ছাত্র যৌবন, জাগো এবং জাগ্রত হও।
৯০-এর আন্দোলন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন, এবারের ছাত্র যৌবনের আন্দোলন হবে বিশেষ করে তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে। এক নম্বর: ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড, দ্বিতীয় নম্বর: দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোর এমপি, মন্ত্রী ও আমলাদের পদচ্যুত করা, এবং তৃতীয় নম্বর: গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে ছাত্র যৌবনদের রাজপথের আন্দোলনে নেমে আসতে হবে, আন্দোলনকে দৃঢ়তার সঙ্গে নেতৃত্ব দিতে হবে। আমি আরও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ৯০-এর ২৭ নভেম্বর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের অন্যতম কর্মী মিলনকে এরশাদের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা টিএসসির মোড়ে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। ফলে আগুনের মতো বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। বিক্ষোভ দমনে সেদিনের স্বৈরাচারী সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। জরুরি অবস্থা সত্ত্বেও আন্দোলন তীব্র হতে তীব্রতর হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনকে ঘিরে শেষ ১০ দিন বিদ্রোহের আগুনে জ্বলছিল সারা দেশের ছাত্র যৌবন। যার কারণে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সফল হয়। এবারেও ছাত্র যৌবনদের স্মরণে রাখতে হবে, নিপীড়িত মানুষের মুক্তি ভিক্ষা করে পাওয়া যায় না, সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে নিজের মুক্তি নিজেকে আনতে হয়। তাই ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি মৃত্যুদন্ড, দুর্নীতিবাজদের পদচ্যুত করে দুর্নীতি থেকে দুর্নীতিবাজদের ছড়িয়ে দেওয়া এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সারা দেশে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে দিতে হবে। ছাত্র যৌবনরা পারে না পৃথিবীতে এমন কোন কাজ নেই।
তাই সমাজের মধ্যে এধরনের বর্বর, নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে একজন নারীকে বিবস্ত্র, ধর্ষণ এবং শুধু ধর্ষণ নয় গণধর্ষণ, হত্যা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছাত্র যৌবন রাস্তায় নেমেছে। বর্তমান সময়টা মধ্যযুগ নয় কিন্তু মধ্যযুগীয় কায়দায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা নৃশংসভাবে একজন নারীকে বিবস্ত্র করে নিপীড়ন, ধর্ষণ ও হত্যার মতোই জঘন্য ঘটনা ঘটাচ্ছে। নারীরা আজ ধর্ষণের মতো বর্বরতার শিকার হয়ে অপমানের ওজন বহন করতে পারছে না। আমাদের সমাজ, দেশের আপামর জনতা, প্রগতিশীল শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, ডাক্তার সকল পেশার মানুষ ও প্রগতিশীল ছাত্র যৌবনরা এই অপমান সহ্য করতে পারছে না। সভ্য সমাজের এমন অসভ্যতা সত্যিকার অর্থে নিন্দনীয়। যে মায়ের উপর নির্মমভাবে হিংস্রতার আক্রমণ চালানো হচ্ছে, দলগতভাবে ধর্ষণ করে মাকে অপদস্ত করছে, লাঞ্ছিত ও চরমভাবে অপমানিত করছে সেই সকল হিংস্র নরপশুদের কখনো ক্ষমা করা যায় না। এই ধর্ষণকারীরা মানুষ নয়, এরা মানুষরূপী হিংস্র নরপশু।
তাই প্রতিবাদের ভাষা হোক আরও অধিকতর তীব্র, বলিষ্ঠ এবং আপোষহীন। এই প্রতিবাদের ভাষায় যেন মানুষরূপী নরপশুদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা অত্যাচারী স্বৈরশাসক, ধর্ষকদের পাহারাদার আওয়ামী লীগ সরকারের টনক নড়ে উঠে। প্রতিবাদ মিছিলের স্লোগান ও সমাবেশের ছাত্র যৌবনের বক্তব্য যেন পৃথিবীর সীমা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। দেখিয়ে দিতে হবে, আমরা যেমনি এই ভূমিতে লড়াই করে বাঁচতে শিখেছি তেমনি যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধেও রুঁখে দাঁড়াতে জানি। ছাত্র যৌবন রুঁখে দাঁড়িয়েছে ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলনে, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ৯০ এর স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের পর গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে, বাংলার ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে ছাত্র যৌবনরা তা করে দেখিয়েছেন। সবশেষ কথা, ধর্ষকদের পাহারাদার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হোক-ছাত্র যৌবনের জয় হোক!