হিল ভয়েস, ১৭ অক্টোবর ২০২০, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলীতে জনৈক বাঙালি মাছ ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনায় মিথ্যাভাবে জড়িত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) এর স্থানীয় নেতাকর্মীসহ ২৩ নিরীহ জুম্মর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া তথাকথিত ‘অস্ত্রধারী পাহাড়ি সন্ত্রাসী’ বলে উল্লেখ করে আরও ১০/১৫ জন অজ্ঞাতনামা জুম্মকেও মামলায় অভিযুক্ত করা হয়।
মামলায় মিথ্যাভাবে অভিযুক্ত ২৩ আসামী হলেন- ১। সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা (৫০), পিতা-বিনয় কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম-হেডম্যান পাড়া, রাজস্থলী; ২। পুলখয় মারমা (৫৫), পিতা-মৃত থোয়াইঅংখই মারমা, গ্রাম-গাইন্দা পাড়া, রাজস্থলী; ৩। সুবাস তঞ্চঙ্গ্যা (৪০), পিতা-লালন তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম-মহব্বত পাড়া, রাজস্থলী; ৪। রাহুল তঞ্চঙ্গ্যা (৪০), পিতা-মৃত পাকাইয়া তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম-নারাইছড়ি ঘিলামুখ পাড়া, রাজস্থলী; ৫। সান্তলাল চাকমা (৪০), পিতা-জীবন্ত মহাজন, গ্রাম-অংজাইন পাড়া, রাজস্থলী; ৬। রবিন তঞ্চঙ্গ্যা (২৮), পিতা-জীবন্ত মহাজন, গ্রাম-অংজাইন পাড়া, রাজস্থলী; ৭। দুর্জয় চাকমা (২৮), পিতা-অজ্ঞাত, গ্রাম-ভালুকিয়া, থানা-চন্দ্রঘোনা; ৮। শ্যামল তঞ্চঙ্গ্যা (৩৫), পিতা-পঞ্চজয় তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম-চিংখ্যং পাড়া, রাজস্থলী; ৯। জেকশন খেয়াং (৩৮), পিতা-চিংথোয়াই উ খিয়াং, গ্রাম-জিম্রং পাড়া, রাজস্থলী; ১০। জনি মারমা (৩০), পিতা-অজ্ঞাত, গ্রাম-জুরাইছড়ি, রাজস্থলী; ১১। থুইচিনু মারমা (৪৫), পিতা-অজ্ঞাত, গ্রাম-হাফছড়ি, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা; ১২। মেফা মারমা (৪৫), পিতা-অজ্ঞাত, গ্রাম-নারাংগিরি, চন্দ্রঘোনা; ১৩। উচানু মারমা সাগর (৩৭), পিতা-আপ্রুমং মারমা, গ্রাম-গাইন্দা, রাজস্থলী; ১৪। ক্যবা মারমা (৪০), পিতা-উথোয়াই মারমা, গ্রাম-ওগাড়ী পাড়া, রাজস্থলী; ১৫। মংয়সিং মারমা (৩২), পিতা-থোয়াইনুচিং মারমা, গ্রাম-নাইক্য বান্দারা পাড়া, রাজস্থলী; ১৬। প্রসিংমং মারমা (৩৭), মাতা-কোয়ইচিংমে মারমা, গ্রাম-নাইক্য বান্দারা পাড়া, রাজস্থলী; ১৭। কাজল কুমার তঞ্চঙ্গ্যা (৩০), পিতা-কালাচুলা তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম-শীলছড়ি পাড়া, রাজস্থলী; ১৮। খাইপাইপ্রু মারমা পাইপ্রু (৪২), পিতা-আথুইম মারমা, গ্রাম-অজ্ঞাত; ১৯। অমরাজিত তঞ্চঙ্গ্যা (৩০), পিতা-বালাধন তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম-ঘিলামুখ, রাজস্থলী; ২০। সাংকুইল্যা তঞ্চঙ্গ্যা, পিতা-অজ্ঞাত, গ্রাম-ভালুকিয়া, চন্দ্রঘোনা; ২১। পুলুশি মারমা, পিতা-উথোয়াই মারমা, গ্রাম-কারিগর পাড়া, রাজস্থলী; ২২। বাছাই মং মারমা (৩০), পিতা-অজ্ঞাত, গ্রাম-হাফছড়ি, রাজস্থলী; ২৩। রদিল তঞ্চঙ্গ্যা (৪২), পিতা-মৃত যতন কুমার তঞ্চঙ্গ্যা, গ্রাম-অজ্ঞাত, রাজস্থলী।
মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে পুলখয় মারমা (পুলুখই মারমা) (৫৫) পিসিজেএসএস’এর রাজস্থলী থানা কমিটির সভাপতি, সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা (৫০) সাধারণ সম্পাদক, সুবাস তঞ্চঙ্গ্যা (সুভাষ তঞ্চঙ্গ্যা) (৪০) সাংগঠনিক সম্পাদক, রাহুল তঞ্চঙ্গ্যা (৪০) পিসিজেএসএস’এর ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি এবং সান্তলাল চাকমা (৪০), রবিন তঞ্চঙ্গ্যা (২৮), শ্যামল তঞ্চঙ্গ্যা (৩৫) ও জেকশন খেয়াং (৩৮) তারা সকলেই রাজস্থলী যুব সমিতির সদস্য এবং উচানু মারমা সাগর (৩৭) ও রদিল তঞ্চঙ্গ্যা (৪২) তারা উভয়েই যুব সমিতির যথাক্রমে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি। এছাড়া আসামীদের মধ্যে অন্যান্যরাও পিসিজেএসএস’এর কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ গ্রামবাসী বলে জানা গেছে।
গত ৯ অক্টোবর ২০২০ মামলাটি দায়ের করেন রাজস্থলী উপজেলার ১নং ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের বাজার পাড়া এলাকার বাসিন্দা নিহত মাছ ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন রিপনের স্ত্রী শাহিনা আক্তার (১৯)। রাজস্থলী থানায় মামলা নং-০১, তারিখ-০৯.১০.২০২০, ধারা-১৪৩/৪৪৮/৩০২/১২০-খ/৩৪ দন্ডবিধি।
মামলার বাদী শাহিনা আক্তার তার এজাহারে ‘১-১০নং পর্যন্ত আসামীদের পরিকল্পনায় ও নির্দেশনামতে, ১১-২৩নং পর্যন্ত আসামীদের সহযোগিতায়, অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১৫ জন সশস্ত্র পাহাড়ি সন্ত্রাসী তাদের ঘরের শয়নকক্ষে প্রবেশ করে তার স্বামীকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করে’ বলে উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ অক্টোবর ২০২০ দুপুর ১:০০ টার দিকে রাজস্থলী উপজেলার বাজার পাড়া এলাকায় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তের ব্রাশ ফায়ারে নিজ বাড়িতে মাছ ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন রিপন গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। জানা গেছে, নিহত জামাল উদ্দিন রিপনের বড় ভাই সারোয়ার আলম দিকন স্থানীয় সন্ত্রাসী সংগঠন মগ লিবারেশন পার্টি (এমএলপি) এর চাঁদা সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করেন। ধারণা করা হয়, তারই সূত্র ধরে সৃষ্ট কোন্দলের ফলে একটি পক্ষ বড় ভাই সারোয়ার আলম দিকনকে মারতে এসে ছোট ভাই জামাল উদ্দিন রিপনকে মেরে যায়।