হিল ভয়েস, ২৯ অক্টোবর ২০২০, বান্দরবান: বান্দরবান পার্বত্য জেলার থানচি উপজেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-র নির্দেশনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছয় গ্রাম প্রধান ও হেডম্যানকে তাদের গ্রামগুলোকে ‘অবৈধভাবে স্থাপিত পাড়া’ বলে উল্লেখ করে এক চিঠি প্রেরণ করেছে।
চিঠিতে জুম্মদের গ্রামগুলোকে ‘অবৈধভাবে স্থাপিত পাড়া’ বলে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনি গ্রামগুলোতে ‘সন্ত্রাসীরা আনাগোনা ও অবস্থান করে’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসী ও আদিবাসী অধিকারকর্মীরা এটাকে একটি ‘গভীর ষড়যন্ত্রমূলক এবং আদিবাসী জুম্ম জাতি বিদ্বেষী এক চিঠি’ বলে অভিযোগ করেছেন।
গত ২১ অক্টোবর ২০২০ থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল হক মৃদুল ৩৮ বিজিবি ব্যাটালিয়ন বলিপাড়া জোনের স্মারক নং-৪৪.০২.৪৬৩০.১৩৮.০১.১৭৭৫.২০/১৮৫, তারিখ:১২/১০/২০২০ খ্রি: এর চিঠির বরাত দিয়ে উক্ত ছয় গ্রাম প্রধান ও সংশ্লিষ্ট হেডম্যানকে চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে।
উক্ত গ্রামগুলি হল- অনিল চেয়ারম্যানপাড়া, বলপেয়্যে পাড়া, কমলা বাগানপাড়া, প্রফুল্ল পাড়া, জ্ঞানলাল পাড়া, ব্রহ্মদত্ত পাড়া।
ইউএনওর চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘উপযুক্ত বিষয় ও সূত্রোক্ত পত্রের আলোকে জানানো যাচ্ছে যে, থানচি উপজেলাধীন দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় অবৈধভাবে নতুন করে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া স্থাপন করা হচ্ছে এবং অবৈধভাবে স্থাপিত নতুন পাড়াসমূহে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা ও অবস্থান করে বিভিন্ন সন্ত্রাসীমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে মর্মে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়। এমতাবস্থায় নতুন করে অবৈধভাবে পাড়া স্থাপন বন্ধ করাসহ ইতিপূর্বে স্থাপিত চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা পাড়াসমূহে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা ও অবস্থান এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ পূর্বক নিম্নস্বাক্ষরকারীকে (ইউএনও) অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রামবাসী ও আদিবাসী অধিকারকর্মী বলেন, আদিবাসীদের এই পাড়াগুলো মোটেও নতুন পাড়া বা গ্রাম নয়। আদিবাসী জুম্মরা এই দুর্গম এলাকায় দীর্ঘ বছর ধরে, এমনকি কেউ কেউ যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছেন। তারা জীবিকার প্রয়োজনে জুমচাষ ও বাগান-বাগিচা করে থাকেন এবং জুমের সাথে জুমঘর স্থাপন করে থাকেন। কাজেই এখানে নতুন বা অবৈধ পাড়া বলতে কিছু নেই।
তারা আরও বলেন, ইউএনও’র এই চিঠি ‘সন্ত্রাসীদের আনাগোনা’র কথা বলে আদিবাসী জুম্মদের স্বভূমি থেকে উচ্ছেদ ও হয়রানি করার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়।
স্থানীয় এক গ্রামবাসী জানিয়েছেন, সম্প্রতি ঐ এলাকায় সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র হয়রানিমূরক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা এলাকার হেডম্যান ও কার্বারিদের নিকট ‘তথাকথিত সন্ত্রাসী’দের তালিকাসহ গ্রামের জনসংখ্যার তালিকাও চেয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের এই চিঠির বিষয়ে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা বলেন, ‘এটি শাসকগোষ্ঠীর জুম্মদের ঘর নির্মাণে বাধা দিতে গোয়েবলসীয় কায়দায় চক্রান্ত। অথচ পাহাড়ে বাঙালি সেটেলারদের অবৈধভাবে জুম্মদের জায়গা দখল করতে কোন বাধা নেই।’
গতকাল সুহৃদ চাকমা নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘জুমিয়ারা তাদের নিজস্ব পাহাড়ের ভূমিতে গ্রাম বা পাড়া নির্মাণ করতে পারবে না, এটা কোন ধরনের মধ্যযুগীয় বর্বরতা! পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মরা কোথায় ঘর করবে, কোথায় গ্রাম করবে, কোথায় জুম চাষ করবে সেটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এবিষয়ে নাক গলানো আপনারা কে? রাষ্ট্র কি সেই দায়িত্ব আপনাদের দিয়েছে?’