হিল ভয়েস, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, পার্বত্য চট্টগ্রাম: এসএ টিভির অনুসন্ধানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ২৫ কোটি টাকার বাঁশের প্রকল্প হরিলুটের খবর ফাঁস হয়েছে বলে জানা গেছে। ৫ বছর মেয়াদী এই প্রকল্পের ৪ বছর অতিক্রান্ত হলেও প্রকল্প এলাকায় বাঁশ বাগানের হদিশ নেই বলে এসএ টিভির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই, প্রশাসন, ক্ষমতাসীন দল পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম রাজনৈতিক দলগুলোর চাঁদাবাজি নিয়ে সোচ্চার থাকলেও সরকারি প্রকল্পের এধরনের মেগা দুর্নীতির বিরুদ্ধে একেবারেই নিশ্চুপ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ৫ বছর মেয়াদী ২৫ কোটি টাকার বাঁশ প্রকল্পের উপর এসএ টিভি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-
“পার্বত্য চট্টগ্রামের ২৬টি উপজেলায় কৃষকদের স্বাবলম্বী করতে উন্নতমানের বাঁশের চারা প্রজেক্টে খাতা কলমে বাস্তবায়নের গতি থাকলেও প্রকল্পের অস্তিত্ব নেই অধিকাংশ এলাকায়। ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ বছর মেয়াদী প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১৬ সালে। বিগত ৪ বছরেও প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীর দেখা পাননি স্থানীয় প্রতিনিধি এবং পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দারা। অভিযোগ রয়েছে পাহাড়ের বুনো বাঁশের বাগানকে প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত দেখিয়ে লুটে নেয়া হচ্ছে পুরো টাকা। এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক এসএ টিভির কাছে কথা বলতে রাজি হননি। তবে বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানের দাবি দৃশ্যমান হতে সময় লাগবে।
https://www.youtube.com/watch?v=S3TtKgTiCuQ
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, দুর্গম পাহাড়ের বসবাসরত অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশকে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় আনতে উন্নত মানের বাঁশ চাষ নামের একটি প্রকল্প চলছে তিন পার্বত্য জেলায়। এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি এক একর জমির আয়তনের ১৩ হাজার আলাদা বাগান গড়ে তুলবে প্রকল্প প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি বাগানের মালিক হবে একটি করে কৃষক পরিবার।
এই হিসেবে অন্তত ১৩ হাজার কৃষক পরিবার এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী হবেন। একই সাথে স্থানীয়ভাবে উদ্যোক্তা তৈরি করে ২৬০টি বাঁশ নির্ভর ক্ষুদ্র কুটির শিল্প গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারিত আছে প্রকল্পটিতে। পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পের চার বছর পেরিয়ে গেছে তিন মাস আগে কিন্তু এখনো দৃশ্যমান হয়নি কোথাও। প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য একটি এলাকা কাউকালী উপজেলা। এখানে বেশকিছু বড় বড় বাঁশ বাগানের দেখা মেলে। কিন্তু বাগানের মালিকরা জানান, বংশপরম্পরায় এসব বাগানের উত্তরাধিকারী হয়েছেন তারা, এর সঙ্গে কোন প্রকল্পের সম্পর্ক নেই। এছাড়া উন্নয়ন বোর্ডের কোন কর্মকর্তাকেও দেখেননি কখনো।
কাউখালী উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা চৌধুরী জানান, চার বছর ধরে এত বড় একটি প্রকল্প তার এলাকায় বাস্তবায়ন হচ্ছে এই কথাটি সাংবাদিকদের মুখে এই প্রথম শুনলেন তিনি।
এ ব্যাপারে প্রাতিষ্ঠানিক বক্তব্য জানতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে গেলে প্রকল্প পরিচালক হারুন-অর রশিদকে অফিসে পাওয়া যায়নি। ফোনে বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে সদ্য যোগদান করা বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল আলম নিজামী জানান, প্রকল্প পরিচালক তাকে জানিয়েছেন লাগানো বাঁশের চারাগুলো এখনো বড় হয়নি। তাই আরো কিছুদিন না গেলে দৃশ্যমান হবে না।
তিন পার্বত্য জেলার প্রায় নব্বই শতাংশই পাহাড় ও বনাঞ্চল দ্বারা পরিবেষ্ঠিত। এখানকার কাচালং, রেইক্ষ্যং, সাঙ্গু, মাতামুহুরি নদীসহ পাহাড়ি ছড়াগুলোর চারপাশে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর বাঁশের উৎপাদন হয় আবহমান কাল ধরে। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা এসব বাঁশ বাগানকে প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করে লুটে নেয়া হয়েছে বরাদ্ধকরা প্রায় ২৫ কোটি টাকা এমনতাই জানান সংশ্লিষ্টরা।”