হিল ভয়েস, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০, বান্দরবান: বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় সেনাবাহিনী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতৃত্ব কর্তৃক মদদপুষ্ট ‘আরাকান লিবারেশন পার্টি’ (এএলপি) অস্ত্রের মুখে স্থানীয় জুম্ম গ্রামবাসীদেরকে হয়রানি ও মারধর, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় ইত্যাদি অপকর্ম অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার রুমা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ক্রাউ পাড়া এলাকায় কাঠ ব্যাবসায়ী সুফিয়া সওদাগর এবং কালাম সওদাগরের ১৫ জনের অধিক শ্রমিক কাজ করতে আসলে সেনা-মদদপুষ্ট বিদেশী সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ ‘এএলপি’ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দুইজন শ্রমিককে অপহরণ করে।
এসময় এএলপি সদস্যরা পাহাড়ি-বাঙালি সকল শ্রমিকদের ধরে ধরে মারধর করে এবং একপর্যায়ে নিজাম এবং জাহাঙ্গীর নামে দুইজন শ্রমিককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তিন ঘন্টা আটক রাখার পরে তাৎক্ষনিক ৩০,০০০ টাকা এবং বাকী টাকাগুলা আগামী বৃহস্পতিবার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে সুফিয়া সওদাগরের উক্ত দুই শ্রমিককে ছেড়ে দেয়।
আরো জানা যায় যে, বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই এএলপি সন্ত্রাসীরা সুফিয়া সওদাগর থেকে ১,২০,০০০ টাকা এবং কালাম সওদাগর থেকে ২,০০,০০০ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা সুফিয়া সওদাগরের উক্ত দুইজন শ্রমিককে অপহরণ করে। এদের অপহরণ করার পর কালাম সওদাগরকেও তারা হুমকি প্রদান করছে। কালাম সওদাগরও তাদের দাবিকৃত টাকাগুলি আগামী বৃহস্পতিবার দেবে বলে গোপন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে এএলপি সদস্যরা স্থানীয় জুম্ম গ্রামবাসীদেরকে নানাভাবে হয়রানি করে চলেছে। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে তারা অস্ত্রের মুখে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে মুরগী, শুকর ও শাখ-সবজি নিয়ে যায়। স্থানীয় জুম্ম গ্রামবাসীদেরকে মদ সরবরাহ করতে বাধ্য করে। কোন কোন ক্ষেত্রে গ্রামের তরুণী নারীদের শ্লীনতাহানির চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সেনা ক্যাম্প ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এএলপি সশস্ত্র সদস্যরা অবাধে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয় গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন। অস্ত্র ও জীবনের ভয়ে এএলপিদের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস করে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছ্যুক স্থানীয় এক কার্বারী জানিয়েছেন যে, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের সমর্থনে গত বছর এএলপি সদস্যরা রাঙ্গামাটি জেলার রাজস্থলী ও কাপ্তাই উপজেলায় এবং বান্দরবান জেলার সদর ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় হত্যা, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ও চাঁদাবাজি করেছিল। কিন্তু স্থানীয় অধিবাসীদের প্রতিরোধের মুখে এএলপি সদস্যরা এসব এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়।
তম্মধ্যে ৩ এপ্রিল রুমার পাইন্দু মৌজার হেডম্যান মংচউ মারমার ছেলেকে খুন, ৩০ এপ্রিল পাইন্দু ইউনিয়ন থেকে ক্যচানু মারমা ওরফে থুইনুমং ও অংথুইচিং মারমা অপহরণ, ৬ মে রিজুক কার্বারী প্রুসানু মারমাকে অপহরণ ছিল অন্যতম অন্যতম ঘটনা।
উক্ত গ্রাম প্রধান আরো জানান যে, এএলপিদের অন্যতম আরেকটি আয়ের হচ্ছে কোটি কোটি টাকার আফিং ও ইয়াবা ব্যবসা। মিয়ানমার থেকে আফিং ও ইয়াবা এনে স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের মাদক সিন্ডিকেটের নিকট বিক্রি করে থাকে বলে জানা গেছে।
এএলপিদের মূল নেতৃত্ব মিয়ানমার সরকারের সাথে শান্তি প্রক্রিয়ায় চলে গেলেও এএলপি থেকে বহিস্কৃত আদর্শচ্যুত সদস্যদের গঠিত এই দলছুট অংশটি মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার কারবার থাকায় বান্দরবানের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করে থাকে এবং কোটি কোটি টাকার কাজ কারবার চালিয়ে থাকে।
আরাকানের রাখাইন জনগণের সাথে তাদের কোন সংযোগ নেই। মিয়ানমার সেনাবাহিনী, মূল এএলপি ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মীর হামলার ভয়ে তারা রাখাইন রাজ্যেও পদার্পন করতে পারে না। বরঞ্চ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ক্ষমতাসীন স্থানীয় আওয়ামীলীগের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ও মদদপুষ্ট হয়ে বান্দরবানে অবস্থান করে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
পরবর্তীতে বিগত কয়েকমাস যাবৎ তাদের তৎপরতা দেখা না গেলেও সম্প্রতি আবার সেনাবাহিনী ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রুমা উপজেলায় সক্রিয় হয়েছে। বর্তমানে রুমায় স্থানীয় জুম্ম অধিবাসীরা এএলপিদের এই অত্যাচার-নিপীড়নের ফলে চরম উদ্বেগ, আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনাতিপাত করছে।