হিল ভয়েস, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, রাঙ্গামাটি: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দূর্ভেদ্য একুশ (২১ বীর)-এর লংগদু জোনের উদ্যোগে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাধীন বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাট ও মারিশ্যার চারকিলো নামক স্থানে নতুন করে কমপক্ষে ৫০০ পরিবার মুসলিম বাঙালি সেটেলার বসতি প্রদানের জঘন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে সেটেলার বাঙালিরা লংগদু উপজেলাধীন ডাকঘর মোন (বড় পাহাড়) থেকে বামে লংগদু পর্যন্ত প্রায় ৫০০ একর জায়গা তাদের নামে কবুলিয়ত আছে বলে দাবি করেছে। সম্প্রতি তারা উক্ত এলাকা পরিদর্শন করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, দূর্ভেদ্য একুশ (২১ বীর)-এর লংগদু জোন কর্তৃক বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাট ও মারিশ্যার চারকিলো এলাকায় বসতি প্রদানের জন্য লংগদু উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সেটেলার বাঙালি পরিবারদের তালিকা করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে বাত্যাপাড়া, ঝর্ণাটিলা, হেডম্যান টিলা, ভাইবোনছড়া, সোনাই, হাজাছড়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ২০০/২৫০ পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্র মতে, উক্ত দু’টি স্থানে কমপক্ষে ৫০০ পরিবারকে বসতি প্রদান করা হবে এবং তালিকাভুক্ত প্রতি সেটেলার পরিবারকে ৩.০ একর পাহাড় ভূমি ও নগদ ১০,০০০ টাকা প্রদান করা হবে বলে জোন প্রতিনিধির পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে।
অন্যদিকে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সেনাবাহিনী ছত্রছায়ায় লংগদু থেকে একদল সেটেলার বাঙালি লংগদু উপজেলার লংগদু মৌজার অন্তর্গত ডাকঘর মোন থেকে বামে লংগদু পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা পরিদর্শন করেছে। স্থানীয়দের নিকট জানিয়েছে যে, এসব এলাকায় তাদের (সেটেলারদের) নামে প্রায় ৫০০ একর জায়গার কবুলিয়ত রয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার লংগদু মৌজার হেডম্যান কলিনমিত্র চাকমার নিকটও এসব কবুলিয়তের বিষয়টি সেটেলাররা তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু হেডম্যান অফিসে সেটেলারদের এ ধরনের ভূমি কবুলিয়তের কোন রেকর্ড নেই বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, আগামী ডিসেম্বরে চেঙ্গী নদীর উপর নির্মিত নান্যাচর ব্রিজ উদ্বোধন করা হবে। উক্ত ব্রিজ উদ্বোধনের পর পরই ডাকঘর মোন এলাকায় সেটেলারদের বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে। এতে করে এলাকায় সেটেলার ও জুম্মদের মধ্যে সংঘাত দেখা দিতে পারে বলে স্থানীয় জুম্ম গ্রামবাসীরা চরম উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠার মধ্যে রয়েছে।
ছবি: লংগদুতে সফরের সময় ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী পাটোয়ারী
সূত্র আরো জানিয়েছে যে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভূমি মন্ত্রনালয়ের অধীন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী পাটোয়ারী রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ও লংগদু উপজেলা এবং বান্দরবান জেলার লামা সফর করেন। যদিও লংগদু ভূমি অফিস থেকে কয়েকজন হেডম্যানকে উপজেলা ভূমি অফিসে উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ লংগদুতে পৌঁছলে ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান কেবলমাত্র লংগদু উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), অফিসার ইনচার্জ ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মতবিনিময় করেন। লংগদুর কোন হেডম্যান ও জুম্ম প্রতিনিধির সাথে তিনি দেখা করেননি।
স্থানীয় সূত্র আরো জানিয়েছে যে, সেনাবাহিনী ও বিজিবি লংগদু থেকে গরুসটাং মোন হয়ে বরকল উপজেলার হরিনা পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এলক্ষে কয়েকদিন আগে লংগদুর রাজানগর বিজিবি জোনের কমান্ডিং অফিসার (সিও) গরুসটাং মোন (বড় পাহাড়) পরিদর্শন করেছেন।
ছবি: সড়ক নির্মাণ কাজ পর্যবেক্ষণের জন্য ছোট হরিণা বিজিবি জোনে আনা গাড়ি
সড়ক নির্মাণ কাজ পর্যবেক্ষণের জন্য ছোট হরিণা বিজিবি জোনের জন্য ৫টি গাড়ি এবং ৩৭ বিজিবির রাজানগর জোনের ৫টি গাড়ি বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৪ সেপ্টেম্বর ৩টি গাড়ি এবং ১৪ সেপ্টেম্বর ২টি গাড়ি রাঙ্গামাটি থেকে বিজিবির হরিণা জোনে আনা হয়েছে। এই মাসের মধ্যে ৩৭ বিজিবির রাজনগর জোনের ৫টি গাড়ি আনা হবে বলে জানা গেছে।
মূলত বাঘাইছড়ির সাজেক থেকে লংগদুর ডাকঘর মোনসহ বরকলের হরিনা ও ঠেগা পর্যন্ত সেটেলারদের বসতি প্রদানের গোপন পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এলক্ষে সেনাবাহিনী তথা সরকার সাজেক থেকে বড় কমলাক হয়ে হরিনা পর্যন্ত, নান্যাচর থেকে লংগদুর ডাকঘর মোন ও গরুসটাং মোন (বড় পাহাড়) হয়ে হরিণা ও ঠেগা পর্যন্ত, অপরদিকে রাজস্থলী থেকে বিলাইছড়ি-জুরাছড়ি হয়ে ঠেগা পর্যন্ত ব্যাপক সড়ক নেটওয়ার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী প্রীতিবিন্দু চাকমা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এতে করে এসব এলাকায় জুম্ম অধিবাসীদের ভূমি বেহাত হয়ে পড়বে এবং শত শত জুম্ম পরিবার উচ্ছেদের মুখে পড়বে। এলাকার বনজ সম্পদ ও জীব-বৈচিত্র্য বিপন্ন হয়ে পড়বে। এভাবে আজ শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া বন্ধ রেখে চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে।