হিল ভয়েস, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০: সচেতন ছাত্র সমাজ ও সচেতন নাগরিকবৃন্দের যৌথ উদ্যোগে খাগড়াছড়িতে প্রতিবন্ধী জুম্ম নারীকেগণধর্ষণে গ্রেফতারকৃতদের বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বান্দরবান ও চট্টগ্রামে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চট্টগ্রাম চেরাগী পাহাড় মোড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, চট্টগ্রাম মহানগর শাখা ও পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের যৌথ উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত কয়েকদিন আদিবাসী নারীদের উপর ক্রমাগত সহিংসতা ও নির্যাতনের ঘটনায় বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক ও কাপেং ফাউন্ডেশন তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার আনুমানিক ২:৩০ টার সময় ৯ জনের একদল মুসলিম সেটেলার দা-ছুরিসহ দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের বাড়ির দরজা ভেঙে প্রবেশ করে প্রথমে ভুক্তভোগী জুম্ম নারী ও তার মা’সহ বুড়ো বাবাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে আলাদা একটি রুমে দরজা বন্ধ করে রাখে। পরে ওই জুম্ম নারীটিকে আরেকটি রুমে নিয়ে গিয়ে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে অভিযুক্ত ৯ জনের মধ্যে ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- ১) রামগড়ের তৈচালা পাড়ার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে মো: আমিন ওরফে নুরুল আমিন (৪০), ২) খাগড়াছড়ির কুমিল্লাটিলার মৃত আকবর আলীর ছেলে মো: বেলাল হোসেন (২৩), ৩) গুইমারার বড় পিলাকের মো: ইমরান হোসেনের ছেলে মো: ইকবাল হোসেন (২১), ৪) মাটিরাঙ্গার আমতলী ইউনিয়নের আদর্শগ্রামের মো: হাবিল মিয়ার ছেলে মো: আব্দুল হালিম (২৮), ৫) গুইমারার পশ্চিম বড়পিলাকের আব্দুল কাদেরের ছেলে মো: শাহিন মিয়া (১৯), ৬) রামগড়ের দারোগা পাড়ার আহম্মদ উল্লাহয়ের ছেলে মো: অন্তর (২০) এবং ৭) মাটিরাঙ্গার দক্ষিণ মুসলিম পাড়ার শামসুল হকের ছেলে মো: আব্দুর রশিদ (৩৭) প্রমুখ।
গ্রেফতারকৃত কাছ থেকে লুণ্ঠিত স্বর্ণালঙ্কারের বিক্রয়লব্দ ৪৮,০০০ টাকা, লুণ্ঠিত নগদ ৮,০০০ টাকার মধ্যে ৪,৯০০ টাকা, আসামী অন্তরের হেফাজত থেকে লুণ্ঠিত একটি মোবাইল সেট, দরজা ভাঙ্গার শাবল, ডাকাতি ও গণধর্ষণের সময় ব্যবহৃত ২টি ছোরা, ২টি দা, ১টি নাম্বার বিহীন সবুজ রঙের সিএনজি,গণধর্ষণ শেষে আসামীদের ফেলে যাওয়া একজোড়া প্লাষ্টিকের জুতা, যা পরবর্তীতে ধৃত রশীদ কর্তৃক তার নিজের জুতা বলে সনাক্তকৃত ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে বলে আজ ২৭ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আবদুল আজিজের স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়।
বান্দরবানে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত
সচেতন ছাত্র সমাজ ও সচেতন নাগরিকবৃন্দের যৌথ উদ্যোগে তিন পার্বত্য জেলাসহ সমগ্র বাংলাদেশে ধর্ষণের সুষ্ঠু বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তিদাবিতে আজ রবিবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ইং তারিখে বান্দরবান প্রেস্ ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে পিসিপি বান্দরবান কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক মং মে মারমার সঞ্চালনায় মানবাধিকার কর্মী ডনাই প্রু নেলীরসভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন বান্দরবান জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অলকা তঞ্চগ্যা, বাংলাদেশ মারমাস্টুডেন্টস কাউন্সিল বান্দরবান জেলার সভাপতি উহ্লায়ি মারমা, বম ছাত্রের প্রতিনিধি হালে লুই বম, প্রথম আলো বন্ধুসভার প্রতিনিধিশেখর পাল, বাংলাদেশ ম্রো স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের অর্থ সম্পাদক চংলক ম্রো প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, করোনাকালে পাহাড় এবং সমতলের যে হারে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে তা খুবই ভয়ংকরজনক। সিলেটেএমসি কলেজে ছাত্রলীগের কর্মীরা যেভাবে সদ্য বিবাহিত স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করেছে অন্যদিকে গত ২৪ তারিখ গভীর রাতেখাগড়াহচড়ি সদরে মানসিক প্রতিবন্ধী এক জুম্ম নারীকে গণধর্ষণ ও বাড়ি লুটাপাটের ঘটনা ঘটেছে তা রীতিমত আমাদের মনে ভয় ধরিয়েদিয়েছে। এ ঘটনা প্রমাণ করছে দেশের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেয়ে তারাই বেশী শক্তিশালী।
খাগড়াছড়ির ঘটনায় আসামীদের ধরার জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি পাহাড়ের জুম্ম নারী হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনারহালচালের চিত্র বর্ণনা করে বক্তারা মানববন্ধনে আশংকা করে বলেন তারা এ সঠিক বিচার নিয়ে সন্দিহান। তাই কোন কালক্ষেপন নাকরে অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত ধর্ষকদের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।
চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় গোলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় সংলগ্ন বলপেয়্যে আদাম নামক গ্রামে নিজ বাড়িতে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক এক মানসিক প্রতিবন্ধী জুম্ম নারীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং গ্রেফতারকৃত ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে আজ ২৭ সেপ্টেম্বর রবিবার বিকাল তিনটায় চট্টগ্রাম চেরাগী পাহাড় মোড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখা এবং পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের যৌথ উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রুমেন চাকমার সভাপতিত্বে ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চবি শাখার সদস্য হ্লামিউ মারমার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সুখী কুমার তংচংগ্যা।
এছাড়াও সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন চাকমা সার্কেল চীফের উপদেষ্টা রাণী য়েন য়েন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেং ইয়ং ম্রো, শ্রমিক কল্যাণ ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক জগৎ জ্যোতি চাকমা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মংছেনু মারমা প্রমূখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়ার কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্ষণের প্রবণতা বেড়েই চলেছে। যার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম আদিবাসী নারী এবং সমতলের নারীরা নিরাপত্তাহীনতার সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে বসবাস করছে। এসব থেকে উত্তরণের জন্য ধর্ষক এবং অত্যাচারকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার জন্য জোর দাবী জানান।
বক্তারা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন এবং শাসকগোষ্ঠীর নিরবতায় সুষ্ঠু বিচার হচ্ছে না এবং অপরাধীরা বার বার অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গার চেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী নারীদের উপর ধর্ষণ ও সহিংসতার হার বেড়েই চলেছে। সহিংসতা, ভূমিদখল থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করা জরুরি বলে বক্তারা মনে করেন।
কাপেং ফাউন্ডেশন ও আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের নিন্দা ও শাস্তির দাবি
সাম্প্রতিক সময়ে আদিবাসী নারীদের উপর ক্রমাগত সহিংসতা ও নির্যাতনের ঘটনায় বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক ও কাপেং ফাউন্ডেশন তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছে।
আজ ২৭ সেপ্টেম্বর কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা ও বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরার স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে, খাগড়াছড়িতে ৯ জন সেটেলার বাঙালি কর্তৃক মানসিক প্রতিবন্ধী এক চাকমা নারীকে (২৬) গণধর্ষণের ঘটনায় ২৫ সেপ্টেম্বরে কয়েকজন আসামী গ্রেপ্তার করা হলেও অন্য আসামীদের এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এছাড়া গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ দীঘিনালায় এক পুলিশ সদস্য কর্তৃক এক আদিবাসী স্কুল ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ সন্ধ্যা ৫.৩০টার সময় মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানার আদমপুর ইউনিয়নের কাটাবিল গ্রামের বাসিন্দা উমেদ মিয়া কর্তৃক মনিপুরী এক নারী (৬০) শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। ভুক্তভোগীর ছেলে বাদী হয়ে কমলগঞ্জ থানায় মামলা করলেও আসামীকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি।