হিল ভয়েস, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, পার্বত্য চট্টগ্রাম: শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার জাতীয় পর্যায়ে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলাম ও ইসলামী ছাত্র শিবির এবং খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপির বিরুদ্ধে সক্রিয় হলেও সেসব সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পার্বত্য চট্রগ্রাম নাগরিক পরিষদে সক্রিয় রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা।
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরে বাঙালি মুসলিম সেটেলারদের উগ্র জাতীয়তাবাদী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক কয়েকটি সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলোকে বিলুপ্ত করে সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআই সহায়তায় মুসলিম বাঙালি সেটেলারদের একক সংগঠন হিসেবে পার্বত্য চট্রগ্রাম নাগরিক পরিষদ গঠন করা হয়েছে।
সরেজমিন তদন্তে জানা গেছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের বান্দরবান জেলার অধিকাংশ নেতা-কর্মীই বিএনপি, জামায়াত ও ছাত্র শিবির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ইসলামী ছাত্র শিবিরের বান্দরবান জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মো: মিজানুর রহমান আখন্দ এখন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের নেতা!
বর্তমানে বান্দরবান জেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের অন্যতম নেতা হলেন আতিকুর রহমান। তিনি হচ্ছেন বান্দরবান পার্বত্য জেলার ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি। আতিকুর রহমানকে ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে অভিযান চালিয়ে বান্দরবান শহরের বাস ষ্টেশন এলাকা থেকে আটক করা হয়। সরকার বিরোধী নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছিল। আতিকুর রহমান সম্প্রতি বিলুপ্ত পার্বত্য গণ পরিষদের নেতা পরিচয় দিয়ে অন্তরালে ইসলামী ছাত্র শিবিরের মিশন বাস্তবায়নে কাজ করতো বলে পুলিশকে জানায়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের বান্দরবান জেলা কমিটির সভাপতি কাজী মজিবুর রহমান বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও সাবেক পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য। পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের আলিকদম উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ আবুল কালাম হচ্ছেন বিএনপির আলিকদম উপজেলা শাখার সভাপতি ও আলিকদম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি শাব্বির আহম্মদ বহু সংগঠন ও ব্যবসার সাথে যুক্ত। তিনি রাঙ্গামাটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য সচিব ও রিজার্ভ বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির দপ্তর সম্পাদক। রাঙ্গামাটির তবলছড়ি অফিসার্স কলোনী এলাকায় গড়ে তুলেছেন রাঙ্গামাটি ইন্টারন্যাশনাল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল। রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজার এবিএম টাওয়ার শাব্বির আহম্মদের রয়েছে স্বপ্ন কুটির নামক টেক্সটাইল, বার্মিজ পণ্য ও প্রসাধনী সামগ্রীর ব্যবসা। এছাড়াও বনরূপা বাজার কাটা পাহাড়ের শুকরিয়া মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় মেহেরিয়া ডিজিটাল প্রিন্টার্স নামক ছাপাখানা খুলেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন মোঃ সোলায়মান। তিনি একজন সংবাদকর্মী। তিনি জামায়াতে ইসলামী রাজনীতির দর্শনে বিশ্বাসী। তিনি রাঙ্গামাটি দারুস সালাম ইসলামিক একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা। ছাত্র জীবনে তিনি পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের রাঙ্গামাটি জেলা সভাপতি ছিলেন। তিনি বেসরকারী টিভি চ্যানেল এসএ টিভির রাঙামাটির প্রতিনিধি, সিএইচটি লাইভ অনলাইন টিভির সম্পাদক এবং রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটি’র সহ-সভাপতি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের অঙ্গ সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলা সভাপতি মোঃ নাজিম আল হাসান ইসলামী ছাত্র শিবির রাজনীতির সাথে যুক্ত। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের অধিকাংশ নেতাই শিবিরের সাথে সম্পৃক্ত। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের ব্যানারে তারা গোপনে শিবিরের প্রচার-প্রচারণা চালায়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সহ প্রচার সম্পাদক পারভেজ আহম্মেদ শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানা যায়। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সহ প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক মো: ইব্রাহীম খলিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল হোসাইন জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে।
জানা গেছে মো: ইব্রাহীম খলিলকে জিহাদী বইসহ একসময় র্যাব কর্তৃক আটক করা হয়েছে। তিনি জঙ্গী কার্যক্রম ও জিহাদী বই সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে লেখালেখি করেন। এভাবেই তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের ব্যানারে ছদ্মবেশে সক্রিয় রয়েছে এবং জামায়াত শিবিরের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
মাইন উদ্দিন পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি শাখার সহ সভাপতি ছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে বিভিন্ন অনলাইনে লিখেন। তিনি ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত। এখন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের যুক্ত রয়েছেন। তিনি আবার প্রাণ ও আরএফএল গ্রুপের জোনাল ম্যানেজার হিসেবে চাকরিরত রয়েছেন।
পাহাড়ে ভূমি জবর দখলেও সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। তারা গড়ে তুলেছে বিভিন্ন বাগান। খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ের উপজেলার কালাডেবা ও সোনাইআগা এলাকায় গভীর অরণ্যে নিরাপদ আস্তানা গড়ে তুলেছে বলে জানা গেছে।
কালের কণ্ঠে প্রকাশিত ‘ছদ্মবেশে সবখানে জামায়াত-শিবির!’ শীর্ষক সংবাদ জানা যায় যে, “জামায়াত-শিবির ২০২৮ সালকে টার্গেট করে এক মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ওই বছর ছাত্রশিবিরের ৫০ বছর পূর্ণ হবে।“ সেই টার্গেটকে সামনে রেখেই ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের ছত্রছায়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সাথে যুক্ত হয়ে ছদ্মবেশে জামায়াত-শিবিরের সদস্যরা সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার এক সদস্য বলেন, ‘২০২৮ সালের মধ্যে ডাক্তার, পুলিশ, বিজিবি, শিক্ষক, সরকারি আমলা, আইনজীবী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সব সেক্টরে বেশির ভাগ লোকই থাকবে জামায়াত-শিবিরের। এসব স্থানে শক্ত অবস্থান তৈরির পর দেশে একটা বিপ্লব ঘটানো হবে।’ ওই নেতার দাবি, মিসরে ব্রাদারহুডের ৯০ শতাংশ সমর্থক থাকার পরও সেনাবাহিনীতে লোক না থাকায় মুরসি সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আমরা মনে করি, এটা আমাদের জন্য বড় সংকেত ও শিক্ষা।’ [কালের কণ্ঠ, ২৭ এপ্রিল ২০১৫]।