হিল ভয়েস, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, বান্দরবান: নিজেদের পদোন্নতি লাভের জন্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্র ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর উপস্থিতি দেখিয়ে জনমতকে বিভ্রান্ত করার জন্য বিজিবি পূর্বের মতো সম্প্রতি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়িতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের নাটক মঞ্চস্থ করেছে এবং তা বিভিন্ন অনলাইন নিউজপোর্টালে ও দৈনিকে ফলাওভাবে প্রচার করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ শুক্রবার নাইক্ষ্যংছড়িস্থ ১১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শাহ আবদুল আজিজ আহমেদের নেতৃত্বে সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জামাল হোসাইনসহ একদল বিজিবি সদস্য অভিযান চালিয়ে দৌছড়ি ইউনিয়ন মামাভাগিনা ঝিড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫টি এক নলা দেশীয় বন্ধুক ও ১টি এসবিবিএল উদ্ধার করেছে বলে খবর প্রচার করা হয়েছে।
এসময় বিজিবি টহল দল ধাওয়া করলে তাদের ব্যবহৃত ৪টি এসবিবিএল ও ১টি দেশীয় অস্ত্র (একনলা বন্দুক), ২টি অস্ত্র তৈরির ব্যারেল, ১টি কার্তুজ এবং ৫টি কার্তুজের খালি খোসা মালিকবিহীন পাওয়া যায়। এলাকার সন্ত্রাসীদের আস্তানা গুটিয়ে দিয়ে এসব উদ্ধার করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়।
লে. কর্নেল শাহ আবদুল আজিজ আহমেদ সাংবাদিকদের জানান যে, শুক্রবার বিকেল ৩টায় ঘটিকায় ছাগলখাইর এ স্থানে কিছু অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ কালে বিজিবি টহল দলের উপস্থিতি টের পেয়ে উক্ত স্থান হতে পলায়ন করে।
অন্যদিকে আজ 8 সেপ্টেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার নাইক্ষ্যংছড়ি জোনের ১১ বিজিবির অধিনায়ক শাহ আবদুল আজিজ আহম্মেদ ও সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ জামাল হোসেনের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে দৌছড়ি ইউনিয়ন লেদুরমুখ এলাকা থেকে ৮টি দেশীয় এক নলা বন্দুক ও ১টি এসবিবিএল গুলি উদ্ধারের নাটক করা হয়েছে।
১১ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল শাহ আবদুল আজিজ আহমেদ সাংবাদিকদের জানান যে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অস্ত্র মজুদের খবর পেয়ে বিজিবি অভিযান চালিয়ে এসব অস্ত্র উদ্ধার করেছে। তিনি আরো জানান, বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে এ সময় সন্ত্রাসীরা নাকি পালিয়ে যায়।
স্থানীয় সূ্ত্র জানিয়েছে যে, উক্ত দুইদিন প্রকৃতপক্ষে বিজিবি কোন অস্ত্রই উদ্ধার করেনি। অর্থের বিনিময়ে এলাকাবাসীদের দিয়ে এসব দেশীয় অস্ত্র সংগ্রহ করে বিজিবি ক্যাম্পে ও স্থানীয় থানায় জমা রাখা হয়েছে। এসব অস্ত্র টেবিলে সাজিয়ে ছবি তুলে সাংবাদিকদের ডেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা বর্ণনা করা হয় কিংবা ছবিসহ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়।
এভাবে বিজিবি অস্ত্র উদ্ধারের নাটক মঞ্চস্থ করে আসছে। বিজিবির এটা অনেক পুরোনো নাটক। অনেক আগে থেকেই বিজিবি সময়ে সময়ে একে-৪৭, মটার লঞ্চার থেকে শুরু করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের নাটক করে আসছে বলে স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। এসময় নাইক্ষ্যংছড়িকে বিজিবি ও সেনাবাহিনীর অস্ত্রের খনি হিসেবে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বর্ণনা করা হয়েছিল। এটা সম্প্রতি মেজর সিনহাকে ক্রসফায়ারে হত্যার ঘটনার মতো শত শত লোককে বিনা বিচারে ক্রশফায়ারে হত্যার ঘটনার মতো এক একটি সাজানো নাটক।
উক্ত অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান যে, বান্দরবান নাইক্ষ্যংছড়ির বিজিবি কর্তৃক দীর্ঘ বছর যাবত দৌছড়ি ইউনিয়নে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক চলে আসছে। বিজিবির অধিনায়ক ও পরিচালকদের চাকরির পদোন্নতির জন্য এইসব অস্ত্র উদ্ধারের সাজানো নাটক করে থাকে।
গ্রামবাসীরা আরো জানান যে, প্রায় সময় দৌছড়ি ইউনিয়নের স্থানীয় পাহাড়ী ও বাঙালিদের নিকট থেকে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে দেশীয় বন্দুক জমা নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা সাজানো হয়।
এলাকার জনগণের কাছে দেশীয় বন্দুক না থাকলেও বিজিবির হয়রানি থেকে মুক্তি পাবার জন্য যে কোন প্রকারে অস্ত্র সংগ্রহ করে বিজিবি কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হয় এবং এসব অস্ত্র অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় মর্মে প্রচার করা হয় বলে গ্রামবাসীরা জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সাবেক জনপ্রতিধি জানান যে, বিজিবি সদস্যদের এই অস্ত্র উদ্ধারের নাটক মঞ্চায়নের পেছনে মূল উদ্দেশ্য হলো অস্ত্র উদ্ধারের সফলতা দেখিয়ে নিজেদের প্রমোশন লাভ করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর অস্ত্র ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রয়েছে মর্মে অপপ্রচার চালানো, জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ে আন্দোলনরত সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গকে সন্ত্রাসী হিসেবে ক্রিমিনালাইজ করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা।