তাঁর কথা বলতে এসেছি
ম্যাকলিন চাকমা
আজকের এই সমাবেশে সম আদর্শের সকলের মত আমিও জুম বদ্ধ ভালোবাসি।
পাহাড় বেয়ে পাহাড় উঠার সময় একফালি সবুজ ধানের শীষ
গতকাল আমাকে অনুরোধ করেছে
আমার কবিতায় এম এন লারমার কথা বলতে
আমি আজ রাজপথে তাঁর কথায় বলতে এসেছি।
কল্পনা তুমাচিং এর এক ফোঁটা চোখের জল
আমায় অনুরোধ করেছে
আমার কবিতায় লারমার কথা লিখতে
আজ আমি লারমার কথায় বলতে এসেছি।
এই সমাবেশে সমবেত সকলের মতন আমি নাকশ ফুল ভালোবাসি
সদ্য জনম নেয়া নাকশ ফুলটিও বাতাসের সাথে পাড়ি দেয়ার সময় আমায় অনুরোধ করেছে
আমার কবিতায় লারমার কথা বলতে।
আমি আজ লারমার কথা বলতে এসেছি।
কবি মৃত্তিকা স্যারের এখনো পাহাড় কাঁদে বইটিও সেদিন আমায় অনুরোধ করেছে
আমার কবিতায় লারমার কথা লিখতে।
আমি আজ লারমার কথা বলতে এসেছি।
আজকের এই সমাবেশে সমবেত সকলের মতন
আমিও স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি
ভালোবাসি সবুজ পাহাড়ের মেঠোপথ।
আজ ভোরের স্বপ্নে সবুজাভ কেওক্রাডং আমাকে অনুরোধ করেছে
আমার কবিতায় লারমার কথা লিখতে।
আমি আজ লারমার কথা বলতে এসেছি।
আজকের এই সমাবেশে জিমনেসিয়ামে সমবেত তরুণেরা সাক্ষী হোক
সাহসী তরুণের মন রাঙিয়ে যাক
পাহাড় থেকে আসা স্বপ্নবাজ তরুণদের হৃদয়ে গেঁথে থাক
আমি সবুজাভ জুমের কথা রাখলাম
আমি কল্পনা তুমাচিং এর এক ফোঁটা চোখের জলের দাম রাখলাম।
সদ্য জন্ম নেয়া নাকশ ফুলের কথা রাখলাম
কবি মৃত্তিকা স্যারের এখনো পাহাড় কাঁদে বইটির কথা রাখলাম
আমি কেওক্রাডং এর কথা রাখলাম।
আমি হাজারো তরুণদের সামনে মায়াকান্না দেখাতে আসিনি
আমি এসেছি লারমাকে পাহাড়ের সবুজাভ ভালোবাসা
এবং লাল সালাম জানাতে।
(কবিতাটি কবি নির্মলেন্দু গুণের ‘আমি কারও রক্ত চাইতে আসিনি’ কবিতার অবলম্বনে রচিত)
সে পথে নেমেছি
সম্রাটসুর চাকমা
কাঁদায় মারিছে পিষে বিস্তীর্ণ ক্ষিতিধর
দুষ্টচক্র খড়গ তুলে,
ধ্বংসস্তূপ গিরি সমান জঞ্জাল ছাপে
মাইলের পর মাইল বিশাল মরুভূমির
একেলা জনম তুমি নিলে;
সুশীতল তরুরূপে নিপীড়িত মানবের পাশে।
বঙ্গবীর রাক্ষুসী বোয়াল রূপান্তরে
থাবা বসায় মস্তবড় রূপে বাংলার বীর,
শতদল ফুটিল শৈবাল ভরা দিঘিরে
ঠাঁই হলো বাঁচার উচ্চ শির।
কেওক্রাডং পাহাড়ের চূড়ায়
ম্রো জাতি বাসভূমি হারায়,
সমতলে আদিবাসী নারীর উপর হাত বাড়ায়।
আর
জুম্ম নারী ধর্ষিত হয় মাটিরাঙ্গায়
কারা সে??? প্রশ্ন জাগে
হস্ত ভাঙবো ভানু’র রক্তিম আভায়।
চেঙী, মেওনী, কাজলং, কর্ণফুলী
তৈন, শঙখ, মাতামুহুরি;
আঁকাবাঁকা তটিনীর জলরাশি
বুক চিরে বইছে সৌন্দর্য লীলাভূমি।
ত্যাগ, সাহস, ধৈর্য, মানবতা
আদর্শের জন্মদাতা তুমি;
যে স্বপ্ন কুড়িয়েছি, সে পথে নেমেছি
টুটবো শোষণের চিহ্ন, ছাড়বো না এক ফোটাও ভূমি
মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা
শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা
তিনি বেঁচে থাকবেন পাহাড়ের বুকে
থাকবেন পাহাড়ের হৃদয়ের সবুজ উপত্যকায়
তাঁর কীর্তি সর্বদা বেঁচে থাকবে মহান লেখনিতে, ইতিহাসে অমর হয়ে।
মঞ্জু নামে সেই ছেলেটি ছিল মিতব্যয়ী, অসীম সাহসী, সৎ ও মহান দেশ প্রেমিক
অন্যায়ের বিরুদ্ধে সদা সজাগ, জাগ্রত
তাঁর ছিল সহজ সরল জীবনযাপন
তিনি ছিলেন আইনজীবী ও মহান শিক্ষক।
তাঁর হৃদয়ে ছিল অসীম ভালোবাসা
তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন পাহাড়ের
শাসন ব্যবস্থা, জুম্ম জনগণের অধিকার, অসহায় মানুষকে শান্তি ফিরিয়ে দিবেন।
তিনি ছিলেন জুম্ম জনগণের অগ্রদূত, অসহায় গরীব মানুষের আস্থা
তিনি সর্বদা ছিলেন ঐক্যর পক্ষে
তিনি অসামান্য দূরদর্শী নেতা ছিলেন
আর মানবতাই ছিল তাঁর জীবনের আর্দশ।
তিনি আমৃত্যু মানবতার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন
তিনি শুধু মানুষের জন্য নয়, তিনি সকল জীবের প্রতিও দয়ালু ছিলেন
তিনি প্রকৃতি প্রেমিক, প্রকৃতির অপার মহিমার প্রতিনিধি।
তিনি সংগীতপ্রিয় ছিলেন,
তিনি মধুর সুরে বাঁশিও বাজাতেন
তিনি সহকর্মীদের সুখ-দুঃখের ব্যাপারে খুবই যতœশীল ছিলেন।
মহান এই চিন্তাবিদের ভাবনায় ছিলো নারী মুক্তির প্রশ্ন।
তিনি নারীদের মানুষ হিসেবে দেখেন
তিনি সমাজের অধিকার বঞ্চিত নারীর কথা বলেছেন
তিনি জুম্ম নারীদের এগিয়ে আসার আহবান করেন।
তিনি সর্বপ্রথম সে মহান উদ্যোগটি গ্রহণ করেন,
সমাজের অর্ধেক অংশ নারীকে আন্দোলনে সংগঠিত করেন
জুম্ম নারী পেল উঠে দাঁড়ানোর আত্মপ্রয়াস, আত্মবিশ্বাস।
মহান নেতা তুমি বিপ্লবী, তুমি অমর, তুমি জুম্ম জনগণের আশার আলো, স্বপ্ন দ্রষ্টা।
তুমি তরুণের বজ্রকন্ঠ,
তুমি জুম্ম জনগণের আলোর দিশারী।
মহান বিপ্লবী তোমায় লাল সালাম।
মঞ্জু
উলিসিং মারমা
তুমি ছিলে তুমি আছো
তুমি থাকবে চিরকাল।
তোমারি স্বরণে জেগে ওঠে
জুম্মদের প্রতিটা ঊষাকাল।
আজো প্রগতিশীল, মুক্তমনা, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার সচেতন প্রত্যেক জুম্ম
মন্ত্রের মতো জপে আছে তোমারি নাম।
তুমি বেঁচে আছো আমার হৃদয়ে, আমার শরীরের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
পথ হারা পথিক ছিলাম
আজ হয়েছি তোমারি পথের পথিক।
তোমারি চেতনায় সদাজাগ্রত জুম্ম নবীন অবিরত।
জেগেছে পাহাড় তোমারি গর্জনে
নিজভ‚মে পরবাসী থেকে মুক্তির পণে।
নভেম্বরে তোমার বিদায়,
কিন্তু তুমি অন্তহীন, অম্লান, অবিস্মরণীয়।
জুম্মজাতির চেতনার অগ্রদূত তুমি এম এন লারমা
তোমারি নামে উৎসর্গ করি হাজারো লাল সালাম।