হিল ভয়েস, ১৬ আগস্ট ২০২০, আগরতলা: প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসকারী চাকমা জাতির লোকজন ১৭ই আগস্টকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করতে যাচ্ছেন। তবে বিশ্বব্যাপী চলমান প্রাণঘাতি কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এ বছর আনুষ্ঠানিকভাবে মিছিল ও সমাবেশ করা হবে না। তার পরিবর্তে একটি ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
ত্রিপুরা রাজ্য ভিত্তিক এনজিও ‘ধুদুক’ সূত্রে জানা গেছে যে, আগামীকাল ১৭ই অগাস্ট ২০২০, সোমবার, ভারতীয় সময় সকাল ৮:৩০ থেকে ‘দেশভাগ এবং আদিবাসী চাকমা সম্প্রদায়ের উপর এর প্রভাব’ শীর্ষক এক অনলাইন মতবিনিময় মঞ্চ অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ের উপর বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বক্তা এবং দেশ-বিদেশের অনেকেই তাদের মূল্যবান মতামত দেবেন ও সক্রিয় অংশগ্রহণ করবেন। অনুষ্ঠানটি ‘Dhuduk Agartala’ (www.facebook.com/dhuduk.agartala/) ফেইসবুক পেইজ থেকে সরাসরি প্রচার করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ধুদুকের প্রতিষ্ঠাতা ও চাকমা সামাজিক পরিষদের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক শান্তি বিকাশ চাকমার সঞ্চালনায় উক্ত ভাচুয়াল আলোচনায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও অঞ্চল থেকে এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চাকমা জনগোষ্ঠীর লোকজন অংশগ্রহণ করবেন।
অন্যান্যের মধ্যে ত্রিপুরা রাজ্য থেকে বিশিষ্ট সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং হিল ভয়েসের সম্পাদক নিরঞ্জন চাকমা ও প্রধীর তালুকদার, মিজোরাম রাজ্য থেকে প্রাক্তন এমএলও ও চাকমা স্বশাসিত জেলা পরিষদের চীফ এক্সকিউটিভ মেম্বার রসিক মোহন চাকমা ও কমলানগর কলেজের অধ্যাপক জ্যোতির্ময় চাকমা, কানাডা থেকে ড. আদিত্য কুমার দেওয়ান ও প্রীতিবিন্দু চাকমা, অস্ট্রেলিয়া থেকে কবিতা চাকমা ও কূলোত্তম চাকমা প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় ৯৮.৫০ শতাংশ অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে অন্যায়ভাবে পাকিস্তান অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে প্রতি বছর উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, অরুনাচল প্রদেশ, মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে বসবাসকারী চাকমা জনগোষ্ঠী লোকদের দ্বারা ১৭ই আগস্টকে কালো দিবস হিসাবে পালন করা হয়। এই সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হয় ২০১৬ সালের ২৪-২৫ মার্চ আসামের গৌহাটিতে অনুষ্ঠিত চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (সিএনসিআই)-এর প্রথম বাৎসরিক জাতীয় অধিবেশনে।
কেন এই কালো-দিবস? বহু আন্দোলন, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের ফলে দীর্ঘ প্রায় দু’শ বছর ব্রিটিশ পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত করে ভারতবর্ষের আপামর জনগণ পরম আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করে ১৫ই আগষ্ট ১৯৪৭ সালে। ঐ পবিত্র দিনে সমগ্র ভারতবাসীর সঙ্গে গভীর একাত্মবোধ প্রাণিত হয়ে পরম গর্বভরে তৎকালীন ভারতের পূর্ব-প্রত্যন্ত ভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের চাকমা জনগোষ্ঠীর লোকেরাও ভারতের তে-রঙা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা সদর রাঙামাটিতে।
কিন্তু ১৯৪৭ সালের ১৭ই আগষ্ট তারিখে সরকারিভাবে বেতারযোগে জানা গেল ৯৮.৫০ শতাংশ অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে অন্যায়ভাবে পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্তি দেওয়া হয়েছে। এই ঘোষণার ফলে চাকমাসহ পার্বত্য সমাজজীবনে সর্বস্তরে ঘোর অমানিশা, চরম দুঃসহ ও দুঃস্বপ্ন নেমে আসে। বলতে গেলে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য জাতিসত্তার জীবনে আরও একটি কাল অধ্যায়ের সূচনা হয়।
তাই ১৯৪৭ সালের অন্যায়মূলক দেশভাগের প্রত্যক্ষ কুফলগুলির ভূক্তভোগি, তথাকথিত ‘ডায়াসপোরা’ (diaspora) এই নতুন অভিধা বা নামধারী বর্তমান দক্ষিণ-এশিয়ার চাকমা সমাজের মধ্যে নিরন্তর বহমান দুঃসহ দুরাবস্থা, অস্থিতিশীলতা, অসহায়ত্ব, নিজ ভূমে পরবাসীর যাতনা, এথনিক ক্লীনসিং ইত্যাদি নিরীক্ষণের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট যাবতীয় প্রক্ষোভ, সমবেদনা ও বিবেক তাড়নার প্রতীকীরূপই হল এই কালো দিবস।