হিল ভয়েস, ১০ আগস্ট ২০২০, কক্সবাজার: কক্সবাজার অঞ্চল শাখার বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবরে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান ও অবিলম্বে পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ ১৩ দফা দাবি জানিয়েছে।
গত ৯ আগস্ট ২০২০ কক্সবাজার অঞ্চল শাখার আদিবাসী ফোরামের সভাপতি থোইঅং ও সাধারণ সম্পাদক মংথেনহ্লা রাখাইন কর্তৃক স্বাক্ষরিত কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবরে প্রেরিত এক আবেদনপত্রে এসব দাবি জানানো হয়।
আবেদনপত্রে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলা হয়, ‘এ দিবসটি শুধু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার দিবস নয়। এ দিবসটি আদিবাসী ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামী জনসাধরণের অধিকার আদায়ের দিবস।’
আবেদনপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশে আদিবাসীরা সমতল ও পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করেন। বাংলাদেশে রয়েছে ৫৪টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী ও ৩৪টি বিভিন্ন ভাষা। তাদের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি, রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার, পোশাক-পরিচ্ছদ ও ধর্মীয় বিশ্বাস। প্রাকৃতিক পরিবেশের তারা একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।’
আবেদনপত্রে বলা হয়, ‘আদিবাসীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও রীতিনীতি রক্ষায় রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উদ্যোগ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, নিজস্ব সামাজিক বৈশিষ্ট্য সবই বিলীন হয়ে যাবে। তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে আদিবাসীদের অধিকার স্বীকৃত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
আবেদনপত্রে আরও বলা হয়, ‘আদিবাসীদের পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া ভূমি আজ আদিবাসীদের নামে নেই। ওরা সব কেড়ে নিয়েছে। ভূমিপুত্র আদিবাসীরা আজ ভূমিহীন হয়ে কথিত বনবিভাগের বনে ভিলেজার হিসেবে দাসত্ব জীবন নির্বাহে বাধ্য হচ্ছে।’
‘শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন, ধর্ষণ, লুন্ঠন, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, হয়রানি ইত্যাদি আদিবাসীদের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। কক্সবাজার জেলার আদিবাসীরা ভূমি ও ভূখন্ডের উপর তাদের কর্তৃত্ব ও অধিকার চায়।’
‘কক্সবাজার জেলার পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা থাকলেও এই শিল্প আদিবাসীদের জীবনকে আরো প্রান্তিকতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ‘নাপ্পি’ ব্যবসাও আজ অধিপতি শ্রেণির দখলে।’
প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে প্রেরিত দাবিগুলি হল নিম্নরূপ-
১. আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিক করা। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬(২) ধারা বাতিল করে আদিবাসীদের অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে পুনর্লিখন করা। বাংলাদেশ সরকারকে আইএলও ১৬৯ সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করতে হবে এবং ‘বাংলাদেশে আদিবাসী নেই’ এই অবস্থান ত্যাগ করতে হবে।
২. পার্বত্য চুক্তি অবিলম্বে সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৩. সমতলে আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।
৪. আদিবাসী শিশুদের ‘মাতৃভাষায়’ প্রাথমিক শিক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করা।
৫. দক্ষিণ হ্নিলা বড় বৌদ্ধ বিহার (সেনপ্রু ক্যাং) পুননির্মাণ ও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ পূর্বক ভূমি ফেরত পাওয়া।
৬. কক্সবাজার পৌরসভা এলাকা উইমালাছড়া বৌদ্ধ বিহার অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ পূর্বক ভূমি ফেরত পাওয়া।
৭. আদিবাসী অধিকার ও স্বার্থ সংরক্ষণে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ত্ব আইন ১৯৫০ এর বিধি বাস্তবায়ন করতে হবে।
৮. কক্সবাজার জেলায় সরকারিভাবে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক ছাত্রাবাস নির্মাণ করা।
৯. কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন-২০১০ মোতাবেক উক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদে শতকরা ৮০ ভাগ আদিবাসী/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোক নিয়োগ দিতে হবে। আদিবাসীদের ভূমি, ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে।
১০. কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এর নাম আদিবাসী/ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, কক্সবাজার নামে নামকরণ করা হোক।
১১. বঙ্গবন্ধু স্মৃতি বিজড়িত চেনচুরি পাড়ার জাদুঘর অবিলম্বে প্রতিষ্ঠা করা এবং বঙ্গবন্ধুকে আশ্রয়দানকারী ও সেবাকারীর উত্তরসুরীদেরকে বেঁচে থাকার অধিকার হিসেবে জাদুঘরের চাকরি প্রদান ও তাদের জন্য ঘর নির্মাণ করা হোক।
১২. কোভিড-১৯ পটভূমিতে আদিবাসীদের জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ বৃদ্ধি করা এবং ঐ বরাদ্দ দরিদ্র-দুস্থ আদিবাসীদের কাছে যাতে পৌঁছায় তা নিশ্চিত করা। আদিবাসী গণতান্ত্রিক সংগঠনসমূহের অংশগ্রহণে সাহায্য বন্টনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
১৩. বর্তমানে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের অন্যান্য সরকারি সংস্থা ও বিভিন্ন সংগঠনে অফিসে রুমগুলো দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন-২০১০ মোতাবেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আইনে এটা মানবাধিকার লংঘন।