সোয়াকো ওতসুমি ও লি জে ওয়াকার
ব্যাপক নেতিবাচক জাতিগত পরিবর্তন, ইসলামীকরণ ও যথাক্রমে বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার জেকে বসা শাসনব্যবস্থার কারণে পশ্চিম পাপুয়া (ইন্দোনেশিয়া) ও পার্বত্য চট্টগ্রামের (বাংলাদেশ) অমুসলিম আদিবাসীরা বহু দশক ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পার্বত্য চট্টগ্রামের নৃতাত্তিক জনগোষ্ঠী ও খ্রীস্টান ধর্মাবলস্বী পাপুয়ানরা ইসলামীকরণের চরম বাস্তবতার মুখোমুখিতে আছে। ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের বিরুদ্ধে জাতিগত জাতীয়তাবাদ উসকানো হচ্ছে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে। বিভিন্ন ইসলামিক ধর্মীয় গোষ্ঠী তাদের ধর্মীয় বাতাবরন তৈরি করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পশ্চিম পাপুয়ার আদিবাসীদের প্রান্তিক থেকে প্রান্তিকতর করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষত অমুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল ছিল কিন্তু ভারত বিভক্তির মাধ্যমে দুটি প্রধান মুসলিম জাতিকে সৃষ্টি করে যা ১৯৭১ সালে প্রধানত বাংলাদেশ ও পাকিস্তান হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুসারীসহ বহু নৃ-তাত্ত্বিক ও ধর্মীয় জাতিগোষ্ঠীর পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামীকরণের প্রক্রিয়া শুরু করে। খুবই দ্রুতগতিতে ব্যাপকহারে বাঙালি মুসলমান অভিবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, অপরদিকে জনমিতির পরিবর্তনে পার্বত্য চট্টগ্রামে পুরো মাত্রায় সেনাবাহিনীর সন্নিবেশ ঘটে। ফলে এ অঞ্চলে অমুসলিম আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক, জাতিগত ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির উপর ইসলাম ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের আগ্রাসন জোরদার হয়ে উঠে।
অনুরূপভাবে, প্রধানত প্রকৃতি-পূজারী ও খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী পাপুয়ানদের উপর ইন্দোনেশিয়া কর্তৃক জনমিতি ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হওয়ার আড় পর্যন্ত পশ্চিম পাপুয়ায় ইসলামের কোন উপস্থিতি ছিল না। অতএব পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রধানত বৌদ্ধ অনুসারী জাতিদের যেমনি ইসলামীকরণ ও বাঙালি জাতিয়তাবাদের মত দুই ধারী তলোয়ারকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে তেমনি পশ্চিম পাপুয়াদেরও ইসলামীকরণ ও জাভাকরণের চক্রান্ত মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এইভাবে ইন্দোনেশিয়া তার বহুমুখী শক্তির সন্নিবেশ ঘটানোর মাধ্যমে অমুসলিম আদিবাসীদের নিঃশেষ করে দিয়ে সম্পদে ভরপুর পশ্চিম পাপুয়া দখল করে।
একদিকে জাভাদের উত্থান ঘটানো ও অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ার কেন্দ্রীয় প্রশাসন পশ্চিম পাপুয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়নক। অনুরূপভাবে জনসংখ্যা স্থানান্তরিতকরণের কর্মসূচির ভিত্তিতে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানত মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসতি প্রদান করা হচ্ছে। ফলে পশ্চিম পাপুয়ানরা মারাত্মক প্রান্তিকতার শিকার হচ্ছে, দ্রুতভাবে ইসলাম সম্প্রসারিত হচ্ছে, প্রাকৃতিক সম্পদগুলো ইন্দোনেশিয়ান ও বিদেশি কোম্পানিগুলো শোষণ করে নিয়ে যাচ্ছে, ক্রমাগতভাবে অপাপুয়াদের অভিবাসন ও ক্ষমতার কেন্দ্রিকরণ নীতি আদিবাসীদের ধ্বংস করে চলেছে। এমতাবস্থায় আদিবাসী পাপুয়ানরা নিজেদের এলাকায় অধঃস্তন শ্রেণিতে পরিণত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে আবার ফিরে আসা যাক। কয়েক বছর আগে আল-জাজিরায় বলা হয়- “আদিবাসীদের স্বায়ত্তশাসনের দাবি অধরায় রয়ে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সেনাঅধ্যুষিত অঞ্চল। গাড়ি চালিয়ে গেলে মনে হবে এটি একটি উপনিবেশ, যদিও তা স্বীকার করা হবে না।”
মডার্ন টোকিও টাইমসের পুরনো একটি প্রবন্ধে বলা হয়- “ভারতের আসাম, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম, মিয়ানমারের রাখাইন এবং এরকম নানা জায়গায় আদিবাসীদের উপর বাঙালি মুসলমান জনসংখ্যা চেপে বসার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। এমনকি বৌদ্ধ, খ্রীস্টান, হিন্দু ও আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীরা তাদের সমান সংখ্যায়ও যেতে পারছে না। অনুরূপভাবে পোপ ও ওআইসি এগুলো দেখেও না দেখার ভান করছে এবং নিজেদের এজেন্ডা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। আদিবাসীদের পক্ষে দাঁড়ানোর মত কেউই নেই। তাই বাঙালি মুসলিমদের ক্রমাগত অনুপ্রবেশ, ভূমি জবরদখল ও ইসলামিক সম্প্রসারণ অব্যাহত রয়েছে।”
উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো পাপুয়ানদের জানা আছে। মোটা দাগে, পশ্চিম পাপুয়া ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা সীমাহীন গণঅভিবাসন, ইসলামীকরণ, ভূমি জবরদখল, ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাকাক্সক্ষা, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও ধ্বংসকরণ, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিকীকরণ ও নানা পাশবিক দুর্বৃত্তায়নের মুখে রয়েছে। সুতরাং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি ক্রমাগতভাবে সম্পূর্ণ নীরব ভূমিকা পালন করতে থাকে, যেখানে অনেকে আদিবাসীদের সম্পদ লুণ্ঠনের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে বটে, তবে সেখানে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও ধর্মীয় বহুত্ববাদের সকল উপাদান অর্থহীন হয়ে পড়বে।
সুতরাং বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার একমাত্র কাজ হলো জাতিগত ও ধর্মীয় প্রভাব-প্রতিপত্তির শক্তি পুঞ্জীভূতকরণ, তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত নৃশংস অপকর্মের জন্য বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়াকে জবাবদিহিতা জায়গায় নিয়ে আসা এখনই উপযুক্ত সময়। অন্যথায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পশ্চিম পাপুয়ার জাতিগত, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিগত আগ্রাসনে বা পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাবার-স্টাম্পে পরিণত হবে।
মডার্ণ টোকিও টাইমসে থেকে হিল ভয়েস কর্তৃক অনুদিত।