হিল ভয়েস, ১৭ আগস্ট ২০২০, আগরতলা: ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা ছিল মহাভুল,আজ আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া উপায় নেই বলে ১৭ আগস্ট কালো দিবস প্রতিপালনে ভারতের চাকমা জনগোষ্ঠী কর্তৃক আয়োজিত ভাচুর্য়াল আলোচনা সভায় আলোচকবৃন্দ অভিমত ব্যক্ত করেন।
আজ সিএনসিআই-এর ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক উদয় জ্যোতি চাকমা কর্তৃক প্রেরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে, প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসকারী চাকমা জাতির লোকজনের উদ্যোগে ১৭ই আগস্টকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়েছে। তবে বিশ্বব্যাপী চলমান প্রাণঘাতি কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এ বছর আনুষ্ঠানিকভাবে মিছিল ও সমাবেশ করা সম্ভব না হওয়ায় তার পরিবর্তে একটি ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ১৭ অগাস্ট ২০২০, সোমবার ভারতীয় সময় সকাল ৯:০০ টায় ভারতীয় চাকমা জনগোষ্ঠী কর্তৃক আয়োজিত ‘দেশভাগ এবং আদিবাসী চাকমা সম্প্রদায়ের উপর এর প্রভাব’ শীর্ষক এই অনলাইন মতবিনিময় সভায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিগণ বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। উক্ত ভার্চুয়াল আলোচনা ত্রিপুরা রাজ্য ভিত্তিক এনজিও ‘ধুদুক আগরতলা’ ফেসবুক পেইজ থেকে সরাসরি প্রচার করা হয়।
ত্রিপুরা রেজ্যো চাকমা সামাজিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শান্তি বিকাশ চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্য থেকে বিশিষ্ট সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং হিল ভয়েসের সম্পাদক নিরঞ্জন চাকমা ও প্রধীর তালুকদার, মিজোরাম রাজ্য থেকে চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’র মিজোরাম রাজ্য কমিটির সভাপতি ও চাকমা স্বশাসিত জেলা পরিষদের চীফ এক্সকিউটিভ মেম্বার রসিক মোহন চাকমা ও কমলানগর কলেজের অধ্যাপক জ্যোতির্ময় চাকমা, অরুণাচল থেকে (বর্তমানে বেঙ্গালোর) মহেন্দ্র চাকমা, আসাম থেকে আলেজান্দার চাকমা এবং কানাডা থেকে ড. আদিত্য কুমার দেওয়ান ও প্রীতিবিন্দু চাকমা, অস্ট্রেলিয়া থেকে কবিতা চাকমা ও কূলোত্তম চাকমা প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।
আলোচনায় আলোচকবৃন্দ, ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলায় যা করা হয়েছে তা এক ‘মহাভুল’ বলে অভিহিত করেন। দেশভাগের যে নীতি সেই দ্বিজাতিতত্ত্বের বিরুদ্ধে গিয়ে তথা ভারত স্বাধীনতা আইন লঙ্ঘন করে ৯৮% অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করায় পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমাসহ জুম্মরা আজ এক ‘পড়াকবাল্যা’ (পোড়াকপাল), প্রান্তিক ও পরিবেশ উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছেন।
আলোচকবৃন্দ বলেন, দেশ বিভাগের সময় পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা না হলে বিশেষ করে চাকমারা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ও বার্মায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে বাধ্য হতো না। এর ফলে তারা রাজনৈতিকভাবে যেমনি, তেমনি অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকভাবেও খুব খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আলোচকবৃন্দ বলেন, দেশ বিভাগের সঠিক নীতির ভিত্তিতে আমরা যদি ভারতে অন্তর্ভুক্ত হতাম, তাহলে অন্যান্যদের মত আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষরাও একটা রাজ্য পেতাম।
আলোচকবৃন্দ আরও বলেন, দেশভাগের সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতি অন্যায়ের কারণেই বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমাসহ জুম্মরা আজ খুব দুর্দশার মধ্য দিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের এখন নিরাপত্তাও নেই। আর সেখানে এখন ভূমি বেদখলসহ অবাধে চলছে ইসলামে ধর্মান্তরিতকরণ; যা উদ্বেজনক ও ভয়াবহ।
আলোচকবৃন্দ বলেন, রাজনৈতিক অধিকার ছাড়া অন্যান্য অধিকারগুলো নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা দরকার।
আলোচকবৃন্দ বলেন, আমাদের অবশ্যই কন্ঠস্বর অব্যাহত রাখতে হবে এবং সৃজনশীলভাবে এগিয়ে যেতে হবে। অবশ্যই আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে এই স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। টিকে থাকতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া এবং ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম ছাড়াউপায় নেই।
উল্লেখ্য যে, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় ৯৮.৫০ শতাংশ অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে অন্যায়ভাবে ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে প্রতি বছর উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, অরুনাচল প্রদেশ, মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে বসবাসকারী চাকমা জনগোষ্ঠী লোকদের দ্বারা ১৭ই আগস্টকে কালো দিবস হিসাবে পালন করা হয়। এই সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হয় ২০১৬ সালের ২৪-২৫ মার্চ আসামের গৌহাটিতে অনুষ্ঠিত চাকমা ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (সিএনসিআই)-এর প্রথম বাৎসরিক জাতীয় অধিবেশনে।