হিল ভয়েস, ১৩ আগস্ট ২০২০, চট্টগ্রাম: সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট সংস্কারপন্থী গ্রুপ নামে খ্যাত জনসংহতি সমিতি (জেএসএস-এমএন লারমা)-এর সভাপতি তাতিন্দ্র লাল চাকমা ওরফে পেলে (৬৯) মারা গেছেন বলে জানা গেছে। আজ ১৩ আগস্ট ২০২০ বৃহস্পতিবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯ টার দিকে তিনি চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, হৃদ রোগ ও ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি গত ২ আগস্ট ২০২০ রবিবার খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে অবস্থার উন্নতি না হলে চারদিন পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়।
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে তাতিন্দ্র লাল চাকমা মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক কন্যা ও দুই পুত্র রেখে গেছেন।
উল্লেখ্য যে, ২০০৭-২০০৮ জরুরী অবস্থা চলাকালে দেশের সামরিক বাহিনী জরুরী অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে তথাকথিত ‘সংস্কার’-এর আওয়াজ তুলে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর মতো পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির উপরও দমন-পীড়ন চালিয়েছিল এবং সমিতির নেতৃত্বের মধ্যকার বিভাজনকে উস্কে দিয়েছিল।
সেই জরুরী অবস্থার দুর্দিনে দলের মধ্যে ঐক্য-সংহতি বজায় রাখার পরিবর্তে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর মদদে তাতিন্দ্র লাল চাকমাসহ জেএসএসের কতিপয় সুবিধাবাদী ও নীতিচ্যুত সদস্য উপদলীয় চক্রান্তে মেতে উঠে। ফলে জেএসএস ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সম্মেলনে সেসব সংস্কারপন্থী নেতা-কর্মীদের বহিস্কার করে।
একই বছরে সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআইয়ের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সংস্কারপন্থীরা সুধাসিন্ধু খীসা ও রূপায়ন দেওয়ানকে কো-সভাপতি ও তাতিন্দ্র লাল চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক করে ‘জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)’ নামে একটি গ্রুপ সৃষ্টি করে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার সর্বশেষ অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তাতিন্দ্র লাল চাকমা সংস্কারপন্থী গ্রুপের সভাপতি নির্বাচিত হন।
দলের সর্বময় ক্ষমতা গ্রহণের পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাতিন্দ্র লাল চাকমা চাঁদাবাজি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, খুন, প্রতিপক্ষের উপর নৃশংসমূলক হামলা ইত্যাদি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে মেতে উঠে। তারই অংশ হিসেবে চলমান করোনা মহামারী সংকটের মধ্যেও সেনাবাহিনী এসকর্ট দিয়ে সংস্কারপন্থী সশস্ত্র গ্রুপকে খাগড়াছড়ি থেকে রাঙ্গামাটির জীবতলীতে, দীঘিনালার বাবুছড়ায়, বান্দরবানের বাঘমারায় নিয়ে আসে। সেসব জায়গায় নিয়ে এসে রাষ্ট্রীয় বাহিনী তাদেরকে অবাধে চাঁদাবাজি, অপহরণ, হত্যা ইত্যাদি সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে সুযোগ করে দেয়।
এদিকে সংগঠনটির একাধিক সূত্রের সাথে কথা বলে জানা যায়, কেন্দ্রীয় সভাপতি তাতিন্দ্র লাল চাকমার মৃত্যুর ঘটনায় সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপাতত সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সুভাষ কান্তি চাকমা ওরফে পরিচয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।