আদিবাসী দিবসে বাগদা ফার্মের বাপ-দাদার সম্পত্তি ফেরতের দাবি সাঁওতালদের

হিল ভয়েস, ১০ আগস্ট ২০২০, গাইবান্ধা:  আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস-২০২০ উপলক্ষে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম এলাকার সাঁওতালরা বাপ দাদার জমি ফেরত, তিন সান্তাল হত্যা ও তাদের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন করেছে।

রবিবার সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন, এএলআরডি ও জনউদ্যোগ এই কর্মসূচীর আয়োজন করে।

বিক্ষুব্ধ সান্তালরা গোবিন্দগঞ্জের মাদারপুর-জয়পুর সান্তাল পল্লী থেকে ১৪ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ফেস্টুন , পতাকা সহ একটি মিছিল নিয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানা মোড়ে এসে মানববন্ধন করে।

মানববন্ধন চলাকালে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম-ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা কমিটির সভাপতি মিহির ঘোষ, পরিবেশ আন্দোলনের আহ্ববায়ক ওয়াজিউর রহমান রাফেল, আদিবাসী ও বাঙালী সংহতি পরিষদের আহ্ববায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু, কমিউনিস্ট পার্টি উপজেলা শাখার সভাপতি তাজুল ইসলাম, ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম প্রধান, সান্তাল হত্যার মামলার বাদি থমাস হেমব্রম, আদিবাসী নেত্রী তৃষ্ণা মুর্মু, ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির নেতা স্বপন শেখ, গণেশ মুর্মু, রাফায়েল হাসদা প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ঘটনার প্রায় চার বছর পার হলেও তাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি ফেরত পাওয়ার জন্য কোনো উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেনি। চূড়ান্ত অভিযোগপত্রে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এজাহারভূক্ত আসামি গোবিন্দগঞ্জ আসনের তৎকালীন এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ ও প্রকাশ্যে সান্তালদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগকারী অতি উৎসাহী পুলিশসহ গুরুত্বপূর্ণ আসামীদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

বক্তারা আরো বলেন, সারা বিশ্বের গণমাধ্যমে প্রকাশিত আগুন লাগানোর ফুটেজ, ছবি প্রকাশ পেলেও এখন পর্যন্ত কোনো সুষ্টু  তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি। এর মাধ্যমে সান্তালদের সঙ্গে পরিহাস করা হয়েছে। করোনা কালীন সময়ে সান্তালদের জীবন জীবিকা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।

সান্তালরা অর্ধাহারে অনাহারে দিন যাপন করছে, কিন্তু প্রশাসন থেকে কোনো কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে বক্তারা অভিযোগ করেন। বক্তরা দাবি জানান, বর্তমানে সিআইডির কাছে থাকা তদান্তাধীন মামলাটি সুষ্টু তদন্ত সাপেক্ষে চার্জ গঠন করা হোক।

সভাপতির বক্তব্যে ফিলিমন বাস্কে বলেন, এই বিচার হীনতা প্রমাণ করে জাতিগত সংখ্যালঘু সান্তালদের কতো অবহেলার চোখে দেখা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে সান্তাল-বাঙালিরা মিলে এদেশ স্বাধীন করেছে। স্বাধীনতার ৪৮ বছর ধরে সান্তালরা নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছে। সেই ভূমি উদ্ধার করতে গিয়ে জীবন দিয়েছে শ্যামল, মঙ্গল ও রমেশ। এখন তাদের সেই হত্যার ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ কোন বাংলাদেশে তারা বসবাস করছে। তিনি প্রশ্ন করেন- এজন্যইকি মুক্তিযুদ্ধে তারা অংশ গ্রহণ করেছিলেন?

More From Author